ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির কথায় প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছেন ট্রাম্প। তাঁর ভাষায়, রুহানির কথাতেই বোঝা যায়, ইরানের নেতারা বাস্তবতা বোঝেন না। এ সময় মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধাবস্থার জন্য ইরানকে তিনি আবার দায়ী করেন।
আজ বুধবার বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, ইরানের প্রকাশিত বিবৃতিকে ‘মূর্খ ও অপমানজনক’ উল্লেখ করে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর দেশটি ওই বিবৃতি প্রকাশ করে। ওই বিবৃতিতে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, এই পদক্ষেপ প্রমাণ করল হোয়াইট হাউস ‘মানসিক সমস্যায়’ আছে।
রুহানির বিবৃতির পর এটাকে ‘মূর্খ ও অপমানজনক’ উল্লেখ করে গতকাল মঙ্গলবার টুইট করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, এতে বোঝা গেল ইরানের নেতারা ‘বাস্তবতা বোঝেন না’।
গত সোমবার ট্রাম্প ইরানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। ইরানের ‘আক্রমণাত্মক আচরণের’ জবাবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানান তিনি। ইরানের প্রধান নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিসহ কয়েকজন শীর্ষ ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ট্রাম্প দাবি করেন, এই ব্যক্তিরা ওই অঞ্চলের যুদ্ধাবস্থার জন্য দায়ী।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির বিশাল সম্পদের জোগান রয়েছে, যা দিয়ে তিনি ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর শাখা ইসলামিক রেভুল্যুশন গার্ড কর্পসকে (আইআরজিসি) অর্থায়ন করেন।
২০১৮ সালে একবার পত্রিকার মতামতে প্রকাশিত লেখায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছিলেন, খোমেনির এই সম্পদের উৎসের পরিমাণ ৯৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো, যা আইআরজিসির জন্য ব্যবহৃত হয়।
ইরানের প্রেসিডেন্ট রুহানি প্রশ্ন করেছেন, কেন একজন ব্যক্তি বিশেষের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা, যাঁর ‘হোসেনিয়েহ (প্রার্থনার জায়গা) ও সাধারণ একটি বাড়ি’ ছাড়া কিছু নেই। এই নিষেধাজ্ঞাকে ‘জঘন্য ও নির্বোধ’ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘটনা নতুন কিছু নয়। এর আগেও বহুবার এ ঘটনা ঘটেছে। সাম্প্রতিক সময়ে গত বছরের ৫ নভেম্বর ইরানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে জুনে ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি সই করা দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র নাম প্রত্যাহার করে নেয়। এরপর থেকেই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়। ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তিতে সই করা অন্য পাঁচটি দেশ হচ্ছে যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীন। ৭ জুলাইয়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের ব্যাপারে এই দেশগুলো কোনো ব্যবস্থা না নিলে চুক্তি ভঙ্গ করে ইউরেনিয়াম উৎপাদনের সীমা লঙ্ঘন করবে বলেও হুমকি দিয়েছে ইরান।
ইরান মার্কিন স্বার্থে হামলা করতে পারে—নিজ দেশের এমন গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত মাসে ইরানকে লক্ষ্য করে মধ্যপ্রাচ্যে রণসাজে সজ্জিত হয় যুক্তরাষ্ট্র। তবে গত মে মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতে চারটি ট্যাংকারে হামলা এবং জুন মাসে ওমান উপসাগরীয় এলাকায় জাপান ও নরওয়ের মালিকানাধীন দুটি তেলবাহী ট্যাংকারে হামলার ঘটনায় ইরানকে দায়ী করে মধ্যপ্রাচ্যে আরও এক হাজার সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। সবশেষ গত বৃহস্পতিবার মার্কিন সামরিক ড্রোন ভূপাতিত করার ঘটনায় পরদিন ইরানে পাল্টা হামলা চালানোর সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নেওয়ার পরও শেষ মুহূর্তে তা বাতিল করেন ট্রাম্প।
তবে ড্রোন ভূপাতিত করার ঘটনাটি ছাড়া বাকি অভিযোগগুলো প্রত্যাখ্যান করেছে ইরান।
গতকাল টুইটে ট্রাম্প বলেন, ইরান কেবল ‘শক্তি আর ক্ষমতাই’ বোঝে। যুক্তরাষ্ট্র এখন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক বাহিনী। আমেরিকার কোনো কিছুর ওপর ইরান কোনো হামলা চালালে এই বিশাল ও অপ্রতিরোধ্য বাহিনীর সঙ্গে দেখা করতে হবে। কিছু ক্ষেত্রে এই অপ্রতিরোধ্য হওয়ার অর্থ হবে ধ্বংস।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, এটা প্রতীকী। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে বিলিয়ন বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিমাণের সম্পদ খোয়াতে হবে ইরানকে।
ট্রাম্প বলেন, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে আয়াতুল্লাহ খামেনি, তাঁর কার্যালয়, তাঁর ঘনিষ্ঠ সহচর এবং খামেনির অর্থনৈতিক উৎস ও সহায়তার মূল জোগানের জায়গাগুলো বাধাগ্রস্ত হবে।