যুক্তরাষ্ট্রের তেলবাহী জাহাজসহ অন্যান্য বাণিজ্য জাহাজে ইরান হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করছে দেশটির সামুদ্রিক প্রশাসন। গতকাল শুক্রবার তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইরানের এক জ্যেষ্ঠ ধর্মীয় নেতা যুক্তরাষ্ট্রের নৌবহরের উদ্দেশে বলেন, ‘একটা ক্ষেপণাস্ত্রেই সব শেষ হতে পারে।’ কাজেই মার্কিন সেনাবাহিনীকে সম্ভাব্য সব ধরনের হামলা ঠেকানোর জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমে বাড়ছে। ইরানের রক্ষণশীল সেনাবাহিনী ‘রেভল্যুশনারি গার্ডস’ পৃথক এক বিবৃতিতে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো সমঝোতায় যাবে না ইরান। দেশটির প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ও তাঁর মধ্যপন্থী মিত্রদের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তাবে নিরুৎসাহিত করার ইঙ্গিত দিচ্ছে এই বিবৃতি।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বরাতে জানা যায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বৃহস্পতিবার ইরানি নেতাদের পারমাণবিক কার্যক্রম নিয়ে আলোচনায় বসতে তাগাদা দেন। ট্রাম্প বলেন, সামরিক সংঘাত বাতিল করা তাঁর পক্ষে সম্ভব না। ইরানের ওপর অর্থনৈতিক ও সামরিক চাপ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে এই প্রস্তাব দিলেন ট্রাম্প। এ মাসে পারস্য উপসাগরে মার্কিন নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর উপস্থিতি বাড়িয়ে ইরান থেকে তেল রপ্তানি কমানোর উদ্যোগ নেন তিনি। ইরানের তেল বিক্রিতে লাগাম টেনে ধরলে বৈশ্বিক জ্বালানির বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্যাট্রিক শানাহান মধ্যপ্রাচ্য লক্ষ্য করে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্রের বিস্তৃতি বাড়ানোর অনুমোদন দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় কমান্ড জানায়, ইরানের জন্য হুমকি হিসেবে মার্কিন বিমানবাহী রণতরি ‘আব্রাহাম লিংকন’ মোতায়েন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার মিসরের সুয়েজ খাল পার হয়েছে আব্রাহাম লিংকন। আমেরিকার বি-৫২ বোমারু বিমানও কাতারের ঘাঁটিতে পৌঁছে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তাদের গোয়েন্দা বাহিনীর কাছে তথ্য রয়েছে, মার্কিন সেনাবাহিনী বা তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ওপর হামলা চালানোর আশঙ্কা রয়েছে ইরানের। আর এ ব্যাপারটি তারা গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছে। বিষয়টিকে ‘স্নায়ুযুদ্ধ’–পূর্ববর্তী উসকানিমূলক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র। অবশ্য এ দুটি পদক্ষেপের কথাই নাকচ করে দিয়েছে ইরান।
বৃহস্পতিবার এক উপদেষ্টার বরাতে জানা যায়, ইউএস মেরিটাইম অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (মারাড) জানিয়েছে, মে মাসের শুরু থেকে যুক্তরাষ্ট্র এবং তাঁর মিত্র বাহিনীর ওপর হামলা চালানোর সমূহ প্রস্তুতি নিচ্ছে ইরান। একই সঙ্গে হরমুজ প্রণালির গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট বন্ধ করে তেল উৎপাদন ব্যাহত করার ভয়ও দেখিয়েছে তেহরান। হরমুজ প্রণালি তেল সরবরাহে বিশ্বে পঞ্চম স্থানে রয়েছে।
মারাড জানায়, ইরান বা তার প্রতিনিধিরা বাণিজ্য জাহাজ, তেলবাহী জাহাজ বা মার্কিন সামরিক নৌযানগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালাতে পারে। লোহিত সাগরে, বাব-এল-মান্দেব প্রণালি বা পারস্য উপসাগরে হতে পারে এই হামলা। কাজেই মার্কিন সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্রদের সম্ভাব্য সব ধরনের হামলা ঠেকানোর প্রস্তুতি নিতে বলেছে মারাড।