ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রথম প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্কে মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন কমলা হ্যারিস। এ বিতর্কে কমলা কেমন করবেন—তা নিয়ে মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। সেই সঙ্গে আলোচনা চলছে কমলার সম্ভাব্য নীতি নিয়ে। বিতর্কের প্রাক্কালে নিজের মধ্যপন্থী নীতির কথা জানিয়েছেন কমলা। কিছু বিষয়ে আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছেন তিনি। কিছু নীতি নিয়ে কমলার অবস্থানগত অস্পষ্টতা এখনো কাটেনি।
বিতর্কের প্রাক্কালে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস তাঁর নিজের ওয়েবসাইটে কিছু নীতি প্রকাশ করেছেন। আসুন, এবারের নির্বাচনী প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এমন পাঁচটি বিষয়ে কমলার সম্ভাব্য অবস্থান বা নীতি জেনে নিই—
ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে একক মায়ের (সিঙ্গেল মাদার) কাছে বেড়ে উঠেছেন কমলা। তাই অভাব বেশ কাছ থেকে দেখেছেন তিনি। নিজের বেড়ে ওঠার সময়কার অভিজ্ঞতার আলোকে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবিত্তের প্রতি নিজের প্রতিশ্রুতির ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। বলেছেন, মধ্যবিত্তদের জন্য ‘অর্থনৈতিক সুযোগ’ তৈরি করতে চান তিনি।
কমলার সুনির্দিষ্ট নীতিগুলোর একটি হলো—নবজাতক শিশুদের পরিবারের জন্য ছয় হাজার ডলার সুবিধা বা চাইল্ড ট্যাক্স ক্রেডিট দেওয়া। তিনি ১০ কোটি মার্কিনির জন্য কর কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বলেছেন, অতি ধনীদের কর বাড়ানো হবে। কমিয়ে আনা হবে আবাসনের দাম।
করের ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নীতি থেকে অনেকটাই দূরে সরে এসেছেন কমলা। মধ্যপন্থী ভোটারদের কাছে টানতে তিনি বলেছেন, সম্পদের ওপর ২৮ শতাংশ হারে কর নেওয়া হবে। বাইডেনের আমলে করের এ হার ৩৯ দশমিক ৬ শতাংশ। অর্থাৎ কমলা মধ্যপন্থী ও মধ্যবিত্তদের ওপর থেকে করের বোঝা এখনকার তুলনায় কমিয়ে আনার পক্ষে।
সেবা খাতের কর্মীদের পাওয়া টিপসের ওপর থেকেও কর তুলে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কমলা। ট্রাম্পের পক্ষ থেকে এমন প্রতিশ্রুতি পাওয়ার কয়েক সপ্তাহের মাথায় কমলা একই নীতির কথা জানিয়েছেন।
কমলা আরও বলেছেন, তিনি জিনিসপত্রের বাড়তি দাম নিয়ন্ত্রণে করপোরেশনগুলোর ‘দাম বাড়ানোর’ নীতি মেনে চলবেন। তবে এটা কীভাবে কার্যকর হবে, সেই বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি কমলা। কমলার এমন নীতিকে ট্রাম্পের বিপরীতে তাঁর অন্যতম নীতিগত দুর্বল অবস্থান বিবেচনা করা হচ্ছে।
পরিবেশ বিষয়ে নিজের নীতিগত অবস্থান এখনো স্পষ্ট করেননি কমলা। ব্যতিক্রম রয়েছে একটি বিষয়ে। তা হলো পাথুরে ভূমি থেকে তেল ও গ্যাস উত্তোলনে পানির উচ্চ চাপ ব্যবহার। কমলা আগে এ কৌশলে তেল-গ্যাস উত্তোলনের বিরোধী ছিলেন। এখন তিনি মত বদলেছেন।
যদিও ডেমোক্রেটিক দল থেকে প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া একমাত্র সাক্ষাৎকারে সিএনএনকে কমলা বলেছিলেন, এ বিষয়ে তাঁর নীতিগত অবস্থান বদলেছে। কিন্তু মূল্যবোধে পরিবর্তন আসেনি।
এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে প্লাস্টিকের স্ট্র ব্যবহারের বিরোধিতা করে আসছেন কমলা। একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, কমলা এই অবস্থান থেকেও পিছু হটেছেন।
ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কমলা ‘মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস আইনের’ অধীনে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সবুজ শক্তি রূপান্তর নীতির প্রতি দৃঢ় সমর্থন দিয়ে এসেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মেক্সিকো সীমান্তের অবৈধ অভিবাসনের বিষয়টি অন্যতম স্পর্শকাতর একটি ইস্যু। সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কমলা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে অবৈধ উপায়ে পাড়ি দেওয়া মানুষদের ‘পরিণতি’ ভোগ করতে হবে।
অভিবাসন নীতির শর্তগুলো আরও কঠিন করতে বাইডেনের নীতির দৃঢ় সমর্থক কমলা। এ ছাড়া সীমান্তে সীমানা প্রাচীর নির্মাণে বিনিয়োগের বিষয়ে ট্রাম্পের আহ্বানের প্রতিও কমলার সমর্থন রয়েছে। যদিও আগে এমন নীতির সমালোচনা করেছিলেন কমলা।
গর্ভপাতের অধিকারের বিষয়ে কমলার সমর্থন এবারের নির্বাচনে অন্যতম স্পর্শকাতর একটি ইস্যু, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
মার্কিন নারীদের গর্ভপাতের অধিকার কেড়ে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া ঐতিহাসিক রায়ের বিষয়ে ট্রাম্পের বড়াইয়ের কড়া সমালোচক কমলা।
কমলা স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তিনি মার্কিন আইনে গর্ভপাতের সুরক্ষার জন্য চাপ দেবেন।
ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধের নামে ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচারে বেসামরিক মানুষকে হত্যার প্রতিবাদে বাইডেনের তুলনায় কমলা বেশি সোচ্চার। তাই ক্ষমতায় যেতে পারলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তুলনামূলক বেশি কঠোর নীতি গ্রহণ করতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছিল।
কিন্তু সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কমলা বলেছেন, ইসরায়েলকে মার্কিন অস্ত্র সরবরাহে তিনি বাধা হবেন না। অস্ত্রের চালান স্থগিত করবেন না। যদিও ইসরায়েলকে অস্ত্র না দিতে অনেক ডেমোক্র্যাট ও আরব-আমেরিকান ভোটারের চাপ রয়েছে।
সেই সঙ্গে ইসরায়েলকে আত্মরক্ষার সুযোগ দেওয়া এবং সহায়তা করার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ডেমোক্র্যাট দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী কমলা।