এক রত্তি শিশু। বয়স কেবল দুই বছর। এই বয়সেই পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ধরা পড়ে জ্যাকব বার্নেট গুরুতর অটিজমে (মানসিক প্রতিবন্ধকতা; নিম্নমান বুদ্ধিসম্পন্ন) আক্রান্ত। পড়ালেখা তো দূরে থাক, কথাই বলতে পারত না জ্যাকব। চিকিৎসক সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, সমাজের অন্য শিশুদের মতো কাজ করার ক্ষমতা নেই তার, পারবেও না কোনো দিন। কিন্তু চিকিৎসকের এই কথাকে ভুল প্রমাণ করে অনন্য নজির গড়তে চলেছে জ্যাকব। মাত্র ১৭ বছর বয়সেই সে এবার তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করতে যাচ্ছে।
এই বিস্ময়বালক জ্যাকবের বাস আমেরিকার ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যে। সে কানাডার ওয়াটারলুতে অবস্থিত বিশ্বখ্যাত পেরিমিটার ইনস্টিটিউট ফর থিওরিটিক্যাল ফিজিকসের কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি নিয়ে পিএইচডি করছে। ওই প্রতিষ্ঠানের ইতিহাসে জ্যাকব সবচেয়ে খুদে শিক্ষার্থী। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে জ্যাকবের ছবিসহ তথ্য রয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানেই বিখ্যাদ পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংসহ অনেক পদার্থবিদ গবেষণা করেছেন।
জ্যাকবের মা ক্রিস্টিন বার্নেট বলেন, ছোটবেলায় জ্যাকব কিছুই করতে পারত না। তাকে স্পেশাল স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছিল। কিন্তু এতে সে খুশি ছিল না। বেশির ভাগ সময় সে অনুভবই করত না যে সে একটা ঘরে আছে। তার কথা বলা একদম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এমনকি কারও দিকে সে চোখ খুলে দেখত না। কেউ কথা বললে বা ডাকলে সাড়া দিত না। কেউ জড়িয়ে ধরতে গেলে সে তাকে ধাক্কা দিয়ে সরে যেত। এভাবেই জীবন চলছিল তার।
নার্সারি গ্রেডের স্কুলশিক্ষক ক্রিস্টিন বার্নেট। এবিসি নিউজ ও প্লেইড জেব্রার প্রতিবেদনে বলা হয়, এই অবস্থা থেকে উত্তরণে জ্যাকবের মা ক্রিস্টিন পরে আর কোনো চিকিৎসকের শরণাপন্ন হননি। নিজেই চেষ্টা করে গেছেন তিনি। শুরুতে দুটি কাজ করেছেন—জ্যাকবকে বাড়িতেই শেখানোর চেষ্টা করেছেন এবং তার সঙ্গে কিছু অদ্ভুত আচরণের মাধ্যমে চিত্রাঙ্কন, গণিত ও ধাঁধার সমাধান করতেন। এতে জ্যাকব বেশ আনন্দিত হতো। সাড়া দিত বেশ। এভাবেই সে অঙ্ক ও বিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলো সম্পর্কে জেনে যায়। এই চেষ্টা কাজে লেগে যায়। বেড়ে যায় তার বুদ্ধ্যঙ্কের মাত্রা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পরে জ্যাকবকে স্কুলে ভর্তি করানো হয়। সেখানেও সে আশাতীত ফল করে। মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যেই হাইস্কুলের পুরো গণিত সে আয়ত্তে নিয়ে আসে। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী শিশু জ্যাকবের বুদ্ধিতে বিস্মিত হয়ে মাত্র ১০ বছর বয়সে হাইস্কুল থেকে ইন্ডিয়ানার প্রুডিউ বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ভর্তি করিয়ে নেয়। সেখানে সে অ্যাস্ট্রোফিজিকস নিয়ে পড়াশোনা করেছে। পাশাপাশি রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করে এবং সহপাঠীদের অ্যাডভান্সড ম্যাথমেটিকস পড়িয়ে বেশ অর্থও উপার্জন করেছে জ্যাকব। এখানেই আইনস্টাইনের থিওরি অব রিলেটিভিটি নিয়েও কাজ করেছে জ্যাকব।
জ্যাকবের কাজ পর্যালোচনা করে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্কট ট্রেমেইন বলেছেন, অ্যাস্ট্রোফিজিকস ও থিওরিটিক্যাল ফিজিকসের নানা জটিল সমস্যা নিয়েই জ্যাকবের থিওরির কাজ। যদি কেউ এসব সমাধান করতে পারে, তাহলে নোবেল পুরস্কারের তালিকায় থাকবে নিশ্চিত।
দুই বছর আগে ১৫ বছর বয়সে কানাডার বিশ্বখ্যাত পেরিমিটার ইনস্টিটিউট ফর থিওরিটিক্যাল ফিজিকসে পিএইচডি করার জন্য আবেদন করে জ্যাকব। তার সে আবেদন গৃহীতও হয়েছে। এখন সে এই প্রতিষ্ঠানেই কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি নিয়ে পিএইচডি করছে।
বুদ্ধিমত্তার বিচারে একজন সাধারণ মানুষের আইকিউ পয়েন্ট থাকে ১০০। যাদের আইকিউ পয়েন্ট ১৪০ তারা নিঃসন্দেহে প্রতিভাবান। আলবার্ট আইনস্টাইন বুদ্ধিমত্তার কোনো পরীক্ষায় অংশ না নিলেও ধারণা করা হয়, তাঁর আইকিউ বা বুদ্ধ্যঙ্ক ১৬০। আর জ্যাকবের আইকিউ পয়েন্ট আইনস্টাইনের চেয়েও অনেক বেশি। তার এই পয়েন্ট হলো ১৭০। বলা হচ্ছে জ্যাকবের স্মৃতি হচ্ছে ফটোগ্রাফিক মেমোরি। এখনো নিজের জুতোর ফিতেটাও ঠিকমতো বাঁধতে পারে না সে। কিন্তু বুদ্ধির জোরে সে এগিয়ে যাচ্ছে ইতিহাসের কাছাকাছি।