সদ্য পদচ্যুত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের স্থলে বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর কথা ভাবছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
‘অতিরিক্ত দায়িত্ব’ হিসেবে পম্পেওকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে সিএনএন ও ওয়াশিংটন এক্সামিনার।
উভয় গণমাধ্যম বলছে, পম্পেওকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হলেও তা স্থায়ী ব্যবস্থা নয়। এ রকম অস্থায়ী ও শিথিল ব্যবস্থাই ট্রাম্পের পছন্দ।
ট্রাম্পের চিফ অব স্টাফসহ হোয়াইট হাউসে অনেকেই অস্থায়ী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বোল্টনের স্থলে পম্পেওর নিয়োগের খবরের বিষয়ে হোয়াইট হাউস থেকে এখনো কিছু বলা হয়নি। তবে পম্পেও যদি পররাষ্ট্র দপ্তরের পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্ব পান, তা একেবারে নজিরবিহীন হবে না।
হেনরি কিসিঞ্জার ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
ব্যবস্থাটি পম্পেওর পছন্দ হওয়ার কথা। এই নিয়োগ হলে ট্রাম্পের কাছে যে তাঁর গুরুত্ব বাড়বে তা-ই নয়, জাতীয় পর্যায়েও পম্পেওর রাজনৈতিক ‘প্রোফাইল’ বেশি মর্যাদা পাবে।
শোনা যায়, পম্পেও নিজে প্রেসিডেন্ট হতে চান। তিনি কানসাস থেকে সিনেটর পদে লড়তে চান। ট্রাম্প প্রশাসনে দুই ভূমিকা সফলভাবে পালন করতে সক্ষম হলে রিপাবলিকান এস্টাবলিশমেন্ট ও ভোটারদের কাছে পম্পেওর গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদে পম্পেওর আগ্রহের অন্য একটি কারণও থাকতে পারে। বোল্টনের সঙ্গে তাঁর মতভেদ ছিল, এ কথা গোপন নয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে বৈদেশিক নীতি প্রশ্নে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা তাঁরই। কিন্তু ‘যুদ্ধবাজ’ বলে পরিচিত বোল্টন অনেক ক্ষেত্রেই পম্পেওর পরামর্শ উপেক্ষা করে অধিকতর কঠোর নীতি অনুসরণের পক্ষে ছিলেন। যেমন ইরান ও উত্তর কোরিয়া প্রশ্নে বোল্টনের অবস্থান কঠোর ছিল। আফগানিস্তান প্রশ্নেও তাঁদের অবস্থান এতটাই পৃথক ছিল যে অনেক সময় তাঁরা ট্রাম্পকে সামনে রেখে বিবাদে জড়িয়েছেন।
ওয়াশিংটন এক্সামিনার জানিয়েছে, অধিকাংশ প্রশ্নে ট্রাম্প ও পম্পেও অভিন্ন মত পোষণ করে আসছেন। এ অবস্থায় একজন ‘অপরীক্ষিত’ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার নিয়োগের বদলে পম্পেওকে এই দায়িত্ব দেওয়া ট্রাম্পের কাছে বেশি আকর্ষণীয় হতে পারে।
অধিকাংশ ভাষ্যকার একমত, দেশ বা বিদেশ, সামরিক বা অর্থনৈতিক—সব প্রশ্নে ট্রাম্প নিজেই সবচেয়ে ভালো জানেন, ভালো বোঝেন বলে মনে করেন। তাঁর নিজের কথায়, তিনি একজন ‘স্টেবল জিনিয়াস’ বা স্থিরমতি প্রতিভা। নিজের ‘উল্লেখযোগ্য মস্তিষ্কের’ প্রশংসাও তিনি করেন। তিনি নিজেই নিজের সেরা উপদেষ্টা, এ কথা গভীরভাবে বিশ্বাস করেন।
কোনো বিষয়ে নিজ মন্ত্রিসভার বা প্রশাসনের কেউ প্রকাশ্যে ট্রাম্পের সঙ্গে ভিন্নমত প্রকাশ করলে তা একদমই তাঁর অপছন্দ। ওয়াশিংটন পোস্ট এক দীর্ঘ প্রতিবেদনে জানিয়েছে, জন বোল্টনের পদচ্যুতির প্রধান কারণ, তিনি ট্রাম্পের এই অলিখিত নীতিমালা লঙ্ঘন করেছিলেন। প্রশাসনের সদস্যদের মধ্যে মতভেদ থাকলে তা নিয়ে একে অপরের সঙ্গে বচসা করলে ট্রাম্পের আপত্তি নেই। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই তাঁর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করা যাবে না। পত্রিকাটি একজন সাবেক উপদেষ্টার উদ্ধৃতি দিয়ে মন্তব্য করেছে, ‘উপদেষ্টারা বড়জোর মঞ্চের পেছনে দৃশ্যসজ্জা মাত্র।’
গতকাল বুধবার ট্রাম্প নিজেই জানান বোল্টনের সঙ্গে তাঁর ভিন্নতা কতটা গভীর ছিল। এদিন তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বোল্টন অনেক ভুল করেছিলেন। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যখন শান্তি প্রশ্নে আলোচনা চলছে, তখন তিনি লিবিয়া মডেলের কথা তুলেছিলেন। সেই মডেলে গাদ্দাফি নিহত হয়েছিলেন।
ট্রাম্প জানান, বোল্টন মনে করতেন, তাঁর প্রশাসনের অনুসৃত নীতি যথেষ্ট কঠোর নয়।
বোল্টনকে ‘মিস্টার টাফ গাই’ নামে অভিহিত করেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, এ রকম কঠোর মানুষের (বোল্টন) জন্যই যুক্তরাষ্ট্রকে ইরাকে হামলা করতে হয়েছিল, যার মাশুল এখনো গুনতে হচ্ছে।