ডোনাল্ড ট্রাম্প বনাম স্টর্মি ড্যানিয়েলস নাটকে এবার এক নতুন অধ্যায় সংযোজিত হলো। এত দিন ট্রাম্প বলে এসেছেন, মুখ বন্ধ রাখার জন্য পর্নো তারকা স্টর্মিকে যে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার তাঁর ব্যক্তিগত আইনজীবী মাইকেল কোহেন প্রদান করেন, সে সম্পর্কে তিনি বিন্দুবিসর্গ জানেন না। গত এপ্রিলের শুরুতে তিনি সাংবাদিকদের পরামর্শ দিয়েছিলেন এ বিষয় নিয়ে কোহেনের সঙ্গে কথা বলতে।
গতকাল বুধবার জানা গেল, বিষয়টা তিনি কেবল জানতেনই না, সময়মতো কোহেনকে সে অর্থ ফেরতও দিয়েছেন। ২০১৭ সালের আর্থিক আয়-ব্যয়ের হিসাবে ট্রাম্প জানিয়েছেন, কোহেনকে তিনি মোট যে অর্থ দিয়েছেন, তা এক লাখ থেকে আড়াই লাখ ডলার হবে। দেনা হিসেবে দেখানো এই হিসাবপত্রে স্টর্মির নাম নেই, তবে অর্থটা যে এই পর্নো তারকার মুখ বন্ধ রাখতে কোহেনকে দেওয়া হয়েছে, তাতেও কোনো সন্দেহ নেই। অর্থের পরিমাণ থেকেই সে কথার প্রমাণ মেলে। কোহেনের কাছ তাঁর দেনা ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার হলেও তাঁকে যে সে অঙ্কের বাইরে শোধ করা হয়, তা সম্ভবত অন্য কারও মুখ বন্ধ রাখতে অথবা অন্য কোনো ‘ঝামেলা’ মেটাতে দেওয়া হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
এর আগে ট্রাম্পের নতুন ব্যক্তিগত আইনজীবী জুলিয়ানি জানিয়েছিলেন, কোহেনের সঙ্গে ট্রাম্প করপোরেশনের মাসিক ৩৫ হাজার ডলার বেতন দেওয়ার চুক্তি রয়েছে। সেই অর্থ থেকেই কোহেনের পাওনা মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। ট্রাম্পের আয়-ব্যয়ের হিসাব পাওয়ার পর দেখা যাচ্ছে, জুলিয়ানির সেই কথাও মিথ্যা। কোহেন অবশ্য নিজে দাবি করেছিলেন, বাড়ি বন্ধক রেখে স্টর্মিকে অর্থ বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি। এ ব্যাপারে ট্রাম্প বা তাঁর কোম্পানি কিছু জানে না। সে কথাও যে মিথ্যা, এখন ট্রাম্প নিজেই তা ফাঁস করে দিলেন।
কোনো প্রয়োজন না থাকলেও স্বচ্ছতার খাতিরে তিনি এই তথ্য প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। কিন্তু সরকারের নীতিবিষয়ক দপ্তরের প্রধান এক চিঠিতে বিচার বিভাগকে জানিয়েছেন, এই দেনার কথা প্রকাশ মোটেই ঐচ্ছিক নয়, প্রেসিডেন্টকে সে কথা অবশ্যই জানাতে হবে। প্রেসিডেন্টের আয়-ব্যয় নিয়ে কোনো তদন্তে এই তথ্য গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হতে পারে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, স্টর্মির সঙ্গে ট্রাম্পের গোপন প্রণয়ের কথা যাতে ফাঁস না হয়, সে জন্য মুখ বন্ধ রাখতে চুক্তি করে এই অর্থ দেওয়া হয়েছিল ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাত্র ১১ দিন আগে। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, সেই বছরের আর্থিক প্রতিবেদনেই এই অর্থ কোহেনের কাছে দেনা হিসেবে দেখানো উচিত ছিল ট্রাম্পের।
সরকারি নীতিবিষয়ক দপ্তরের সাবেক প্রধান ওয়াল্টার শব মন্তব্য করেছেন, গত বছরের প্রতিবেদন পেশের সময় যদি ট্রাম্প কোহেনের কাছে এই দেনার কথা জানা সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে গোপন করে থাকেন, তাহলে সেটি বেআইনি হবে। ঠিক এই যুক্তিতেই সিটিজেন্স ফর রেসপনসিবিলিটি অ্যান্ড এথিকস ইন ওয়াশিংটন নামের একটি বেসরকারি সংস্থা বিচার বিভাগের কাছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেশ করেছে। এই সংস্থার প্রধান নোয়া বুকবাইন্ডার বলেছেন, ট্রাম্পের অবশ্যই উচিত ছিল এই খরচের কথা ২০১৬ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে প্রকাশ করা। এখন তো পরিষ্কার যে এই অর্থ হাতবদলের ব্যাপারে ট্রাম্প জেনেশুনেই মিথ্যা বলেছেন। বুকবাইন্ডার বিচার বিভাগকে বিষয়টি অবিলম্বে তদন্ত করে দেখার দাবি জানিয়েছেন।