বিশ্লেষণ

ফ্লোরিডা থেকে সুখবর পাচ্ছেন ট্রাম্প

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিততে হলে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ফ্লোরিডার ২৯টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট কবজা করতে হবে। গত ১০০ বছরে কোনো রিপাবলিকান প্রার্থীর পক্ষে এই ফ্লোরিডায় জয়লাভ ছাড়া হোয়াইট হাউস দখল করা সম্ভব হয়নি। ট্রাম্পের পক্ষেও সম্ভব হবে না। ২০১৬ সালে তিনি ১ পয়েন্টের বেশি ব্যবধানে হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়েছিলেন, ফলে সংগত কারণেই ডোনাল্ড ট্রাম্প এই অঙ্গরাজ্য ধরে রাখার ব্যাপারে আশাবাদী। এই রাজ্যের ভোটারদের প্রতি তাঁর আবেদন গভীর করতে তিনি নিউইয়র্ক ছেড়ে ফ্লোরিডায় স্থায়ীভাবে বসবাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গত কয়েক সপ্তাহ তিনি ঘন ঘন এসে এখানে নির্বাচনী র‍্যালিও করে গেছেন।

ফ্লোরিডার পাম বিচ কাউন্টিতে গত শনিবার আগাম ভোট দিয়েছেন ট্রাম্প। কাকে ভোট দিয়েছেন, এই প্রশ্নের জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, ট্রাম্প নামের একজনকে তিনি ভোট দিয়েছেন।

অধিকাংশ জনমত জরিপ অনুসারে, এখানে ট্রাম্প ও বাইডেন সমানে সমান লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইট ফাইভথার্টিএইট জানাচ্ছে, এ মুহূর্তে ট্রাম্পের তুলনায় ২ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জো বাইডেন (৪৮: ৪৬)। ভিন্ন জরিপে অবশ্য এ ব্যবধান আরও কম, কোনোটিতে ট্রাম্প সামান্য এগিয়ে।

এই অঙ্গরাজ্যে ডাকযোগে ভোটে ভালোভাবে এগিয়ে থাকায় বাইডেন বেশ স্বস্তিতে ছিলেন, কিন্তু এখন সে স্বস্তিভাব কিছুটা হলেও বদলে গেছে। গত সোমবার থেকে এই রাজ্যে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে আগাম ভোট দেওয়া শুরু হয়েছে, প্রাথমিক হিসাব অনুসারে রিপাবলিকানরা বিপুল সংখ্যায় ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট দেওয়া শুরু করেছেন। শুধু শ্বেতকায় নয়, এই রাজ্যের ডানঘেঁষা কিউবান ভোটারদের অধিকাংশ ট্রাম্পের পক্ষেই ভোট দেবেন বলে ভাবা হচ্ছে। ডেমোক্র্যাটরা অবশ্য দাবি করছেন, গত বছরের ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর পুয়ের্তোরিকো থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ এখানে আশ্রয় নিয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশ বাইডেনের পক্ষেই ভোট দেবেন।

ডেমোক্র্যাটদের জন্য একটি উদ্বেগের কারণ, পর্যাপ্তসংখ্যক আফ্রিকান-আমেরিকান ও হিস্পানিক ভোটার এখন পর্যন্ত আগাম ভোটের ব্যাপারে তেমন উৎসাহ দেখাচ্ছে না। ২০১৬ সালে আফ্রিকান-আমেরিকানদের অনুপস্থিতির কারণেই হিলারি এই রাজ্য হারিয়েছিলেন বলে ভাবা হয়। অবস্থা সামাল দেওয়ার জন্য বাইডেন শিবির তাদের প্রধান নির্বাচনী অস্ত্র সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে প্রচারণার কাজে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত শনিবার তিনি নর্থ ফ্লোরিডার আফ্রিকান-আমেরিকানদের সঙ্গে এক নির্বাচনী বৈঠকে ভাষণ দেন। তাঁর মূল বক্তব্য ছিল, বিলম্ব না করে এখনই ভোট দিন। ফ্লোরিডা জিতেছি জানলে এই নির্বাচনের ফলাফল জানার জন্য আমাদের বসে থাকতে হবে না।

জো বাইডেনের জন্য ফ্লোরিডা গুরুত্বপূর্ণ, তবে এই অঙ্গরাজ্য ছাড়াও তাঁর পক্ষে ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট অর্জন সম্ভব। ফ্লোরিডার চেয়েও তাঁর জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ ডেমোক্র্যাটদের ‘নীল দেয়াল’ হিসেবে পরিচিত পেনসিলভানিয়া, মিশিগান ও উইসকনসিন। গত নির্বাচনে এই তিন রাজ্যেই অল্প ভোটের ব্যবধানে ট্রাম্প জয়লাভ করে বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন। বাইডেন এই মুহূর্তে এখানে ট্রাম্পের তুলনায় নিরাপদ ব্যবধানে এগিয়ে। ২০১৬ সালে এই তিন রাজ্যে নিজের জয়ের ব্যাপারে হিলারি এতটাই নিশ্চিত ছিলেন যে তিনি সেখানে কার্যত কোনো নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেননি। বাইডেন অবশ্য সে ভুল করছেন না।

সিনেট নিয়ে ট্রাম্পের উদ্বেগ

তিনি নির্বাচনে জিতবেন, ট্রাম্প এ ব্যাপারে গভীর আস্থা ব্যক্ত করলেও সাম্প্রতিক সময়ে তিনি ঠাট্টাচ্ছলে পরাজয়ের সম্ভাবনার প্রতিও ইঙ্গিত করেছেন। একাধিক নির্বাচনী সভায় তিনি পরিহাস করে বলেছেন, বাইডেন আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে দুর্বল প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী, তাঁর হাতে যদি পরাজিত হন, তাহলে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়া ছাড়া তাঁর জন্য অন্য কোনো পথ থাকবে না।

ঠাট্টা করেই বলা, কিন্তু ট্রাম্প পরাজয়ের সম্ভাবনাও বিবেচনায় রাখছেন, এ কথা মনে করেন একাধিক ভাষ্যকার। সিনেটে রিপাবলিকানরা নিয়ন্ত্রণ হারাবে, এ কথাও ট্রাম্প বলা শুরু করেছেন। একাধিক সংবাদ সূত্রে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার ন্যাশভিলে এক তহবিল সংগ্রহ জমায়েতে ট্রাম্প বলেন, যাঁরা সিনেটের পুনর্নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন, তাঁদের অনেককে তিনি মোটেই পছন্দ করেন না। এদের কারও জন্য তিনি কোনোরকম প্রচারণায় অংশ নেবেন না, অন্য কোনোভাবে সাহায্যও করবেন না। অন্য কথায়, তাঁর সমর্থন ছাড়া এই সব রিপাবলিকান সিনেটরদের নিজেদের আসন ধরে রাখা অসম্ভব হবে। একই বৈঠকে ট্রাম্প অবশ্য প্রতিনিধি পরিষদ ফিরে পাওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

কোনো গোপন জরিপের ভিত্তিতে এমন তথ্য ট্রাম্প পেয়ে থাকলেও তাঁর উৎস তিনি খোলাসা করেননি। অধিকাংশ নির্বাচনী বিশেষজ্ঞরা অবশ্য মনে করেন, নভেম্বরের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা শুধু যে প্রতিনিধি পরিষদ ধরে রাখবে, তা–ই নয়, সম্ভবত তাদের সদস্যসংখ্যাও বৃদ্ধি করবে। জাতীয় পর্যায়ে ট্রাম্পের প্রতি অসন্তোষের কারণে সিনেট নির্বাচনেও প্রভাব পড়বে। এ মুহূর্তে ডেমোক্র্যাটরা সিনেটে অন্তত ১০টি আসনে জয়ের সম্ভাবনা দেখছে। বর্তমানে কংগ্রেসের এই উচ্চকক্ষ ৫৩ ও ৪৭ সদস্য এই অনুপাতে রিপাবলিকানদের অনুকূলে রয়েছে। তাদের সব চলতি আসন ধরে রাখার পাশাপাশি অতিরিক্ত চারটি আসন ফিরে পেলেই ডেমোক্র্যাটরা সিনেটের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাবে।