আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করলেন নিউইয়র্ক নগরীর মেয়র বিল ডি ব্লাজিও। ১৬ মে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করেন তিনি। দেশের সবচেয়ে বড় শহরের মেয়র হিসেবে নিজের প্রগতিশীল ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন বলে জানান। এই নিয়ে ডেমোক্রেটিক দল থেকে ২৪ জন প্রার্থিতা ঘোষণা করলেন।
নির্বাচনী প্রচারে ডি ব্লাজিও মূল থিম করছেন ‘ওয়ার্কিং পিপল ফার্স্ট’কে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি নিয়ে প্রচার চালান। তারই প্রতিক্রিয়া বলা যায় ডি ব্লাজিওর এই ‘শ্রমজীবী প্রথম’ নীতিকে।
ডেমোক্রেটিক দল থেকে ২৪তম প্রার্থী হিসেবে ডি ব্লাজিও ১৬ মে এক ভিডিও বার্তার মাধ্যমে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করেন। এতে তিনি আয় বৈষম্য নিরসনের কথা বলেন। ২০১৩ সালে নিজের প্রথম মেয়র নির্বাচনের সময়ও ব্লাজিও এই আয় বৈষম্য নিরসনের প্রতিশ্রুতিকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। এবারও তিনি ওই একই অবস্থান নিলেন। এটি তাঁকে একই সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের মূল ব্যর্থতাকে সামনে আনতে এবং নিজ দলের জনপ্রিয় বাম নেতৃত্বকে মোকাবিলায় সহায়তা করবে।
ওই ভিডিও বার্তায় ডি ব্লাজিও বলেন, ‘এই দেশে প্রচুর অর্থ রয়েছে; কেবল তা ভুল হাতে রয়েছে। এই দেশের প্রতিটি অঞ্চলের মানুষের জীবন হয় থমকে গেছে নয়তো পেছনের দিকে যাচ্ছে। কিন্তু ধনীরা ধনীই হচ্ছে। আমেরিকার শ্রমজীবীরা আরও অনেক কিছু পাওয়ার অধিকার রাখে। আমরা এটি করতে পারব। কারণ, আমেরিকার সবচেয়ে বড় ও কঠিন শহরে আমরা এটি করে দেখিয়েছি।’
এ সম্পর্কিত রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিল ডি ব্লাজিও বর্তমানে দ্বিতীয় মেয়াদে নিউইয়র্ক নগরীর মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন। বিভিন্ন সময় আলোচনায় উঠে এলেও এ রাজনীতিক জাতীয় পর্যায়ে নিজেকে তেমন দৃঢ় ভিতের ওপর দাঁড় করাতে পারেননি। ডেমোক্রেটিক দলের প্রগতিশীল একজন নেতা হিসেবেই ডি ব্লাজিওর পরিচিতি। কিন্তু জাতীয় পর্যায়ে একই ঘরানার নেতা হিসেবে বার্নি স্যান্ডার্স ও এলিজাবেথ ওয়ারেন অনেক বেশি জনপ্রিয়। স্যান্ডার্সের জনপ্রিয়তার ধার গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেই আমেরিকার জনগণ দেখেছে। আর কিছুদিন আগে এলিজাবেথ ওয়ারেন শিক্ষাঋণ মওকুফসহ বিভিন্ন প্রস্তাব এনে আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছেন। এখন ডি ব্লাজিও এই জনপ্রিয়তায় কতটা ভাগ বসাতে পারেন, তাই দেখার বিষয়।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পর আগামী সপ্তাহান্তেই ব্লাজিও আইওয়া ও সাউথ ক্যারোলাইনা ভ্রমণে বের হচ্ছেন। তার আগে প্রার্থী হিসেবে নিজের যোগ্যতা প্রমাণে তুলে ধরেছেন প্রশাসক হিসেবে নিজের গৃহীত বিভিন্ন প্রগতিশীল পদক্ষেপের কথা। এর মধ্যে সবার জন্য প্রি-কিন্ডারগার্টেন, ঘণ্টাপ্রতি ন্যূনতম মজুরি ১৫ ডলার নির্ধারণ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। একই সঙ্গে তিনি বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দৃঢ়তার সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
অবশ্য ব্লাজিওর এ প্রার্থিতা ঘোষণায় চুপ করে থাকার লোক নন ট্রাম্প। ঠিকই সময় বের করে দিয়েছেন মোক্ষম টুইট। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘আমেরিকার সবচেয়ে বাজে মেয়র ডি ব্লাজিও। তিনি একটি তামাশার মতো, তবে যদি কেউ উচ্চ কর ও অপরাধ একই সঙ্গে পছন্দ করে, তবে তিনি তাদের লোক। নিউইয়র্ক তাঁকে ঘৃণা করে।’
নিউইয়র্কের মেয়র হিসেবে ব্লাজিও দ্বিতীয় ব্যক্তি, যিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থিতা ঘোষণা করলেন। এর আগে ২০০৮ সালে সাবেক মেয়র রুডি গিলিয়ানি প্রার্থী হয়েছিলেন। তবে কিছুই করতে পারেননি। আর এবার আরেক সাবেক মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ প্রার্থী হতে পারেন শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত গত মার্চে তিনি এমন কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়ে দেন। তবে একই সঙ্গে জানান যে, দলের প্রগতিশীল নেতৃত্ব, যারা প্রার্থী হবেন, তাঁদের তিনি সহযোগিতা করবেন। সে ক্ষেত্রে ব্লুমবার্গের কাছ থেকে সহযোগিতা আদায় করাটা ব্লাজিওর জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ ব্লুমবার্গের অনেক নীতির সমালোচক হিসেবে তাঁর যেমন পরিচিতি রয়েছে, তেমনি অনেক প্রগতিশীল ডেমোক্র্যাটই এবার প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ব্লাজিওকে এই সবার সঙ্গেই লড়তে হবে। চূড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়াটাও তাঁর জন্য কঠিন হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তাঁর সামনে অন্যতম বাধা হয়ে দাঁড়াবেন রক্ষণশীল অংশ এবং জো বাইডেনের মতো তারকা রাজনীতিকেরা।
এখন পর্যন্ত কোনো মেয়র প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে জয় পাননি। ৫৮ বছর বয়সী ডি ব্লাজিও যদি তা করতে সক্ষম হন, তবে তা নিশ্চিতভাবেই একটি ইতিহাস হবে। তবে সে জন্য তাঁকে জনমত জরিপের ফল উল্টে দিতে হবে। একই সঙ্গে তহবিল সংগ্রহ নিয়ে যে সমালোচনা রয়েছে তাঁর, তা মোকাবিলা করে একটি বড় তহবিল গঠন করতে হবে। অবশ্য গত ফেব্রুয়ারি থেকেই তিনি প্রাক-প্রচার কার্যক্রম শুরু করেছেন।