একই বাসায় থাকেন। তবে আলাদা আলাদা। সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রী হলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প বিলাসবহুল প্রাসাদ হোয়াইট হাউসের আলাদা আলাদা কক্ষে থাকেন। সেখানে দুজনেরই রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন জগৎ। ট্রাম্প গলফ খেলতে ভালোবাসেন, তো মেলানিয়া গলফের দিকে ফিরেও তাকান না। বাসার ভেতর মেলানিয়ার নিজস্ব ছোট স্পা আছে। স্বামী-স্ত্রী দুজন একই বাসায় থাকলেও অনেক দিনই হয়তো তাঁদের মুখ–দেখাদেখি হয় না। দুজনেই আইসোলেশনে থাকতে পছন্দ করেন। স্বামী-স্ত্রী হলেও দুজনের একাকী জীবন। আর এই একাকী জীবন নিয়েই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডির সুখের সংসার।
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিৎজার পুরস্কারজয়ী ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক ও লেখক মেরি জর্ডান মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের জীবন নিয়ে ‘দ্য আর্ট অব হার ডিল: দ্য আনটোল্ড স্টোরি অব মেলানিয়া ট্রাম্প’ নামে একটি বই লিখেছেন। ওই বইয়ে মেলানিয়াকে নিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন লেখক মেরি জর্ডান। বইটি লেখার আগে লেখক মেলানিয়ার ঘনিষ্ঠজনসহ হোয়াইট হাউসের শতাধিক কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন।
২০০৩ সালে পুলিৎজার পুরস্কারজয়ী মেরি জর্ডান ২৮৬ পৃষ্ঠার ওই বইয়ে বলেছেন, ট্রাম্প ও মেলানিয়া আলাদা আলাদা থাকলেও দুজন দুজনকে অনেক বিশ্বাস করেন। ট্রাম্পের বিশ্বস্ত মানুষের সংখ্যা খুবই কম। কিন্তু মেলানিয়াকে তিনি অন্ধের মতো বিশ্বাস করেন। এ কারণেই কোনো সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার পর প্রথম ফোনকলটি ট্রাম্প মেলানিয়াকেই করেন। মেলানিয়াও তাঁকে বিশ্বাস করেন। শুরু থেকেই তাঁরা এমন চুক্তি করেছিলেন। ট্রাম্প নিজের মতো থাকবেন, নিজের কাজ নিয়ে থাকবেন এবং বেশির ভাগ সময় মেলানিয়াকে ছাড়াই নিজের মতো কাটাবেন। এই চুক্তিতে তাঁরা এখনো আছেন। আর এতে স্লোভেনিয়ার এক সময়ের মডেল মেলানিয়াও সুখী।
২০১৬ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর হোয়াইট হাউসে আসতে মেলানিয়া অনেক দেরি করেছিলেন। কারণ, তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর আগের চুক্তি পুনর্বিবেচনা করেছিলেন।
মেরি জর্ডান বলেন, মেলানিয়ার জীবন নিয়ে বই লেখাটা সহজ ছিল না। তাঁর ৩০ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে বড় বড় মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, বিপজ্জনক মানুষের কাছাকাছি গেছেন কিন্তু মেলানিয়াকে নিয়ে সামান্য তথ্যও তিনি বের করতে পারছিলেন না। অথচ মেলানিয়া সব সময় মিডিয়ার সামনে আছেন। আরেকজন আলোকচিত্রী মেলানিয়াকে নিয়ে বলেছিলেন, ‘মেলানিয়া আসলে ভূতের মতো। সবাই তাঁকে চেনে, কিন্তু কেউ কিছুই জানে না।’
মেলানিয়ার তথ্য জানতে স্লোভেনিয়া, অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স ও ইতালি গিয়েছিলেন মেরি জর্ডান। মেলানিয়া স্লোভেনিয়ায় বেড়ে উঠেছেন। আর ১৯৯৬ সালে আমেরিকা আসার আগে তিনি অস্ট্রিয়া, ফ্রান্স ও ইতালিতে ছিলেন। নিউইয়র্কে আসার পর ধনী লোকদের সংস্পর্শে আসা শুরু করেন মেলানিয়া। এভাবেই ১৯৯৮ সালে ম্যানহাটনে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় মেলানিয়ার। নব্বইয়ের দশকে ট্রাম্প একদম আলাদা মানুষ ছিলেন। তাঁর ছিল নারীকেন্দ্রিক জীবন। রাজনীতির ধারেকাছেও ছিলেন না তিনি। তাঁর তেমন কোনো চাহিদাও ছিল না। চাহিদা ছিল শুধু আকর্ষণীয় নারীদের সংস্পর্শে থাকা। আর যেহেতু মেলানিয়া একজন মডেল, তাঁরও বিত্তবান একজন মানুষের সহযোগিতা দরকার ছিল। এভাবেই দুজন দুজনের খুব কাছাকাছি চলে আসেন। ২০০৫ সালে ফ্লোরিডার পাম বিচে ট্রাম্প-মেলানিয়া বিয়ে করেন। তাঁদের বিয়েতে বিল ক্লিনটন ও হিলারি ক্লিনটনও উপস্থিত ছিলেন।
‘দ্য আর্ট অব হার ডিল: দ্য আনটোল্ড স্টোরি অব মেলানিয়া ট্রাম্প’ বইয়ে বলা হয়েছে, মেলানিয়ার কান্নার দৃশ্য কেউ কখনোই দেখিনি। কিন্তু তিনি কাঁদেন। তিনি অনেক বেশি আবেগপ্রবণ মানুষ। অনেক সময় দেখা যায়, ট্রাম্প ও মেলানিয়া পাশাপাশি হাঁটছেন। একসঙ্গে হাঁটলেও ট্রাম্পের তাতে মনোযোগ নেই। মেলানিয়াকে সঙ্গে নিয়ে হাঁটা ট্রাম্পের পছন্দ নয়। আর এ কারণেই ট্রাম্পের সঙ্গে দাভোস সফর বাতিল করেছিলেন মেলানিয়া। এমনকি বাসা থেকে মাত্র ১০ মিনিটের পথ স্টেট অব দ্য ইউনিয়নে যেতেও ট্রাম্পের গাড়িতে যান না মেলানিয়া।
ট্রাম্পের আগের স্ত্রীর সন্তান ইভানকা ট্রাম্পের সঙ্গে মেলানিয়ার বেশ সুসম্পর্ক রয়েছে। মেলানিয়া ইভানকাকে ‘দ্য প্রিন্সেস’ বলে ডাকেন। ইভানকাও তাঁর সৎমাকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা করেন। দুজনের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। কারণ, দুজনেই সাবেক মডেল।
মেলানিয়া রাজনীতি না করলেও অনেক বেশি পড়াশোনা করেন। তিনি ট্রাম্প ও ইভানকাকে নানা সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করেন। যেমন ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে ক্রিস ক্রিস্টি ও গিনগ্রিচের পরিবর্তে মাইক পেন্সকে নিতে ট্রাম্পকে জানিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী মাইক পেন্সকে নেওয়া হয়।
মেরি জর্ডান বলেন, মেলানিয়া উচ্চাভিলাষী, তিনি একজন যোদ্ধা। তিনি আসলে জিততে পছন্দ করেন।