বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ২ দশমিক ৯ ডিগ্রির বেশি বাড়লেই ২০৫০ সালের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিতে থাকা ৬৫ দেশের গড় জিডিপি ২০ শতাংশ হ্রাস পাবে।
স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোয় জাতিসংঘের আয়োজনে বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলন কপ ২৬ শেষ হবে আগামী শুক্রবার। সময় ফুরিয়ে আসছে দ্রুত। সম্মেলন শেষ হওয়ার আগেই জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত নিতে আলোচকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিভিন্ন দেশ ও সংগঠন। তা না হলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদসংস্থা রয়টার্সের খবর, সম্মেলনের শেষ সপ্তাহে এসে এক বিবৃতিতে যুক্তরাজ্য সরকার জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে নতুন করে ৩৯১ মিলিয়ন ডলার দেওয়া হবে। একই সঙ্গে গরিব ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর অভিযোজন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে ধনী ও শিল্পোন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুত সহায়তা দ্রুত ছাড় করার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাজ্য।
যেখানে আমাদের থাকা উচিত তার ধারেকাছেও আমরা নেই।বারাক ওবামা, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট
কপ ২৬–এর আলোচনায় যুক্ত যুক্তরাজ্যের দূত অ্যানি–মেরি ত্রেভেলায়ান বিবৃতিতে বলেন, ‘আরও মানুষের দরিদ্র হওয়া ঠেকাতে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে এখনই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। টেকসই উন্নয়ন ও সবার জন্য জলবায়ু সহনশীল ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে আমাদের এটা করতেই হবে।’ এদিকে সম্মেলনে গতকাল অংশ নেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও দেশটির জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরি। সম্মেলনে ওবামা বলেন, ‘যেখানে আমাদের থাকা উচিত তার ধারেকাছেও আমরা নেই।’
গতকাল মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনায় অভিযোজন ও ক্ষতির বিষয়টি বারবার উঠে এসেছে। গরিব দেশগুলো শিল্পোন্নত ও ধনী দেশগুলোর প্রতি প্রতিশ্রুতি পূরণ না করার অভিযোগ সামনে এনেছে। প্রায় এক যুগ আগে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে ধনীরা ২০২০ সালের মধ্যে বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলারের জলবায়ু তহবিলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এটা পূরণ না হওয়ায় সময়সীমা বাড়িয়ে ২০২৩ সাল করা হয়েছে।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, গ্লাসগোয় গরিব ও ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে নাজেহাল এসব দেশ। তাই ক্ষতিপূরণের জন্য আরও অর্থ প্রয়োজন। সেই সঙ্গে প্রয়োজন বৈশ্বিক উষ্ণায়ন সুনির্দিষ্ট মাত্রায় কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ ও কার্যকর ঘোষণা। জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক যুব প্রতিনিধি এমিলি বোহোবো এক বিবৃতিতে বলেছেন, সরকার ও দাতাদের ন্যায়সংগত অর্থসহায়তা এবং অভিযোজন প্রক্রিয়া ও ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনার বিষয়ে পরিকল্পনা ঘোষণার এটাই সময়।
বেসরকারি সংস্থা অক্সফামের প্রধান ট্রেসি কার্টি বলেন, ‘গত কয়েক দিনে আমরা অনেকগুলো ঘোষণা শুনেছি। বন উজাড় ঠেকানো, মিথেন নিঃসরণ কমানো—আরও নানা কথা বলা হয়েছে। তবে এসবের বিস্তারিত জানানো হয়নি।’
জলবায়ুবিষয়ক আইন ও নীতি বিশ্লেষক স্টিফেন লিওনার্দ অভিযোগ করে বলেন, সময় ফুরিয়ে আসছে, কিন্তু দেশগুলো এ বিষয়ে হ্যান্ডবল খেলছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন যদি ২ দশমিক ৯ ডিগ্রির বেশি বাড়ে, তাহলে ২০৫০ সালের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিতে থাকা ৬৫ দেশের গড় জিডিপিতে ২০ শতাংশ পতন দেখা দিতে পারে। ২১০০ সাল নাগাদ তা কমতে পারে ৬৪ শতাংশ। গতকাল সোমবার গ্লাসগোয় প্রকাশিত বেসরকারি সংস্থা ক্রিশ্চিয়ান এইডের এক প্রতিবেদনে এমন আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে।
কপ ২৬–এ সবচেয়ে বেশি, ৫০৩ জন প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন জীবাশ্ম জ্বালানি খাত থেকে। এমনকি এই খাত থেকে অংশ নেওয়া প্রতিনিধির সম্মিলিত সংখ্যা কোনো একক দেশের প্রতিনিধির চেয়েও বেশি। বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, এবারের সম্মেলনে সবচেয়ে বেশি প্রতিনিধি রয়েছেন ব্রাজিলের, ৪৭৯ জন। যুক্তরাজ্য থেকে অংশ নিয়েছেন ২৩০ জন প্রতিনিধি।