যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মনোনীত বিচারপতি ব্রেট কাভানা ও তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগকারী নারী সিনেটের বিচারবিষয়ক কমিটিতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার অভিযোগকারী ক্রিস্টিনা ব্লেসি ফোর্ড সাক্ষ্য দিতে গিয়ে বলেন, কাভানার যৌন হয়রানির ঘটনা তাঁর জীবনের সবকিছু আকস্মিকভাবে পাল্টে দিয়েছিল। তিনি ভীত ও লজ্জিত থাকতেন।
অন্যদিকে কাভানা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, শুধু রাজনীতির কারণে তাঁর পরিবার ও সুনাম ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে।
সাক্ষ্য দিতে গিয়ে দুজনই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
দিনব্যাপী এই শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্টে নিয়োগের জন্য কাভানার পক্ষে সিনেটের ভোট শুরুর আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। আজ শুক্রবার সেই ভোটের জন্য দিন নির্ধারণ রয়েছে। তবে বিচারবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান রিপাবলিকান সিনেটর চাক গ্রেসলি ভোটের দিন পেছানোর সুযোগ রেখেছেন।
ক্যালিফোর্নিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্রিস্টিনা ব্লেসি ফোর্ড অভিযোগ করেছেন, ১৯৮২ সালে হাইস্কুলে পড়ার সময় এক পার্টিতে কাভানা মাতাল অবস্থায় তাঁকে যৌন হয়রানি করেন। তাঁর এই অভিযোগের কারণে সুপ্রিম কোর্টে কাভানার নিয়োগ প্রশ্নের মুখে পড়ে।
গত শনিবার সিনেটের বিচারবিষয়ক কমিটি ও অভিযোগকারী নারীর আইনজীবীদের এক বৈঠকে বৃহস্পতিবার (গতকাল) অভিযোগের ব্যাপারে প্রকাশ্যে সাক্ষ্য দেওয়ার দিন ঠিক করা হয়। এই বিতর্কে যখন জেরবার কাভানা, তখন গত সপ্তাহে আরেক নারী তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বিতর্ক আরও উসকে দেন। ডেবোরাহ রামিরেজ নামের ওই নারী অভিযোগ করেন, ইয়েল ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় ডরমিটরি পার্টিতে কাভানা সম্মতি ছাড়াই তাঁর শরীর স্পর্শ ও যৌন হয়রানি করেন। একের পর এক আরও অভিযোগ এসেছে। জুলি নামের ওয়াশিংটন ডিসির এক নারী অভিযোগ করেছেন, ১৯৮২ সালে কাভানার উপস্থিতিতে এক পার্টিতে তিনি গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। কলোরাডো সিনেটরের কাছে লেখা চিঠিতে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে এক নারী জানিয়েছেন, তাঁর মেয়ে ১৯৯৮ সালে কাভানাকে এক নারীর সঙ্গে যৌন হয়রানিমূলক আচরণ করতে দেখেছেন।
সবগুলো অভিযোগই অস্বীকার করেছেন কাভানা।
এর আগের বৃহস্পতিবার সিনেটের বিচারবিষয়ক কমিটিতে সুপ্রিম কোর্টের জন্য ট্রাম্পের মনোনীত বিচারপতি ব্রেট কাভানার নিয়োগ প্রশ্নে ভোট শুরু হওয়ার কথা ছিল। বিরোধী ডেমোক্র্যাটদের আপত্তি সত্ত্বেও কোনো বিপত্তি ছাড়াই এই নিয়োগ নিশ্চিত হওয়ার কথা ছিল। এই সময়ে ব্লেসি ফোর্ডের এই অভিযোগ সামনে আসায় তা পিছিয়ে যায়। অনেক রিপাবলিকান মনে করেন, কাভানার নিয়োগ ঠেকাতে ডেমোক্র্যাটরা এই ষড়যন্ত্র করছেন।
নয় সদস্যের সুপ্রিম কোর্টের যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে প্রভাব অপরিসীম। মার্কিন আইনের ব্যাপারে তাঁদের মতামতই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হয়। গর্ভপাতের মতো বিতর্কিত সামাজিক ইস্যু ও সরকারের নীতির চ্যালেঞ্জের ব্যাপারেও সুপ্রিম কোর্ট সম্পৃক্ত হয়।
এদিকে বিচারবিষয়ক কমিটিতে গতকাল সাক্ষ্য দিতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ৫৩ বছর বয়সী ফেডারেল বিচারপতি কাভানা। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টে তাঁর নিয়োগ নিশ্চিত করার প্রক্রিয়াটি এখন ‘অসম্মানজনক’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু রাজনীতির কারণে ডেমোক্র্যাট সিনেটররা তাঁর পরিবার ও সুনাম ধ্বংস করে দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘সংবিধানে সিনেটকে এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ভোট দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। অথচ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আপনারা (ডেমোক্র্যাট) পরামর্শ ও সম্মতির বদলে এ ধরনের অনুসন্ধান ও ধ্বংস নিয়ে এসেছেন। জুলাই মাসে আমাকে মনোনয়ন দেওয়ার পর থেকেই যেকোনো উপায়ে তা বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা চলতে থাকে।’
তিনি আরও বলেন, তাঁর সঙ্গে যাই করা হোক না কেন তিনি নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেবেন না। তিনি বলেন, ‘চূড়ান্ত ভোটে আপনারা হয়তো আমাকে পরাজিত করতে পারবেন, কিন্তু আমাকে কখনো নাম প্রত্যাহার করাতে পারবেন না, কখনোই না।’
কাভানা বারবার বলেন, তিনি ক্রিস্টিনা বা অন্য কাউকে কখনো যৌন হয়রানি করেননি। তিনি স্বীকার করেন, হাইস্কুলে পড়ার সময় তিনি বিয়ার খেতেন, তাই বলে তিনি এমন মাতাল হতেন না যে ঘটনাই ভুলে যাবেন। তিনি ওই পার্টিতে যোগ দেননি বলেও জানান।
ডেমোক্র্যাটদের একের পর এক জেরার মুখে কাভানা বারবারই নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন এবং ক্রিস্টিনার সুপারিশ অনুসারে ঘটনাটি তদন্তের জন্য মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইকে সম্পৃক্ত করতে বলেন।
এদিকে ৫১ বছর বয়সী ক্রিস্টিনা কাভানার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে একপর্যায়ে কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘আমি আতঙ্কিত। আমি আজ এখানে এসেছি, কারণ আমি মনে করি, এটা আমার নাগরিক দায়িত্ব যে হাইস্কুলে পড়ার সময় কাভানা আমার সঙ্গে কী করেছিল, তা লোকজনকে জানানো।’
তিনি বলেন, ‘যৌন হয়রানি করার সময় কাভানা মাতালের মতো হাসছিলেন। কাভানার ওই যৌন হয়রানি আমার জীবন আকস্মিকভাবে পাল্টে দেয়। অনেক বছর পর্যন্ত আমি ঘটনাটি কাউকে জানাতে প্রচণ্ড ভয় ও লজ্জা বোধ করতাম।’
কমিটির ২১ জন সিনেটর পাঁচ মিনিট করে প্রশ্ন করেন ক্রিস্টিনাকে। এর মধ্যে ১০ জন ডেমোক্র্যাট ও ১১ জন রিপাবলিকান ছিলেন। ডেমোক্র্যাট সিনেটরদের অনেকে এই ঘটনা সামনে তুলে আনা এবং ঘটনাটি এফবিআইকে তদন্ত করার আহ্বান জানানোর জন্য ক্রিস্টিনার সাহসিকতার প্রশংসা করেন।
এদিকে দিনব্যাপী শুনানি শেষে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প টুইটারে কাভানার পক্ষে লেখেন, কাভানার সাক্ষ্য ছিল শক্তিশালী ও সৎ। ডেমোক্র্যাটরা তাঁর নিয়োগ বিলম্বিত করার জন্য এই কৌশল নিয়েছে। সিনেটের এখন তাঁকে ভোট দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত।