শাইলককে কে ভুলতে পেরেছে। শেক্সপিয়ারের মার্চেন্ট অব ভেনিস নাটকের সেই খল চরিত্র, যে কিনা কেন্দ্রীয় চরিত্র অ্যান্টোনিওর শরীর থেকে এক পাউন্ড মাংস কেটে নিতে চেয়েছিল। অপরাধ সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে না পারা। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমেরিকার আচরণ এখন অনেকটা এই শাইলকের মতোই হয়ে উঠেছে।
আমেরিকার শিক্ষার্থীরা বর্তমানে রেকর্ড পরিমাণ ঋণের বোঝা নিয়ে চলছে। এ ঋণ তাদের নিতে হয়েছিল শিক্ষাব্যয় নির্বাহের জন্য। বর্তমানে সাড়ে চার কোটি আমেরিকানের কাঁধে রয়েছে এ শিক্ষাঋণের বোঝা, যার পরিমাণ এরই মধ্যে দেড় লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এ এমন এক ঋণ, যা কখনো শোধ হয় না। কারণ, উচ্চ সুদ। শিক্ষাঋণের বিপরীতে সুদের পরিমাণ কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমনকি ১৩ শতাংশের বেশি। ফলে মোটাদাগে চার বছরের শিক্ষাঋণ পরিশোধ করতে একজন আমেরিকানের গড়ে প্রায় দুই দশক সময়ের প্রয়োজন হয়। এ অবস্থায় অনেকেই এই ঋণরূপী দানবের হাত থেকে বাঁচতে আমেরিকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। এতে উচ্চশিক্ষিতদের হারিয়ে আখেরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমেরিকাই।
এই পরিস্থিতি এক দিনে তৈরি হয়নি। ১৯৮০ সালের পর থেকে অনেকটা লাগামহীনভাবেই বেড়েছে উচ্চশিক্ষা ব্যয়। এই সময়ে আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা ব্যয় প্রায় আট গুণ বেড়েছে। কিন্তু এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়েনি আয়। আর শিক্ষার্থী অবস্থায় কাজের সুযোগ কমেছে। ফলে আমেরিকায় একেকজন শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষাজীবন শেষ করছে বিরাট এক বোঝা নিয়ে। নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করে অন্য ঋণের মতো এই ঋণ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার আইনত কোনো সুযোগও নেই।
কথা হচ্ছে এত কিছুর পরও ঋণ নিয়ে উচ্চতর শিক্ষা নিতে কেন ছুটছে শিক্ষার্থীরা। কারণ, আয়বৈষম্য। বিজনেসইনসাইডারের এক হিসাবে দেখা গেছে, কলেজ পাস করা শিক্ষার্থীরা হাইস্কুল পাস করা শিক্ষার্থীদের চেয়ে জীবৎকালে ৮৪ শতাংশ বেশি আয় করতে পারে। আর এই সম্ভাবনাই অনেককে উচ্চশিক্ষা নিতে আগ্রহী করছে। কারণ, তারা চায় না বৈষম্যের শিকার হতে। অথচ এই বৈষম্য এড়াতে গিয়েই তারা এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়ছে, যার দায় মার্কিন প্রশাসনের অনুসৃত নীতির।
প্রথমেই শিক্ষাঋণের পরিমাণে একটি সীমা বেঁধে দেওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে প্রয়োজন এর ওপর সুদের পরিমাণ কমানো। শিক্ষাবৃত্তি ও শিক্ষাঋণের মধ্যে একটি সমন্বয় সাধনও জরুরি। বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানকে সাধারণ শিক্ষাবৃত্তি প্রদানে আগ্রহী করার কাজটি করতে হবে প্রশাসনকেই। মনে রাখা জরুরি যে শিক্ষাঋণের পরিমাণ বর্তমানে ক্রেডিট কার্ড ও গাড়ি কেনা বাবদ ঋণের পরিমাণকেও ছাড়িয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে এটি ২০২৫ সাল নাগাদ তিন লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে। এটি শুধু আমেরিকান স্বপ্ন বাস্তবায়নের ভার যাদের ঘাড়ে, তাদেরই হতাশ করবে না, বরং পুরো অর্থনীতিকেই বিপদে ফেলবে। আমেরিকান স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে, স্বপ্নের কান্ডারিদের ভারমুক্ত করা ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই। প্রশাসন বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে—এটাই প্রত্যাশা।