ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্বজুড়ে খাদ্যসংকট বেড়ে যাওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া একে অপরকে দোষারোপ করছে। খবর এএফপির।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে বিশ্ব খাদ্য পরিস্থিতির অবনতির জন্য ওয়াশিংটন ও মস্কো পরস্পরকে দায়ী করে। বৈঠকের আয়োজক ছিল যুক্তরাষ্ট্র।
বিশ্বের শীর্ষ গম উৎপাদনকারী দেশগুলোর একটি ইউক্রেন। চলমান যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের বন্দর থেকে গম রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যান্য খাদ্যশস্যের পাশাপাশি দেশটির সূর্যমুখী তেল রপ্তানিও এখন বন্ধ। রপ্তানি বন্ধের প্রভাব পড়েছে বিশ্ববাজারে।
কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলো দিয়ে ইউক্রেনের খাদ্যশস্য রপ্তানির সুযোগ দিতে মস্কোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ওয়াশিংটন।
নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে রাশিয়াকে উদ্দেশ্য করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলো অবরোধ করা বন্ধ করুন। ইউক্রেন থেকে খাদ্যবাহী জাহাজের পাশাপাশি ট্রেন ও ট্রাককে অবাধ যাতায়াতের সুযোগ দিন।
অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘যেসব দেশ আপনাদের (রাশিয়া) আগ্রাসনের সমালোচনা করছে, সেসব দেশে খাদ্য ও সার রপ্তানি বন্ধের হুমকি থেকে সরে আসুন।’
অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন আরও বলেন, ইউক্রেনীয়সহ বিশ্বের লাখো মানুষের জন্য খাদ্য সরবরাহব্যবস্থা আক্ষরিকভাবেই অবরুদ্ধ করে রেখেছে রুশ সেনাবাহিনী।
জাতিসংঘে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজিয়া পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, বিশ্বের সব দুর্দশার জন্য তাঁর দেশকে দোষারোপ করা হচ্ছে।
ভাসিলি বলেন, বিশ্ব দীর্ঘদিন ধরেই খাদ্যসংকটে ভুগছে। এই সংকটের পেছনে পশ্চিমা বাজার নিয়ে গুঞ্জনসহ নানা কারণ রয়েছে। ভাসিলির দাবি, ইউক্রেন নিজেই তার বন্দরগুলো অবরোধ করে রেখেছে। কৃষ্ণসাগর উপকূলে তারা মাইন পুতে রেখেছে।
রুশ রাষ্ট্রদূতের অভিযোগ, বন্দরে আটকা পড়ে থাকা বেশ কিছু বিদেশি পণ্যবাহী জাহাজ ছেড়ে দিতে শিপিং কোম্পানিগুলোকে সহায়তা করছে না ইউক্রেন।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞারও সমালোচনা করেন ভাসিলি। তাঁর ভাষ্য, বিশ্বজুড়ে খাদ্য নিরাপত্তার ওপর এই নিষেধাজ্ঞার বাজে প্রভাব পড়ছে।
অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন পাল্টা দাবি করেন, রাশিয়ার খাদ্য ও সার রপ্তানি বাধাগ্রস্ত করছে না নিষেধাজ্ঞা। খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার সিদ্ধান্তটি শুধুই মস্কোর।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্য সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। সরবরাহ সংকটে বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে চলছে।
গত বুধবার জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের কারণে আগামী মাসগুলোতে বিশ্বব্যাপী খাদ্যসংকট দেখা দিতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, এই যুদ্ধ দরিদ্র দেশগুলোর খাদ্য নিরাপত্তাহীনতাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। খাদ্যপণ্যের ক্রমবর্ধমান দামের কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ইউক্রেনের রপ্তানি যদি যুদ্ধ-পূর্ব পর্যায়ে ফিরিয়ে নেওয়া না যায়, তাহলে বিশ্ব দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হতে পারে। এই দুর্ভিক্ষ বছরের পর বছর ধরে চলতে পারে।