বড়দিনেও অচল থাকবে মার্কিন সরকারের কাজ!

মার্কিন ক্যাপিটল ভবন। আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সিনেটের অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করা হয়েছে। ছবি: রয়টার্স
মার্কিন ক্যাপিটল ভবন। আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সিনেটের অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করা হয়েছে। ছবি: রয়টার্স

বাজেট বরাদ্দ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রে ফেডারেল সরকারের একাংশের কাজকর্ম বন্ধের ব্যাপারে অচলাবস্থা কাটেনি। মেক্সিকো সীমান্তে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেয়াল নির্মাণে বাজেট বরাদ্দ নিয়ে মতৈক্য না হওয়ায় খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব বড়দিনজুড়ে এই অচলাবস্থা চলবে বলে মনে করা হচ্ছে।

তবে এ ঘটনায় ডেমোক্র্যাটদের ওপর দোষ চাপিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, সমঝোতা না হলে এই অবস্থা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে পারে।

ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স জানিয়েছেন, সমঝোতায় পোঁছানোর জন্য মধ্যস্থতাকারীরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।

বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় গত শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ফেডারেল সরকারের এক–চর্তুথাংশের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। এর আওতায় পড়েছে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি, পরিবহন, কৃষি, বিচার বিভাগ, ফেডারেল জাতীয় উদ্যান, বন বিভাগসহ কয়েকটি সংস্থা। লাখ লাখ কর্মচারীর ওপর এর প্রভাব পড়ছে। কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ছুটিতে চলে যেতে হচ্ছে বা পারিশ্রমিক বাকি রেখে কাজ করতে হচ্ছে বিপুল কর্মচারীকে।

আর বাজেট নিয়ে এই অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে মেক্সিকো সীমান্তে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেয়াল নির্মাণের জন্য অর্থ চাওয়ার বিষয়টি নিয়ে। মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের জন্য ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার অর্থ বরাদ্দ না হলে বাজেটসংক্রান্ত কোনো আইনে সই করবেন না বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। অন্যদিকে, ডেমোক্র্যাটরা জানিয়েছেন, তাঁরা ১৩০ কোটি ডলারের বেশি অর্থ বরাদ্দ সমর্থন করবেন না। ট্রাম্প যে পরিমাণ অর্থ চেয়েছেন, তা প্রতিনিধি পরিষদে পাস হয়েছে। তবে প্রেসিডেন্টের কাছে তা পৌঁছানোর আগে সিনেটে ৬০ ভোটে পাস হতে হবে। আর সিনেটে রিপাবলিকানদের আসন রয়েছে ৫১টি। বিলটি নিয়ে সিনেটে উত্তেজনা বিরাজ করে। আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সিনেটের অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করা হয়েছে। এ কারণে ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের আগে এই সংকট যে কাটছে না তা প্রায় নিশ্চিত।

এর মধ্যে গতকাল শনিবার সিনেটের অধিবেশন ডাকা হয়, সচরাচর যা হয় না। তবে অধিবেশন বেশিক্ষণ স্থায়ী না হয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মুলতবি হয়ে যায়।

রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল বলেছেন, বাজেট ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট সই না করলে এবং ডেমোক্র্যাটদের কাছ থেকে সম্মতি না পেলে সিনেটে নতুন কোনো ভোট হবে না।

এদিকে ফেডারেল সরকারের একাংশের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ৩ লাখ ৮০ হাজার সরকারি কর্মচারীকে বিনা বেতনে সাময়িক ছুটি নিতে হবে। আর ৪ লাখ ২০ হাজার কর্মচারীকে ‘জনগণ ও সম্পদের সুরক্ষায়’ দায়িত্ব পালনের জন্য বিনা বেতনে কাজ চালিয়ে যেতে হবে।

শুল্ক, সীমান্ত ও বিমানবন্দরে কর্মীদের কাজ চালিয়ে যেতে হবে। জাতীয় উদ্যানের ৮০ শতাংশ কর্মীকে ছুটিতে বাড়ি থাকতে হবে। উদ্যানগুলো বন্ধ থাকবে। তবে কয়েকজন কর্মী ও সীমিত সুবিধা নিয়ে কয়েকটি উদ্যান খোলা থাকতে পারে। আবাসন বিভাগের ৯০ শতাংশ কর্মচারীকে ছুটিতে থাকতে হবে। এর ফলে আবাসন ঋণ ও অনুমোদন প্রক্রিয়ার কাজকর্ম দেরি হবে। কর প্রদান ও অনুসন্ধানের কাজে নিয়োজিত আন্তরাজস্ব সেবার কর্মচারীদের বিনা বেতনে ছুটিতে যেতে হবে। এর বাইরে ৭৫ শতাংশ ফেডারেল কর্মচারীদের ওপর বাজেটের কোনো প্রভাব পড়বে না।

মার্টিন এলি নামে অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের একজন কর কর্মকর্তা এ ঘটনায় রাজনীতিকদের ওপর হতাশা প্রকাশ করেন। তাঁদের দর-কষাকষির বস্তু হিসেবে ব্যবহার না করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, গত সপ্তাহে তিনি বেতন পেয়েছেন। আশা করছেন, ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সপ্তাহের বেতন পাবেন। তবে এর পরের সপ্তাহগুলোয় কাজকর্ম বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়বেন। তিনি বলেন, এ ধরনের ছুটি কখনো আনন্দদায়ক হয় না। যেকোনো সময় এক দিনের নোটিশে তাঁদের কাজে ফিরতে হয়। তাই বাড়িতে থাকা ছাড়া অন্য কোথাও গিয়ে ছুটি কাটানোর কোনো পরিকল্পনা করা যায় না।

আরও পড়ুন:
বাজেট-বিতর্ক মার্কিন সরকারের কাজই বন্ধ করে দিচ্ছে
https://www.prothomalo.com/northamerica/article/1571158/