পরিবার ও তার শক্তিশালী সমর্থন প্রতিটা মানুষের স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যখন পরিবারে কেউ অসুস্থ হয় কিংবা একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা থেকে বাড়ি ফিরে আসে, তখন পারিবারিক সহায়তা সেই ব্যক্তির সামগ্রিক পুনরুদ্ধারে একটি প্রয়োজনীয় উপাদান উপস্থাপন করে।
অ্যাকাডেমি অব ফ্যামিলি ফিজিশিয়ানসের চিকিৎসক জেমস মার্টিনের মতে, পরিবারগুলো প্রতিরোধমূলক যত্ন, অনুশীলন, স্বাস্থ্যকর এবং দায়িত্ব নিয়ে সেবা করে।
বর্তমানে নিউইয়র্কে কোভিড-১৯ মহামারির বিস্তার হ্রাস হলেও এটি এখনো ছেড়ে যায়নি। লকডাউন তুলে নিয়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পর আমেরিকার বেশ কিছু অঙ্গরাজ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ বাড়তে দেখা গেছে। তার ওপর গত দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলে সামাজিক দূরত্ব না মানার কারণে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, ভবিষ্যতে এই ভাইরাসের বিস্তার আরও সম্প্রসারিত হতে পারে। এই ভাইরাস বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশেও ব্যাপকভাবে ছড়াচ্ছে।
যেকোনো মহামারি মোকাবিলায় আমাদের নিজেকে তৈরি করে রাখা জরুরি। তার জন্য দরকার সতর্কতা, শক্ত মনোবল, বিশ্বাস ও পারিবারিক সহযোগিতা। যদি কেউ কোভিড-১৯ এ সংক্রমিত হয়, তবে প্রাথমিক পর্যায়ে তাকে হোম আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে ভয় না পেয়ে মনোবল দৃঢ় রাখতে হবে। বিশ্বাস রাখতে হবে নিজের ওপর। সেই সঙ্গে সতর্কতা অবলম্বনে পরিবারের অন্য সদস্যদের আক্রান্ত ব্যক্তির সহায়ক হতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তি সেরে ওঠার ক্ষেত্রে এটা খুবই জরুরি। পারিবারিক সহযোগিতা ছাড়া এই অবস্থায় একা লড়াই করা মুশকিল।
নিউইয়র্কের ইউনাইটেড হাসপাতাল ফান্ডের ফ্যামিলি এবং হেলথ কেয়ার প্রকল্পের পরিচালক ক্যারল লেভাইন সহজভাবে ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘পরিবার ছাড়া চিকিৎসা চলতে পারে না।’
কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে ফিরে আসা শাহনাজ জাহান মৌসুমী একজন ব্যাংকার, থাকেন বনশ্রী, রামপুরা। জ্বর ও গন্ধ হারিয়ে ফেলা ছাড়া আর কোনো লক্ষণ ছিল না তাঁর। তবে দৃঢ় মনোবল ও পরিবারের আন্তরিক সহায়তায় ১৪ দিন আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিয়ে আবারও সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন তিনি। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এক অদৃশ্য শত্রুর সঙ্গে মোকাবিলা করছি আমরা সবাই, পুরো বিশ্ব। তাই আতঙ্ক ছড়িয়ে নয়, দৃঢ় মনোবল দিয়ে এটাকে জয় করতে হবে। আমার রেজাল্ট পজিটিভ আসার পর এটাই বিশ্বাস রেখেছি যে, এটা একটা রোগ আর আমাকে সেরে উঠতেই হবে। আমি আমার একাকিত্বকে অবমূল্যায়ন করিনি বরং উপভোগ করার চেষ্টা করেছি। এ ক্ষেত্রে আমার পরিবার, আত্মীয়, বন্ধু এবং সহকর্মীদের আন্তরিকতা মনোবল আরেও বাড়িয়ে দিয়েছিল। আমার পরিবারের সদস্যরা আন্তরিকভাবে আমার প্রতি যত্নশীল ছিল।’
স্বাস্থ্যকর সুন্দর সম্পর্ক স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি দীর্ঘ, স্বাস্থ্যকর এবং সুখী জীবনযাত্রায় অবদান রাখে। যে পরিবার কার্যকরভাবে তাদের সময়কে একে অন্যের সঙ্গে ভাগ করে, ভারসাম্য বজায় রাখে, সে পরিবারে সামগ্রিক সম্পর্ক আরও ভালো হয় এবং যেকোনো দুঃখ-দুর্দশা, বিপদে ইতিবাচক ফলাফল রাখে। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় আক্রান্তদের সুস্থতায় প্রতিটা পরিবার হোক স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর সম্পর্কের ভিত, এই কামনা।