আমেরিকার মধ্যবর্তী নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল এখনো ঘোষণা হয়নি। তবে এখন পর্যন্ত যতটুকু ফল জানা গেছে, তাতে এবারের মার্কিন কংগ্রেস নারী প্রতিনিধিত্বের দিক থেকে আগের সব রেকর্ড ভেঙে গেছে। ৮ নভেম্বর আমেরিকার স্থানীয় সময় সকালে ঘোষিত ফল অনুযায়ী ৯৮ জন নারী নির্বাচিত হয়ে প্রতিনিধি পরিষদে যাচ্ছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ এবার ৯৮ জন নারী সদস্য পাচ্ছে। এর মধ্য ৩৩ জন নতুন। আর বাদবাকি ৬৫ জনের পুনর্নির্বাচিত হওয়া একরকম নিশ্চিত। এর আগে প্রতিনিধি পরিষদ একবার সর্বোচ্চ ৮৫ জন নারী সদস্য পেয়েছিল, যা ছিল একটি রেকর্ড। কংগ্রেসনাল রিসার্চ সার্ভিসের এই তথ্য বিবেচনায় নিলে এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনে নারী সদস্যরা নিঃসন্দেহে একটি ইতিহাস গড়লেন।
এবারের কংগ্রেসে অনুমিতভাবেই সদস্য হিসেবে থাকছেন দুই মুসলিম নারী রাশিদা তালিব ও ইলহান ওমর। ডেমোক্র্যাট প্রাথমিক নির্বাচনের পর থেকেই অবশ্য তাঁদের কংগ্রেসে যাওয়ার বিষয়টি একরকম নিশ্চিত ছিল। এর মধ্যে তালিব প্রতিস্থাপন করছেন মিশিগানের সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি জন কনিয়ার্সকে, যিনি যৌন নিপীড়নের দায় মাথায় নিয়ে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন। এ ক্ষেত্রে ইলহান ওমরের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয়। দুই দশক আগে সোমালিয়া থেকে আমেরিকায় শরণার্থী হিসেবে আসা ইলহান ওমরের মিনেসোটার আইনপ্রণেতা হিসেবে আবির্ভূত হওয়াটা অভিবাসী ও শরণার্থীদের জন্য এই কঠিন সময়ে বিশেষ বার্তা বহন করে। প্রথম সোমালি-আমেরিকান হিসেবে তিনি প্রতিনিধি পরিষদে যাচ্ছেন।
আমেরিকার ডান ও বামপন্থী রাজনীতিকেরা নির্বাচনে নারীদের এ অসাধারণ জয়কে নারীর ক্ষমতায়ন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বর্তমানে আমেরিকার নারীরা শুধু উল্লেখযোগ্য মাত্রায় অফিসেই যাবেন না বরং তাদের মধ্যে অনেকে পুরুষশাসিত পার্টির অফিসগুলোতে আনুষ্ঠানিক ভূমিকা পালন করবেন। এসব নারী তৃণমূল থেকে সূচনা করেছেন এবং ডোনার হিসেবে আগের নির্বাচনগুলো থেকে বেশি ভূমিকা পালন করেছেন।
ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্য থেকে সিনেটে নির্বাচিত হওয়া প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী আয়ান্না প্রেসলি বলেছেন, ‘আমরা ইতিহাস গড়তে আসিনি, আমরা পরিবর্তনের জন্য এসেছি। আজকের এই সন্ধ্যার ঐতিহাসিক গুরুত্ব আমার কাছে কোনোভাবেই কম নয়।’
সাবেক স্বাস্থ্য ও মানবসেবা মন্ত্রী ডোনা শালালা বলেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন দুজন নারী প্রার্থী। শালালা নিজেও এবারই প্রথম কোনো আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তিনি বলেন, এই বছর নারীদের বছর।
নারীদের এই জয়জয়কারে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছেন মার্শা ব্ল্যাকবার্ন, যিনি প্রথম নারী সিনেটর হিসেবে টেনিসির প্রতিনিধিত্ব করছেন। টেনিসি থেকে মার্শার নির্বাচিত হওয়াটা বিশেষ কিছু হয়ে ওঠার কারণ এই অঙ্গরাজ্যেই গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ২৬ শতাংশ পয়েন্ট ব্যবধানের বিপুল জয় পেয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্শার নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে অ্যারিজোনাও পাচ্ছে তাদের প্রথম নারী সিনেটর। এই আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী দুজনই ছিলেন নারী। এদের একজন কির্সটেন সিনেমা, যিনি ডেমোক্রেটিক দলের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। বিপরীতে রয়েছেন রিপাবলিকান দলের মার্থা ম্যাকসেলি। এদিকে টেক্সাস থেকে প্রথমবারের মতো কোনো হিস্পানিক নারী নির্বাচিত হয়েছেন। সিএনএন জানিয়েছে, টেক্সাস থেকে এবার ভেরোনিকা এসকোবার ও সিলভিয়া গার্সিয়া যথাক্রমে প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেটে যাচ্ছেন। আর সাউথ ডেকোটায় প্রথম নারী গভর্নর হচ্ছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ক্রিস্টি নোয়েম।
সিএনএনের খবরে বলা হয়, এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচন নারী ও এলজিবিটি প্রার্থীদের বিজয়ের মধ্য দিয়ে বিশেষ হয়ে উঠেছে। দুজন স্থানীয় (নেটিভ) আমেরিকান নারী এবারই প্রথম আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। শরণার্থী থেকে কংগ্রেসম্যান, মুসলিম নারী, ঘোষিত সমকামী; সদস্য হিসেবে কাকে পাচ্ছে না এবারের মার্কিন কংগ্রেস।
সিএনএনের হিসাবমতে, এবারের কংগ্রেস নির্বাচনে প্রথমবারের মতো দুজন নেটিভ আমেরিকান নারী নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে কোনো স্থানীয় আমেরিকান নারী কংগ্রেস সদস্য হননি। এদের একজন শেরিস ডেভিডস এবং অন্যজন ডেব হলান্ড। এর মধ্যে ডেভিডস নির্বাচিত হয়েছেন কানসাস থেকে। আর হলান্ড আসছেন নিউ মেক্সিকো থেকে। এর মধ্যে ডেভিডস আবার স্বঘোষিত সমকামী, যা তাঁকে কানসাস থেকে নির্বাচিত প্রথম ঘোষিত সমকামী কংগ্রেস সদস্যের মর্যাদা দিচ্ছে।
একইভাবে কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের গভর্নর নির্বাচনে আরেক স্বঘোষিত সমকামী জ্যারেড পোলিস সফল হয়েছেন জানিয়েছে সিএনএন। অঙ্গরাজ্যটি থেকে প্রথম সমকামী পুরুষ হিসেবে কংগ্রেস সদস্য হওয়া পোলিস এবার হলেন প্রথম নির্বাচিত সমকামী গভর্নর। ওরেগন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন আরেক উভকামী প্রার্থী কেট ব্রাউন। ২০০০ সালে দায়িত্ব ছাড়া নিউজার্সির সাবেক গভর্নর জিম ম্যাকগ্রিভি অবশ্য আমেরিকার প্রথম সমকামী গভর্নরের মর্যাদা আগেই নিজের করে নিয়েছিলেন। এবারের নির্বাচনে প্রার্থিতা ঘোষণা করা অন্য উল্লেখযোগ্য এলজিবিটি প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন ওরেগনের ব্রাউন, ভারমন্টের ক্রিস্টিন হলকুইস্ট ও টেক্সাসের লুপে ভালদেজ।