পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাত্র ছয় মাস বাকি। করোনাভাইরাসের কারণে নির্বাচনী প্রচার কিছুটা মন্থর। তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর সম্ভাব্য ডেমোক্র্যাট প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের মধ্যে বাগযুদ্ধ থেমে নেই।
বাক্যবাণ অবশ্য বেশির ভাগ আসছে ট্রাম্পের কাছ থেকে। গত সপ্তাহে তিনি বাইডেনের বিরুদ্ধে আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে ন্যক্কারজনক অপরাধ করার অভিযোগ করে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি তুলেছেন। তবে তিনি ঠিক কী অপরাধ করেছেন, তা স্পষ্ট করে বলেননি ট্রাম্প।
ট্রাম্প এমন দাবিও তুলেছেন যে, বাইডেনকে জেলে যেতে হবে।
জবাবে বাইডেন অবশ্য ট্রাম্পকে উপেক্ষা করে এই দুর্যোগকালে জাতীয় ঐক্যের ওপর জোর দিয়েছেন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বাইডেনের পক্ষে অলক্ষ্য নির্বাচনী প্রচারে নেমে পড়ায় দুই শিবিরের মধ্যে কথার যুদ্ধ আরও তেঁতে উঠেছে। তিনি পরপর দুটি ভাষণে করোনা প্রশ্নে বর্তমান প্রশাসনের অযোগ্যতা নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছেন।
ট্রাম্পের নাম উল্লেখ না করে ওবামা বলেছেন, বর্তমান সরকার যা করছে, তা কেবল দায়িত্বহীনতা নয়, রীতিমতো এক মহা বিপর্যয়।
জবাবে ট্রাম্প তাঁর পূর্বসূরিকে আমেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যর্থ ও অযোগ্য প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিহিত করেছেন। তাঁকেও জেলে পাঠানোর হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প।
পরপর ১১টি টুইটে এক অজ্ঞাত 'ওবামাগেট' ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উত্থাপন করেছেন ট্রাম্প। কিন্তু ঠিক কোন অপরাধের কথা বলেছেন তিনি, তা খোলাসা করে বলেননি। তিনি বিচার বিভাগের কাছে দাবি তুলেছেন, ওবামা ও বাইডেন উভয়ের ব্যাপারে তদন্ত করতে হবে।
ট্রাম্পের এমন দাবির জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম বার সাফ বলে দিয়েছেন, ও পথে তিনি হাঁটছেন না।
ট্রাম্পের নিকট মিত্র হিসেবে পরিচিত হলেও উইলিয়াম বার বলেছেন, তিনি বিচারব্যবস্থাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের বিরুদ্ধে।
বারের এই কথা শোনার পর ট্রাম্প বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, 'এই সিদ্ধান্ত আমার হাতে থাকলে ওবামার বিরুদ্ধে অবশ্যই তদন্ত করতাম।'
অধিকাংশ পর্যবেক্ষক একমত, নিজের সমর্থকদের উত্তেজিত করবে, এমন একটা কিছুর সন্ধানে ট্রাম্প একের পর ষড়যন্ত্র তত্ব বের করে চলছেন। তিনি চাইছেন, করোনা প্রশ্নে সমালোচনার নজর তাঁর নিজের ওপর থেকে সরিয়ে অন্য কারও ওপর বসাতে। প্রথম চীন ও পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে আক্রমণ করার বিষয়টি এই প্রক্রিয়ারই অংশ। এতে তেমন কাজ না হওয়ায় এখন ট্রাম্প নজর দিয়েছেন ওবামার দিকে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমর্থকদের জন্য ওবামা এখনো একজন প্রধান শত্রু। এ কারণে ট্রাম্প ক্যাম্পেইন বাইডেনকে ওবামার একটি লেজুড়মাত্র প্রমাণে আগ্রহী।
কোনো কোনো পর্যবেক্ষক অবশ্য এমন কথাও বলেছেন, ওবামাকে সমালোচনার টার্গেট করে ট্রাম্প নিজের জন্য বিপদ ডেকে আনছেন। ওবামা এখনো আমেরিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রেসিডেন্টের একজন। এই মুহূর্তে ট্রাম্পের প্রতি জনসমর্থন কম-বেশি ৪০ শতাংশ। অন্যদিকে, ক্ষমতায় না থেকেও ওবামার প্রতি আমেরিকানদের সমর্থনের পরিমাণ প্রায় ৬০ শতাংশ।
ওবামার সাবেক উপদেষ্টা ড্যান ফাইফার ব্যাখ্যা করে বলেছেন, ট্রাম্পের তুলনায় ওবামার জনপ্রিয়তা এতটাই বেশি যে, তাঁকে আক্রমণ করে তিনি ভুলই করছেন। যে সময়টা ট্রাম্প বাইডেনের সমালোচনায় কাটাতে পারতেন, তা তিনি ব্যয় করছেন ওবামাকে সমালোচনা করে। এতে অবশ্য বাইডেনের আপত্তির থাকার কথা নয়।
বাইডেন গোড়া থেকেই ওবামার উত্তরাধিকারী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে আগ্রহী ছিলেন। ফলে নির্বাচনী প্রচারে ওবামার অংশগ্রহণকে তিনি স্বাগত জানিয়েছেন।
ডেমোক্রেটিক পার্টির একাংশ এখনো বাইডেনের ব্যাপারের সংশয় শূন্য নয়। ওবামা প্রকাশ্যে পাশে দাঁড়ানোয় দলীয় সমর্থকদের বাইডেনের পাশে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
ওবামা দলীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছেন, তিনি কেবল বাইডেন নয়, দলের সিনেট ও কংগ্রেস পদপ্রার্থীদের পক্ষেও ক্যাম্পেইনে অংশ নেবেন।