সারোগেট নারীর গর্ভ থেকে ইথান ও এডেন ২০১৬ সালে কানাডায় জন্মগ্রহণ করে। চার মিনিটের ব্যবধানে তাদের জন্ম হয়। তাদের সমকামী মা-বাবা অ্যান্ড্রু ও এলাদ ডেভ্যাশ ব্যাংক। তাঁরা দুজনেই পুরুষ। তাঁদের একজন মার্কিন ও অন্যজন ইসরায়েলের নাগরিক। সমস্যা হয়েছে তাঁদের যমজ সন্তানদের পরিচয় নিয়ে। টরন্টোয় মার্কিন কনস্যুলেট যমজ শিশুদের আলাদা পরিচয় দিয়ে এ সমস্যার সৃষ্টি করে। এ জন্য শিশুদের পাশাপাশি তাদের মা-বাবাকেও ঝামেলায় পড়তে হয়েছে।
আমেরিকান কনস্যুলেট সীমান্তেই বাচ্চাদের আলাদা পরিচয় জুড়ে দিলে ঘটনা আদালত পর্যন্ত গড়ায়। টরন্টোর মার্কিন কনস্যুলেট এডেনকে মার্কিন পাসপোর্ট ও ইথানকে পর্যটন ভিসা দেয়। যদিও জন্মসূত্রে দুজনই আমেরিকার নাগরিক হওয়ার কথা।
সাধারণত আমেরিকার আইন অনুযায়ী কোনো শিশুর মা-বাবার একজন আমেরিকান নাগরিক হলেই তাকে মার্কিন নাগরিক হিসেবে যোগ্য বলে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু এদের ক্ষেত্রে তা হয়নি। কনস্যুলেট অ্যান্ড্রু ও এলাদের ডিএনএ পরীক্ষা করে, যাতে তাদের সন্তানদের সঙ্গে অ্যান্ড্রুর রক্ত সম্পর্ক প্রমাণ করা যায়। এখানেই হয় বিপত্তি। ডিএনএ পরীক্ষায় দেখা যায়, এডেনের শরীরে অ্যান্ড্রুর রক্ত ছিল এবং ইথানের শরীরে এলাদের রক্ত ছিল। এই পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী ইথানকে ২০১৭ সালের মার্চে মার্কিন নাগরিকত্ব দিতে অস্বীকার করে মার্কিন কনস্যুলেট।
বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালে দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়ার কেন্দ্রীয় জেলা মার্কিন জজ জন এফ ওয়াল্টার অ্যান্ড্রু ও এলাদের পক্ষে রায় দেন। রায়ে বিচারক বলেন, ইথানের আইনি বিবাহিত অভিভাবককে তাঁদের জৈবিক (বায়োলজিক্যাল) সন্তান হিসেবে দাবির বিপরীতে রাষ্ট্রপক্ষ কোনো আইনি যুক্তি দিতে পারেনি। তিনি আরও বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিরক্তিকর ব্যাখ্যা দিয়েছে। তাদের মতে, জন্মগত নাগরিকত্ব আইনের সঙ্গে কারও পিতামাতা হওয়া না হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। সে ক্ষেত্রে রক্তের সম্পর্ক আরও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। আদালতে এলজিবিটি অধিকার সংস্থা ও ইমিগ্রেশন ইক্যুইটির নির্বাহী পরিচালক এবং এ দম্পতির আইনজীবী হারুন সি মরিস যুক্তি দেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ত্রুটিযুক্ত নীতিটি একই লিঙ্গের দম্পতিদের জন্য অত্যন্ত নেতিবাচক। এই রায়ের ফলে সমকামীদের সন্তানদের সঙ্গে তাঁদের রক্ত সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন তোলার সম্ভাবনা কমে যাবে।
সমকামী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থা ও ব্যক্তিবর্গ এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, সমকামী দম্পতিরা সবার কাছ থেকে সমান ব্যবহার আশা করেন। অথচ তাদের পাশাপাশি তাদের সন্তানদের সঙ্গেও অনেক ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়। অ্যান্ড্রু ও এলাদের বিবৃতির বরাত দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ঘটনা দুই বছর ধরে তাঁদের ভীষণ মানসিক পীড়ায় রেখেছে। এথানকে আমেরিকায় থাকার অনুমতি দেওয়া হবে কিনা তা আমরা জানতাম না। তাঁরা বলেন, ‘এখন আমাদের পরিবার সম্পূর্ণ ও নিরাপদ।’
গত ১৮ বছরে একই ধরনের তিনটি মামলা আদালতে উঠেছিল। এর প্রতিটিতেই রাষ্ট্রপক্ষ পরাজিত হয়। এর প্রতিটিতেই প্রথমে সমকামী দম্পতির সন্তানদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করা হয়েছিল। কিন্তু ওই মামলাগুলো নিষ্পত্তির পরও মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ক্ষেত্রে তাদের নীতি বদল করেনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে নীতি পরিবর্তন করে একটি সাধারণ পন্থা গ্রহণ করা জরুরি। না হলে ভবিষ্যতেও একই কারণে আরও অনেককে ভোগান্তিতে পড়তে হতে পারে।