বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটসের বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা নিয়ে নানা আলোচনা মার্কিন সমাজকে মাতিয়ে রেখেছে। বিশ্বের ক্ষমতাশালী এবং বিত্তশালীদের মধ্যে এ ধরনের বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা অহরহ হয়ে থাকলেও গেটস দম্পতিকে নিয়ে আলোচনা থামছে না। গত সপ্তাহে বিশ্বের অন্যতম সম্পদশালী ও জনহিতকর কাজ করে দৃষ্টান্ত সৃষ্টিকারী এ দম্পতির বিচ্ছেদের সংবাদ অসংখ্য মানুষের কাছে নানা প্রশ্নের উদ্রেক করেছে।
বিবাহবিচ্ছেদের সংবাদটি আচমকা পাওয়া গেলেও বিচ্ছেদের জন্য গেটস দম্পতি দীর্ঘদিন থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তাঁদের ছোট মেয়ের স্কুল গ্র্যাজুয়েশন না হওয়ার পর্যন্ত বিচ্ছেদের ঘোষণা দেওয়া থেকেই কেবল বিরত ছিলেন গেটস দম্পতি। মেয়ের শিক্ষাজীবন ব্যাহত না করার জন্য তাঁদের এ প্রয়াস ছিল বলে মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে। গতকাল শনিবার পিপল ম্যাগাজিনের এ–সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।
গেটস দম্পতির তিন সন্তান। জেনিফার (২৫), রোরি (২১) ও ফোয়েবি (১৮)। জেনিফার এক বিবৃতিতে এর মধ্যেই বলেছেন, মা–বাবার বিচ্ছেদের ঘোষণা আসার পর নাজুক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে তাঁদের যেতে হচ্ছে। নিজের এবং পরিবারের অন্যদের ভাবাবেগকে সামাল দেওয়ার জন্য সেরা পদক্ষেপের বিষয়টি ধাতস্থ করার চেষ্টা করছেন বলে জেনিফার উল্লেখ করেছেন। এ কাজের সুবিধা দেওয়ার জন্য তিনি সব মহলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। মা-বাবার বিচ্ছেদ নিয়ে নিজে কোনো মন্তব্য না করলেও সবার সান্ত্বনার বাণী এবং সমর্থন তাঁর জন্য জরুরি বলেও জেনিফার তাঁর বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন।
পিপল ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে নাম প্রকাশ না করা তথ্য সূত্রের উল্লেখ করে বলা হয়েছে, অনেক কারণ গেটস দম্পতির বিচ্ছেদের পেছনে কাজ করেছে। যদিও এসব কারণের কোনো বিস্তারিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি। গত সোমবার সিয়াটলের আদালতে মেলিন্ডা গেটস (৫৬) বিচ্ছেদের জন্য দায়ের করা মামলায় বলেছেন, তাঁদের বিয়ে অপ্রতিরোধ্যভাবে ভঙ্গুর হয়ে উঠেছে। তাঁদের মধ্যে বিচ্ছেদসংক্রান্ত একটি সমঝোতা হয়েছে বলে জানানো হলেও সম্পদের ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে কোন প্রাক্-চুক্তি তাঁদের মধ্যে নেই বলেই সংবাদমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে। গেটস-মেলিন্ডার মধ্যে কোনো প্রাক্-বৈবাহিক চুক্তি ছিল না। আমেরিকার আইন অনুযায়ী এ ধরনের প্রাক্-চুক্তির মাধ্যমে বিচ্ছেদপরবর্তী সম্পদের বণ্টন নিয়ে আগাম চুক্তি করা হয়ে থাকে। সম্পদশালী লোকজন এমন প্রাক্-চুক্তির মাধ্যমে সম্ভাব্য দাম্পত্য ভাঙনের পর নিজদের অর্থনৈতিক সুরক্ষার আগাম ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। গেটস দম্পতি তাঁদের বিচ্ছেদের ঘোষণায় জানিয়েছেন, যৌথভাবেই তাঁরা বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় জনহিতকর কাজের জন্য তাঁদের এ প্রতিষ্ঠান নোবেল পুরস্কার পাওয়ার বিবেচনায় রয়েছে। বিল ও মেলিন্ডা যৌথভাবেই নোবেল পদক পেতে পারেন। তাঁদের প্রতিষ্ঠান বিশ্বের অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য ও জীবনমানের উন্নয়নের জন্য কাজ করছে। সারা বিশ্বে জনহিতকর এমন কাজের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হয়ে দাঁড়িয়েছে বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন। বিবাহবিচ্ছেদের মাধ্যমে পরস্পরের বিরুদ্ধে কিছু বলা তাঁদের নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির সম্ভাবনাকে দুর্বল করবে। বিচ্ছেদ নিয়ে একটি পারস্পরিক সহনশীল অবস্থা এ কারণেই বিরাজ করছে বলে পিপল ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
পরিবারের অন্যরাও এ নিয়ে খোঁড়াখুঁড়ি না করে পরিস্থিতিকে সহনশীল রাখার চেষ্টা করছেন। নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির সম্ভাবনাকে দুর্বল না করার জন্য উভয় পক্ষই সতর্কতার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর্বটি দেখছেন বলে সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
বিল গেটস ও মেলিন্ডার বিচ্ছেদের ঘোষণা আসার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের অনুবাদক ঝি শেলি ওয়াংকে জড়িয়েও নানা কথাবার্তা ছড়াতে থাকে। চীনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ওয়েইবো সরগরম হয়ে ওঠে। শেলি ওয়াংয়ের সঙ্গে বিল গেটসের অন্তরঙ্গতা এই দম্পতির বিচ্ছেদকে ত্বরান্বিত করেছে বলে গুজব ছড়ানো হয়। অনুবাদক শেলি ওয়াং বলেছেন, বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটসের বিচ্ছেদের জন্য তিনি কোনোভাবেই দায়ী নন। বিচ্ছেদের বিষয়ে কয়েক মাস আগেই সিদ্ধান্ত নেন বিল গেটস ও মেলিন্ডা। তাঁরা মার্চ মাসে এ-সংক্রান্ত ঘোষণা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু তা পিছিয়ে যায়। বিচ্ছেদের ঘোষণার পর সংবাদমাধ্যমের দৃষ্টি এড়িয়ে চলার জন্য মেলিন্ডা একটি নির্জন ব্যক্তিগত দ্বীপ ভাড়া করেন। বিল গেটস ছাড়া সেখানে পরিবারের অন্য সদস্যদের আমন্ত্রণ জানানো হয়।