৩০ বছরের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড নিয়ে তিনি রয়েছেন বিদেশের কারাগারে। তবে তিনি বন্দী থাকলেও তাঁর সাম্রাজ্য থেমে ছিল না। আশির দশকে নিজের গড়ে তোলা সিনালোয়া কার্টেল নামে মাদক কারবারের সাম্রাজ্য ‘দেখভাল’ করছেন ছেলেরা । তবে শেষ পর্যন্ত তাঁর মতো আইনের জালে ধরা পড়েছেন তাঁর ছেলেদের একজন। মেক্সিকোর মাদকসম্রাট হোয়াকিন গুজম্যানের ওরফে ‘এল চাপো’র ছেলে কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী অভিদিও গুজম্যান লোপেজকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার সিনালোয়া রাজ্যের রাজধানী কুলিয়াকানের পশ্চিমাঞ্চলে সিনালোয়ার মাদক স্বর্গরাজ্য থেকে সন্দেহভাজন মাদক কারবারিদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যাপক গোলাগুলির পর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আজ বার্তা সংস্থা এএফপি ও বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়, অভিদিও গুজম্যানের গ্রেপ্তারের তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন মেক্সিকোর নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী আলফনসো দুরাজো। ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাবা হোয়াকিন গুজম্যানকে (৬২) প্রত্যর্পণ করার পর তাঁর ছেলেরা মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতে থাকেন। এ বছরের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের আদালত গুজম্যানকে ৩০ বছর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। নিউইয়র্কের একটি আদালত তাঁকে মাদক, অর্থ পাচারসহ ১০টি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেন। ২০১৫ সালে তিনি একটি সুড়ঙ্গ দিয়ে মেক্সিকোর কারাগার থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। পরে আবার গ্রেপ্তার হন। পরে তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে শত শত টন কোকেন রপ্তানি এবং হেরোইন, মেথামফেটামিন এবং মারিজুয়ানা তৈরি ও বিতরণের ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে অভিযুক্ত হন গুজম্যান। তাঁর নির্দেশে প্রতিপক্ষের শত শত মানুষকে হত্যা, অপহরণ ও নির্যাতন করা হতো বলে অভিযোগ রয়েছে। তাঁর এসব খুন-খারাবির প্রধান সহযোগীদের মধ্যে একজন লেফটেন্যান্টও ছিলেন। ওই লেফটেন্যান্ট পরে গুজম্যানের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন।
গুজম্যানের গড়ে তোলা সিনালোয়া মাদক কারবারিরা ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় মাদক সরবরাহকারী। ২০০৯ সালে ফোর্বসের বিশ্বের সবচেয়ে ধনীদের তালিকায় ৭০১ নম্বরে ছিল গুজম্যানের নাম। তাঁর সম্পদের আনুমানিক পরিমাণ বলা হয়েছিল এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
গ্রেপ্তার ছেলে অভিদিও গুজম্যানকে বলা হয়, তিনি ২০ বছর বয়স থেকে মাদক ব্যবসায় জড়ান। সিনালোয়ার পরিচালনায় মূল ভূমিকা পালন করতেন বলে মনে করা হয়। মাদক ব্যবসাসংক্রান্ত বেশ কয়েকটি মামলায় যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি ছিল।
গ্রেপ্তার নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় সিনালোয়া সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, উচ্চ প্রভাবশালী ঘটনার মুখে কুলিয়াকানের বিভিন্ন স্থানে গত কয়েক ঘণ্টায় যা ঘটেছে, তাতে শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ চলছে।
এ ব্যাপারে বিবৃতি দেবেন বলে জানিয়েছেন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাদর।