যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত ঋণ মওকুফ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি এই ঋণ মওকুফের জন্য কংগ্রেসের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন। তাঁর এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হলে তরুণ আমেরিকানদের জন্য একটা বড় ধরনের সুবিধা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে চলমান সংকটের মধ্যে শিক্ষার্থীদের ঋণ মওকুফের পদক্ষেপটি দ্রুত কার্যকর না-ও হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আপাতত শিক্ষা ঋণের কিস্তি পরিশোধ স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেন ক্ষমতা নেওয়ার পর মহামারি নিয়ন্ত্রণ, স্কুল আবার চালু করাসহ অনগ্রসর আমেরিকানদের নানা কর্মসূচি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সাল পর্যন্ত দেশের ৩০ বছরের কম বয়সী এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী ঋণগ্রস্ত ছিলেন। আর ইনস্টিটিউট ফর কলেজ অ্যাকসেস অ্যান্ড সাকসেস অনুসারে, ২০১৮ সালে গড় ঋণের পরিমাণ ছিল ২৯ হাজার ২০০ ডলার।
শিক্ষা বিভাগের ফেডারেল স্টুডেন্ট এইডের মতে, শিক্ষার্থীদের বকেয়া ঋণ বর্তমানে ১ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের ৪ কোটি ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ শিক্ষা ঋণগ্রস্ত। ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের তথ্য অনুসারে, যেসব শিক্ষার্থী মা-বাবার ওপর নির্ভরশীল সরকার তাঁদের জন্য ৩১ হাজার এবং ইনডিপেনডেন্ট শিক্ষার্থীদের জন্য ৫৭ হাজার ৫০০ ডলার করে ঋণ সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পরিকল্পনার অধীনে প্রতি বছর ২৫ হাজার ডলার বা তার চেয়ে কম উপার্জনকারী ব্যক্তিদের ঋণ পরিশোধ করতে হবে না এবং কোনো সুদও আদায় করা হবে না
অধিকাংশ আন্ডারগ্রেডস শিক্ষার্থী সামান্য বা পরিমিত ঋণ নিয়ে কলেজের পড়াশোনা শেষ করেন। প্রায় ৩০ শতাংশ আন্ডারগ্রেড শিক্ষার্থী ঋণ ছাড়াই স্কুল ছেড়ে দেয়। ব্রুকিংসের তথ্য অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ৬ শতাংশ ঋণগ্রহীতা এক লাখ ডলারের বেশি ঋণ নিয়ে থাকেন। এসব ঋণের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পাওনা থাকে।
বর্তমানে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পরিকল্পনার অধীনে প্রতি বছর ২৫ হাজার ডলার বা তার চেয়ে কম উপার্জনকারী ব্যক্তিদের ঋণ পরিশোধ করতে হবে না এবং কোনো সুদও আদায় করা হবে না। তবে ফেডারেল স্টুডেন্ট এইডের জন্য ফ্রি অ্যাপ্লিকেশন (FAFSA) কলেজের মাধ্যমে নির্ধারিত হয় এবং শিক্ষার্থীর মা-বাবার আয় ও ব্যবহারের ওপর গণনা করা হয়।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্বাচনী ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, কেউ ২৫ হাজার ডলারের বেশি আয় করলে তাঁদের কাছ থেকে অনুপাত করে ঋণ আদায় করা হবে। যেমন আবাসন ও খাবার এসবের ব্যয় হিসাব করে ঋণ আদায়ের জন্য ৫ শতাংশ সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। নতুন বা বিদ্যমান উভয় ঋণযুক্ত ব্যক্তিরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাইডেনের ‘ইনকাম বেষ্ট প্রোগ্রাম’ এর তালিকাভুক্ত হবেন।
ওয়েবসাইটে আরও বলা হয়, ‘ইনকাম ড্রিভেন পেমেন্ট প্ল্যান’-এর মাধ্যমে ২০ বছর দায়িত্বের সঙ্গে অর্থ প্রদানের পরে, ঋণের অবশিষ্টাংশ মওকুফ করা হবে। মওকুফ হওয়া অর্থের ওপর আয়কর ধার্য করা হবে না।
দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঋণ গ্রহীতাদের মাসিক ফেডারেল শিক্ষা ঋণ প্রদানের তারিখ বাড়াতে একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন
এ ছাড়া সরকারি কর্মচারীদের জন্য বাইডেন একটি ওয়েবসাইট তৈরি করার কথা জানিয়েছেন। যেখানে জাতীয় বা কমিউনিটি সেবায় আন্ডার গ্র্যাজুয়েট বা গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীদের ঋণ ছাড়ের জন্য প্রতি বছর ১০ হাজার ডলার করে পাঁচ বছর পর্যন্ত ঋণ মওকুফের সুযোগ পাওয়া যাবে। যারা স্কুল, অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে এবং সরকারি কাজ করেন—স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই প্রোগ্রামে তাঁদের নাম তালিকাভুক্ত হবে।
ডেমোক্র্যাট সিনেটর টিম কেইন এবং কার্সটেন গিলিব্র্যান্ডের মতে, পাবলিক সার্ভিস ঋণ মওকুফ কর্মসূচি অসংখ্য শিক্ষক, সমাজকর্মী, মিলিটারি, ফার্স্ট রেসপন্ডার্স, নার্স, পাবলিক ডিফেন্ডার এবং আরও অনেক সরকারি কর্মকর্তার ঋণ মওকুফের বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
যাদের পরিবারের বার্ষিক আয় ১ লাখ ২৫ হাজার ডলারের নিচে, তাঁদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন-মুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে বাইডেন প্রশাসনের। যেসব শিক্ষার্থীর বাড়তি আর্থিক সাহায্য প্রয়োজন, তাঁদের পুরস্কৃত করতে বাইডেন ‘ফেডারেল পেল গ্রান্ট’ দ্বিগুণ করতে চান। পুরস্কার হিসেবে সর্বাধিক ৬ হাজার ৩৪৫ ডলার যোগ করেছেন যা শিক্ষার্থীদের পরিশোধ করতে হবে না।
দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম দিনে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঋণ গ্রহীতাদের মাসিক ফেডারেল শিক্ষা ঋণ প্রদানের তারিখ বাড়াতে একটি নির্বাহী আদেশেও স্বাক্ষর করেছেন।