জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন, বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল, নিউইয়র্ক এবং কুইন্স লাইব্রেরির সহযোগিতায় ২২ ফেব্রুয়ারি যথাযথ মর্যাদায় ‘শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালন করা হয়। কনস্যুলেটের বিশেষ উদ্যোগে প্রথমবারের মতো আমেরিকার মূলধারার সংস্থা কুইন্স লাইব্রেরি, ফ্লাশিংয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
এবারের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস কুইন্স লাইব্রেরির সঙ্গে আয়োজনের উদ্দেশ্য ছিল আমেরিকার মূলধারার সংস্কৃতির সঙ্গে বাংলাদেশি সংস্কৃতির মেলবন্ধন স্থাপন।
অনুষ্ঠানের প্রারম্ভে দিবসটির ওপরে প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয় এবং শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। স্বাগত বক্তব্যে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুন্নেসা বলেন, দিবসটি সারা বিশ্বে ভাষার বৈচিত্র্য উদ্যাপনের একটি প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে; যার নেতৃত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ। এ প্রসঙ্গে তিনি মহান ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বের কথা তুলে ধরেন। এ সময় তিনি নিউইয়র্কে একটি স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন এবং এ ব্যাপারে কুইন্স বরো প্রেসিডেন্টের সহযোগিতা কামনা করেন।
জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন তাঁর বক্তব্যে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট, ছাত্রনেতা হিসেবে ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা এবং কীভাবে ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে তা তুলে ধরার পাশাপাশি ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে জাতির পিতার প্রথম বাংলায় ভাষণ এবং এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাংলায় ভাষণ দেওয়ার কথা বলেন। ১৯৯৯ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ২১ ফেব্রুয়ারিকে স্বীকৃতদানের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কথা উল্লেখ করেন।
সরকারি কাজে সফররত বাংলাদেশের সংসদ সদস্য ও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ডা. আ ফ ম রুহুল হক, সাংসদ মো. আবু জহির, সিনেটর জন ল্যু, কুইন্স বোরো প্রেসিডেন্ট মেলিন্ডা কার্টজ, নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল সদস্য কস্তা কনস্টাটিনিডেস, কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরির প্রধান লাইব্রেরিয়ান ও সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নিক বোরন এবং যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান বক্তব্য দেন। সংসদ সদস্য তাদের বক্তব্যে প্রভাত ফেরিসহ একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহর পালনের ইতিহাস তুলে ধরেন। কুইন্স বোরো প্রেসিডেন্ট মেলিন্ডা কার্টজ ও কুইন্স লাইব্রেরির প্রতিনিধি বাংলাদেশের নেতৃত্বে প্রতিবছর কুইন্সে যথাযথ মর্যাদায় এ দিবস পালিত হবে।
দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত বহুভাষা ও সংস্কৃতির সম্মিলনে ওই অনুষ্ঠানে বাংলা, চীনা, ভারতীয়, থাই, মেক্সিকো এবং বুলগেরিয়ার ভাষায় স্ব স্ব দেশের শিল্পী/ছোট্ট শিশুরা তাদের দেশীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরে।
বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, কনসাল জেনারেল, কূটনীতিক, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিত্ব ও জনপ্রতিনিধি, মিশন ও কনস্যুলেটর কর্মকর্তারা এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন।