সব লোকই হয়তো জীবনে সফল হতে চায়। কেউ হয়তো অনেক ধনী হয়ে, কেউ বিখ্যাত হয়ে সবার কাছে গণ্য হতে চান ‘নায়ক’। এভাবে বিশ্বের শীর্ষ ক্ষমতাধর পদ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদেও বসতে চান অনেক মানুষ। তবে অনেকের চাওয়া, আর অনেকের চেষ্টার মধ্য তফাত থাকে। কঠিন পথ মাড়াতে চান না অনেকেই। কিন্তু এবার ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকেই ইতিমধ্যে ১৬ জন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার অভিলাষ প্রকাশ করেছেন। পাইপলাইনে রয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন শীর্ষ রাজনীতিক। তাঁরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রচারণাও শুরু করেছেন। একই বক্তৃতার চর্বিতচর্বণ শত শত জায়গায় বিলি করতে করতে গিয়ে তাঁদের উদ্যমে ঘাটতি চোখে পড়ে কদাচিৎ। এত প্রেরণা তাঁরা পান কোথা থেকে?
যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞানের অধ্যাপক রবার্ট সাপোলস্কি দিয়েছেন এর উত্তর। তিনি বলেন, জীবনে ধনী হওয়ার জন্য লটারি কেনা, চলচ্চিত্রে অডিশন দেওয়া, চাকরির জন্য সাক্ষাৎকার দেওয়া বা মার্কিন প্রেসিডেন্ট হতে চেয়ে প্রচারণা—সব ঘটে একই জীববৈজ্ঞানিক কারণে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হতে চাওয়ার জন্য হয়তো কিছু বাহ্যিক প্রেরণা কাজ করছে। যেমন ট্রাম্পকে হারাতে হবে, আমেরিকানদের জীবনমান উন্নত করতে হবে, রাজনৈতিক সংস্কৃতির উন্নতি ঘটাতে হবে প্রভৃতি। তবে অভ্যন্তরীণ প্রভাবকও একটি বড় প্রভাবক এখানে। মস্তিষ্কের একটি বিশেষ রাসায়নিক ক্রিয়া রয়েছে এর পেছনে, যার নাম মেজোলিম্বিক ডোপামিন সিস্টেম।
মস্তিষ্কের কোষ নিউরনে নিঃসরণ হয় ডোপামিন নামের একটি রাসায়নিক পদার্থ, যা মানুষসহ স্তন্যপায়ী প্রাণীদের সুখের অনুভূতি তৈরির প্রধান কারণ। প্রাথমিকভাবে এটি মানুষ ও অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে একই রকম। তবে মানুষের মধ্যে উচ্চস্তরে কিছু ভিন্নতা লক্ষ করা যায়। সাপোলস্কি বলেন, যখন কাজে পুরস্কারের নিশ্চয়তা থাকে, তখন সেই কাজটি করতে মানুষসহ অন্যান্য প্রাণী প্রণোদনা বোধ করে। এর কারণ, ডোপামিন তাদের মস্তিষ্কে পুরস্কার প্রাপ্তির সুখ মনে করিয়ে দিয়ে প্রণোদনা জোগায়। সাপোলস্কি বলেন, ডোপামিন পুরস্কার পাওয়ার মুহূর্তে নিঃসরিত হয় না। এটি হয় সুখের পূর্বাভাষ থেকে।
তবে বানর বা গবেষণাগারের ইঁদুরের চেয়ে মানুষের ভিন্নতা হলো, অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীতে ভবিষ্যতে পুরস্কার দেওয়া হবে, এমন নিশ্চয়তায় ডোপামিন নিঃসরণ হয় না। কারণ ওই সব প্রাণী নগদ প্রাপ্তি ছাড়া কাজে খুব কমই উদ্বুদ্ধ হয়। কিন্তু মানুষ মস্তিষ্ককে বোঝাতে পারে, পুরস্কার আসবে, তবে পরে। এমনকি মৃত্যুর পরও পুরস্কার আসবে বলে মস্তিষ্ককে বোঝাতে পারে মানুষ। অন্যদিকে, সফলতার সম্ভাবনা যেখানে ১৬তে মাত্র ১ ভাগ, এমন পথে অন্যান্য প্রাণী খুবই কম হাঁটে। মানুষ নিজের মস্তিষ্ককে মিথ্যামিথ্যি বোঝাতে পারে, হয়তো আমি ছাড়া আর কেউ সফল হবে না। দীর্ঘ সময় প্রাপ্তি না থাকলেও মানুষ নিজের মস্তিষ্ককে বোকা বানাতে পারে।