সংকট যেন পিছু ছাড়ছে না মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। গণমাধ্যম পিছু লেগে থাকে বলে ব্যাপক অভিযোগ তাঁর। নানান ঘটনায় কাকে আস্থায় নেবেন, এ নিয়ে দোনামনা। এর মধ্যে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন তিনি। তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর অযোগ্যতার কথা তুলে তাঁকে অপসারণের চেষ্টা করা হয়েছিল। এ ব্যাপারে দেশটির সংবিধানে প্রেসিডেন্ট সম্পর্কিত ২৫তম সংশোধনীর ধারা নিয়ে আলোচনা করেছিলেন মার্কিন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রড রোসেনস্টেইন। তবে দেশটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জ্যেষ্ঠ এই আইন কর্মকর্তা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
আজ শনিবার বার্তা সংস্থা এএফপি ও বিবিসির খবরে জানানো হয়, গতকাল শুক্রবার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্র উল্লেখ করে, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অপসারণের পরিকল্পনার এই বোমা ফাটিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমস ও দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট।
নতুন এই বোমা কাঁপিয়ে দিয়েছে সংকটে থাকা ট্রাম্প প্রশাসনকে। তবে এবারের এই সংকট থেকে ট্রাম্প ও তাঁর মিত্ররা ‘ফায়দা’ লুটবেন বলে মনে করা হচ্ছে। এর আগে দ্য নিউইয়র্ক টাইমসে সূত্র উল্লেখ করে প্রকাশ করা বহু খবরকে ভুয়া বলে মন্তব্য করেছিলেন ট্রাম্প। তবে এবারের প্রকাশিত খবর নিয়ে তিনি কী বলেন, সেটাও দেখার বিষয়।
খবরে বলা হয়, হোয়াইট হাউসের অকার্যকারিতার প্রমাণ হিসেবে রড রোসেনস্টেইন ২০১৭ সালের মে মাসে ট্রাম্পের কার্যকলাপ গোপনে রেকর্ড করতে বলেন। আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য ট্রাম্পের কার্যকলাপ রেকর্ড করতে বলেছিলেন তিনি।
বব উডওয়ার্ডের লেখা আলোচিত বইয়ের উল্লেখ করে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, ট্রাম্পের যোগ্যতা নিয়ে তাঁর অফিসেরই অনেকের ঘোরতর সন্দেহ এবং তাঁকে খাটো করার জন্য তাঁরা বেশ সক্রিয়ও।
ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে পরাজিত করতে ২০১৬ সালে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে রাশিয়ার গোপন আঁতাতের অভিযোগ তদন্ত করছেন রোসেনস্টেইন। প্রকাশিত দুটি প্রতিবেদনই গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের সাবেক পরিচালক এন্ড্রু ম্যাক কাবের গোপন নথির ভিত্তিতে করা হয়েছে। অনেকের মতে, রোসেনস্টেইন ও রাশিয়া-বিষয়ক তদন্তের বিশেষ কৌঁসুলি রবার্ট ম্যুলারকে ছোট করতেই এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। রাশিয়ার বিষয়টি তদন্তের জন্য ম্যুলারকে বিশেষ কাউন্সেল হিসেবে নিয়োগ দেন রোসেনস্টেইন। ম্যুলারের তদন্ত দিনে দিনে হোয়াইট হাউস ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
প্রতিবেদন দুটোকে ‘অসত্য ও সম্পূর্ণ ভুল’ বলে মন্তব্য করেছেন রোসেনস্টেইন। তিনি বলেন, ‘আমি কখনো কাউকে প্রেসিডেন্টের কার্যকলাপ রেকর্ড করতে বলিনি। আমি প্রেসিডেন্টকে অপসারণের সলাপরামর্শ করেছি বলে যে তথ্য বেরিয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভুল’।
ট্রাম্পের ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র প্রতিবেদনগুলোকে প্রেসিডেন্টের কর্মী বহরে অবিশ্বস্ত লোকজন থাকার প্রমাণ বহন করছে বলে মন্তব্য করেছেন। টাইমসের প্রতিবেদনটি শেয়ার করে টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘এই বিষয়ে কে ছেলেমানুষি করছে? ট্রাম্পকে ছোট করতে এই মানুষগুলো তাঁদের ক্ষমতার মধ্যে যেকোনো কিছু করতে পারেন, এতে কেউ অবাক হয়নি।’
এ ঘটনায় ট্রাম্পের রিপাবলিকান মিত্র মাইক হাকাবে রোসেনস্টেইনকে বরখাস্ত করতে অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশন্সের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। আর জেফ সেশন্স বরখাস্ত করতে অস্বীকৃতি জানালে দুজনকেই বরখাস্ত করতে ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
প্রতিবেদন দুটোর ব্যাপারে সরাসরি কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি ট্রাম্প। তবে গতকাল শুক্রবার রাতে মিজৌরিতে একটি রাজনৈতিক সমাবেশে ট্রাম্পের কাছে বিচার বিভাগ ও এফবিআইয়ের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখছেন, এফবিআইতে কী ঘটছে, তারা সব গেছে, তারা সব গেছে। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এবং আমরা এসব থেকেও মুক্তি পেতে যাচ্ছি।’
শীর্ষ ডেমোক্র্যাট সিনেটর চাক শুমার এ ঘটনায় ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন। রোসেনস্টেইনকে বরখাস্ত করার জন্য পূর্বপরিকল্পিতভাবে এটা করা হয়েছে বলে তিনি মনে করেন। তাঁর মতে, রোসেনস্টেইনকে বরখাস্ত করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এমন কাউকে বসাতে চাইছেন যিনি তাঁকে রাশিয়া-বিষয়ক তদন্তে বিশেষ কাউন্সেলের তদন্তে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ দেবেন।
এদিকে বিবিসি প্রকাশিত খবরের ওপর একটি টাইমলাইন (এক নজরে) প্রকাশ করেছে। এখানে তা তুলে ধরা হলো:
২০১৭ সালের ৯ মে: ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রড রোসেনস্টেইন অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে হিলারি ক্লিনটনের বিষয়ে তৎকালীন এফবিআই পরিচালক জেমস কোমির তদন্তসংক্রান্ত তথ্য পেশ করেন। ওই সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কোমিকে বরখাস্ত করেন এবং এন্ড্রু ম্যাক কাবে এফবিআইয়ের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেন।
২০১৭ সালের ১১ মে: কোমির বরখাস্তের ব্যাপারে রোসেনস্টেইনের প্রধান ভূমিকা ছিল—এমন কথা ছড়ানোর পর তিনি পদত্যাগের হুমকি দিয়েছিলেন বলে অস্বীকার করেন। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস বলেছে, ওই সময়ে ম্যাক কাবের নথি থেকে জানা যায়, রোসেনস্টেইন খুব বিষণ্ন ছিলেন এবং কোমিকে এফবিআইতে চাইছিলেন তিনি।
২০১৭ সালের ১৬ মে: রোসেনস্টেইন ম্যাক কাবেসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন এবং কোমিকে বরখাস্তে তাঁর ভূমিকা কী ছিল, তা ব্যাখ্যা করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্পের ব্যাপারে হতাশা প্রকাশ করেছিলেন তিনি এবং হোয়াইট হাউস পরিদর্শনের সময় কর্মকর্তাদের গোপনে ট্রাম্পের কার্যকলাপ রেকর্ড করতে বলেন এবং সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীর ধারাগুলো নিয়ে আলোচনা করেন, যাতে অযোগ্যতার জন্য ট্রাম্পকে অপসারণ করা যায়।
২০১৭ সালের ১৭ মে: রাশিয়ার ঘটনা তদন্তে রবার্ট ম্যুলারকে বিশেষ কাউন্সেল হিসেবে নিয়োগ দেন রোসেনস্টেইন।
২০১৮ সালের ১৭ মার্চ: অবসরের এক দিন আগে ম্যাক কাবেকে বরখাস্ত করেন ট্রাম্প।
২০১৮ সালের ৩০ মে: মার্কিন গণমাধ্যম প্রচার করে, ম্যাক কাবে কোমির বরখাস্তের বিষয়ে অত্যন্ত গোপনীয় তথ্য হস্তান্তর করেছেন। এতে রোসেনস্টেইন ও ম্যুলারের সঙ্গে তাঁর কথোপকথনের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
২০১৮ সালের ২৬ জুলাই: ম্যাক কাবের নথিগুলো প্রকাশ করতে বিচার বিভাগ অস্বীকৃতি জানানোর পর হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভের কনজারভেটিভরা তথ্য পেতে বাধা পাওয়ার অভিযোগ তুলে রোসেনস্টেইনকে অপসারণের দাবি তোলেন।