ফাহিম হত্যায় গ্রেপ্তার হ্যাসপিলের শৈশব সুখকর ছিল না

নিহত ফাহিম সালেহ। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া
নিহত ফাহিম সালেহ। ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া

বাংলাদেশের রাইড শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম পাঠাওয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী টাইরেস ডেঁভো হ্যাসপিলকে শৈশব ও কৈশোরে আত্মীয়দের বাড়ি এবং আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যেই ঘোরাঘুরি করে কাটাতে হয়েছে। নানা সমস্যা ও সংকট কাটাতে হয়েছে তাঁকে। হ্যাসপিল ছোট থাকার সময়ই মানসিক সমস্যার কারণে তাঁর মাকে পাগলা গারদে থাকতে হয়েছে।

নিজেকে হ্যাসপিলের আন্টি পরিচয় দেওয়া মারজোরি সাইন নামের এক নারী ‘নিউইয়র্ক ডেইলি নিউজ’-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

গ্রেপ্তার হ্যাসপিল এখনো নৃশংস এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে মুখ খোলেননি। আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের তদন্তের কোনো অগ্রগতির কথাও নিউইয়র্ক পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি। এর মধ্যেই মারজোরি সাইন নামের হ্যাসপিলের এই নিকাটাত্মীয় হ্যাসপিলকে নিয়ে মুখ খুললেন।

৫২ বছর বয়সী মারজোরি সাইন বলেন, হ্যাসপিল শান্ত ছেলে ছিলেন। কোনো সময় বিরক্তিকর হলেও কখনো তাঁর মধ্যে সহিংসতা দেখা যায়নি। তাঁর শৈশব মোটেও সুখকর ছিল না। তাঁকে আত্মীয়দের ঘর ও আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যেই ঘোরাঘুরি করতে হয়েছে। তিনি মনে করেন, হ্যাসপিল সম্পর্কে পুলিশ কোনো ভুল করছে।

মারজোরি সাইন জানিয়েছেন, হ্যাসপিল যখন ছোট, তখন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে তাঁর মাকে পাগলা গারদে যেতে হয়েছে। তখন ভ্যালি স্ট্রিম এলাকায় হ্যাসপিল তাঁর নানির আশ্রয়ে ছিলেন। তাঁর ১২ বছর বয়সে নানিও মারা যান। এর পরই মারজোরি সাইনের কাছে হ্যাসপিলের আশ্রয় হয়। কিন্তু দিনে দিনে অবাধ্য হয়ে ওঠেন হ্যাসপিল। এ কারণে ১৭ বছর বয়সে মারজোরি তাঁকে একটি ফোস্টার (পালিত) কেয়ার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে দেন। এ নিয়ে মারজোরি আদালতেও গিয়েছিলেন। আদালতকে তিনি জানিয়েছিলেন, তিনি আর হ্যাসপিলকে লালনপালন করতে পারছেন না। তখনই হ্যাসপিলের সঙ্গে আদালতে তাঁর শেষ দেখা হয়। এর পরের বছর হ্যাসপিলের বাবাও মারা যান। সর্বশেষ হ্যাসপিল ব্রুকলিনের প্রস্পেক্ট পার্ক এলাকায় বসবাস করতেন।

ফাহিম সালেহ হত্যাকাণ্ডের পর এবং গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত হ্যাসপিলকে নিজের মতোই চলাফেরা করতে দেখা গেছে। গ্রেপ্তার হওয়ার আগেও তিনি পার্টি বেলুন কিনেছেন। তাঁকে গ্রেপ্তারের পর নিউইয়র্ক পুলিশের একজন কর্মকর্তা মন্তব্য করেছেন, এই লোকটি (হ্যাসপিল) আমেরিকার নতুন ধরনের সাইকো।

১৩ জুলাই বেলা ১টা ৪০ মিনিটে ফাহিম যখন লিফটে ওঠেন, তখন এক ব্যক্তিও তাঁর পিছু নিয়ে দ্রুত লিফটের ভেতর ঢুকে পড়েন। তদন্তকারীরা বলছেন, ওই ব্যক্তিই টাইরেস ডেঁভো হ্যাসপিল। তাঁর সঙ্গে থাকা ব্যাগে ইলেকট্রিক করাত ছিল বলে তাঁদের ধারণা। লিফটের ভেতরের সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ফাহিম ওই ব্যক্তিকে কিছু জিজ্ঞেস করছেন। এরপর কিছু কথা বিনিময় হতে দেখা গেছে দুজনের মধ্যে। পর মুহূর্তে ফাহিমকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় দেখাচ্ছিল।

গ্রেপ্তার হওয়া টাইরেস ডেঁভো হ্যাসপিল। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া

ফাহিম লিফট থেকে ঘরের ভেতরে পা রাখতেই মাস্ক পরিহিত ওই ব্যক্তি ফাহিমকে আক্রমণ করেন। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, টেজার দিয়ে পেছন থেকে আঘাতের পর ফাহিম লিফট থেকে বের হতেই সামনের দিকে পড়ে যান। এরপর লিফটের দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সিসিটিভির ফুটেজ আর রেকর্ড হয়নি। তদন্তকারীরা মনে করেন, এরপরই হ্যাসপিল ছুরিকাঘাত করে ফাহিমকে হত্যা করেন। পরে হ্যাসপিল কার সার্ভিস ডেকে হোম ডিপোয় চলে যান। কার সার্ভিসের সেই পেমেন্ট তিনি পরিশোধ করেছেন ফাহিমের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে। হোম ডিপো থেকে কিছু ক্লিনিং আইটেমও কেনেন হ্যাসপিল।

ফাহিমের অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের লিফটের সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখা যায়, পরদিন ১৪ জুলাই দুপুরে আবার ফিরে আসেন হ্যাসপিল। সঙ্গে ছিল রিচার্জেবল ভ্যাকুম। পুলিশের মতে, ভ্যাকুমটি হত্যার পর লক্ষণ মুছে ফেলার চেষ্টায় ব্যবহার করা হয়েছিল।

পুলিশের ধারণা, ১৪ জুলাই দুপুরে ইলেকট্রিক করাত ব্যবহার করে ফাহিমের দেহ খণ্ড খণ্ড করেন হ্যাসপিল। এ সময় ফাহিমের বোন অ্যাপার্টমেন্টের দরজা নক করেন। তিনি পুলিশকে ‘ওয়েলফেয়ার চেকের’ (নিকটাত্মীয় বা প্রতিবেশীর অপমৃত্যু হয়েছে এ রকম আশঙ্কায় পুলিশের সহায়তা চাওয়া) অনুরোধ জানান। তবে পুলিশ আসার আগেই ভবনের পেছনের সিঁড়ি দিয়ে হ্যাসপিল পালিয়ে যান। এরপরে পুলিশ আসে।

এখন পর্যন্ত ঘটনার বিবরণে এমন তথ্যই জানা গেছে পুলিশের পক্ষ থেকে। ক্রেডিট কার্ডের লেনদেনের সূত্র ধরেই ১৭ জুলাই প্রায় এক মাইল দূরের একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে টাইরেস ডেঁভো হ্যাসপিলকে গ্রেপ্তার করা হয়। জামিন না দিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। হ্যাসপিল এখনো কোনো তথ্য দেননি। তবে তিনি নিজেকে নিরপরাধ বলে দাবি করছেন।