‘রুপালি বয়সে সোনালি দিনগুলো’ স্লোগানকে সামনে রেখে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ১৯তম ব্যাচের চিকিৎসকদের বর্ণাঢ্য এক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। গত বছরের ২৫ ও ২৬ ডিসেম্বর এ মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল ও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ১৪০ জন চিকিৎসক তাঁদের পরিবার নিয়ে এই মিলনমেলায় যোগ দেন। গত আট মাস ধরে এই মহামিলনমেলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। আমাদের আয়োজক বন্ধুরা পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের সব বন্ধুর সঙ্গে ফেসবুক, ভাইবার ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে পরিকল্পনা করে এর আয়োজন করেন।
গত ২৫ ডিসেম্বর দুপুর বারোটায় সবার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে মিলিত হওয়ার কথা ছিল। চার বাসভর্তি হয়ে ১৯তম ব্যাচের চিকিৎসকেরা সপরিবারে ঢাকা থেকে আসেন। সকালে হোটেলে চেকইন করেই তৈরি হয়ে ছুটলাম কলেজের দিকে। কলেজের সামনে পৌঁছানোর পর মনে হলো, এ এক খুশির মেলা।
৩০ বছর! চাট্টিখানি কথা নয়। তিন দশক পর বন্ধুদের সঙ্গে মিলিত হওয়া সেই প্রাণপ্রিয় ক্যাম্পাসে, যেখানে শ্রদ্ধেয় শিক্ষাগুরুদের কাছ থেকে আমরা শিক্ষা নিয়ে ছড়িয়ে পড়েছিলাম সারা বিশ্বে। পঞ্চাশ তো আগেই পেরিয়ে গেছি সবাই। চুলে লেগেছে রুপালী ছোঁয়া, সেই সঙ্গে চেহারা আর মনেও রুপালী আভা। তবু এই মিলনমেলায় গিয়ে মনে হলো বয়স কাউকে থামিয়ে রাখতে পারেনি। মনে হলো, আমরা সবাই যেন সেই সোনালি দিনগুলোতেই ফিরে গেছি।
দু দিনের বর্ণাঢ্য এই আয়োজন ভরপুর ছিল মধুর স্মৃতিচারণ, র্যালি, নাচ-গান-কৌতুক, ভূরিভোজ ও আড্ডায়। প্রথম দিন আমাদের সেই সময়কার তিনজন শিক্ষক অধ্যাপক আব্দুল জলিল, অধ্যাপক আব্দুল হাই ফকির ও অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী কেক কাটার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন। অনুষ্ঠানে তিন শিক্ষক ছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন তুহীন, রুমী, বিয়াস, লিসা চৌধুরী (সেলিম চৌধুরীর মেয়ে), রোসলান, রমেন, মোমেন (সারার বর) ও টিটন। ওই দিন রাত ১০টা পর্যন্ত চলে বন্ধু ও তাঁদের পরিবারের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
দ্বিতীয় দিনের সকাল শুরু হয় র্যালির মাধ্যমে। এতে এম-নাইনটিনের বন্ধুরা লাল-হলুদ শাড়ি ও নীল রঙের ব্লেজার পরে রঙিন বেলুন হাতে র্যালিতে অংশ নেন। বিকেলটা কাটল বন্ধুদের মজার মজার স্মৃতিচারণে। অনেক বন্ধুর মজার মজার অজানা গল্প উঠে এল আড্ডায়। তুহীন ও মাহমুদের পরিচালনায় র্যাফেল ড্রয়ের মাধ্যমে কে কী পেল, তা নিয়ে বন্ধুদের মধ্যে বেশ ঠাট্টা-তামাশা হলো। বিকেলে গরম-গরম পিঠার সঙ্গে কফির আয়োজন ছিল চমৎকার। সঙ্গে ছিল রেজাউলের গানের সঙ্গে মূকাভিনয়ের গীতিনাট্য।
‘গালা নাইটে’ নারীরা সব পূর্ব পরিকল্পনামতো রং-বেরঙের দেশীয় জামদানি শাড়ি পরে যোগ দেন। ঢাকা থেকে গালা নাইটের চমক নিয়ে এসেছিলেন সুজন আরিফ, হৈমন্তী রক্ষিত ও লুইপা। পুরোনো দিনের জনপ্রিয় গান গেয়ে দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করতে তাঁরা কার্পণ্য করেননি। একপর্যায়ে শিল্পীদের গানের সঙ্গে তাল মেলাতে উপস্থিত বেশ কিছু চিকিৎসক স্টেজ ও ফ্লোরে নাচতে শুরু করেন, যা দেখে তারুণ্যের দিনগুলোর কথা মনে পড়ছিল।
দুদিনের অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন আফসানা মোমেন সুপ্তি, নাফিসুর রহমান ও সাঈদা লতা। কলেজের দু নম্বর গ্যালারি ও মিলনায়তনের মনোমুগ্ধকর মঞ্চ দেখে মনে হয়েছে মঞ্চ সাজানোর ব্যাপারে নাফিসের শৈল্পিক দক্ষতা সেই আগের মতোই অতুলনীয়। এমন একটি সুন্দর অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য আয়োজক বন্ধু ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ হক টিটন, মইনুল হক তুহিন, গাজি মাসুম, নাফিসুর রহমান, আফতাব স্বপন, শামসুর রহমান ভূঁইয়া ও সারাহ মোমেন ধন্যবাদ পেতেই পারেন। এত দিন ছুটি কাটিয়ে দেশ থেকে ঘরে ফিরেছি প্রায় দু সপ্তাহ। এখনো স্বামী-সংসার ও কর্মব্যস্ত জীবনের মধ্যেও ফাঁক পেলেই বন্ধুদের সঙ্গে সদ্য কাটিয়ে আসা সেই সোনালি দিনগুলোর কথা মনে পড়ছে, যা পুরো জীবনেও ভোলার নয়।