আটলান্টিক সিটিতে আগামী ৪ জুন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সিটি কাউন্সিলের প্রাথমিক নির্বাচন। এ নিয়ে এখন সরগরম আটলান্টিক সিটি। সিটি কাউন্সিলের প্রাথমিক নির্বাচনের ফলাফল নিজেদের অনুকূলে আনতে নির্বাচনী মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন অভিবাসী বাংলাদেশি প্রার্থীরা।
আটলান্টিক সিটির ছয়টি ওয়ার্ডের মধ্যে দুটি ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন। এই চার প্রবাসী বাংলাদেশিই ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে প্রাথমিক নির্বাচনী যুদ্ধে নেমেছেন। লক্ষ্য আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় চূড়ান্ত নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির একমাত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিভিন্ন দলে–উপদলে ভাগ হয়ে বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। এ নিয়ে প্রবাসীদের মধ্যে মেরুকরণও পরিলক্ষিত হচ্ছে।
আটলান্টিক সিটি কাউন্সিলের প্রাথমিক নির্বাচনের লড়াইয়ে নামা চার বাংলাদেশি অভিবাসী হলেন—মো. হোসাইন মোরশেদ, সুরজিৎ চৌধুরী মিলটন, সাঈদ মু. দোহা ও সোহেল আহমদ।
মো. হোসাইন মোরশেদ
আটলান্টিক সিটির চতুর্থ ওয়ার্ড থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বাংলাদেশের ভোলা জেলার বাসিন্দা মো. হোসাইন মোরশেদ। ৪৫ বছর বয়সী রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ী মো. হোসাইন মোরশেদ ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সিটি কাউন্সিলের নির্বাচনে চতুর্থ ওয়ার্ড থেকে ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী নির্বাচনে তিনি আটলান্টিক সিটি ডেমোক্র্যাট কমিটি পারসনদের সর্বাধিক ভোট পেয়েছেন। তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে, সিটি হলে নতুন নেতৃত্ব আনা, চতুর্থ ওয়ার্ডের বন্যা সমস্যার স্থায়ী সমাধান, তাঁর নির্বাচনী এলাকার উন্নয়ন, সিটির কার্যক্রমে সততা-যোগ্যতা ও বিশ্বস্ততা আনা। এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে তিনি আগামী ৪ জুন এ–৭ কলামে ভোট দিয়ে তাঁকে জয়যুক্ত করার আহ্বান জানান।
সুরজিৎ চৌধুরী মিলটন
আটলান্টিক সিটির চতুর্থ ওয়ার্ড থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলার সুরজিৎ চৌধুরী মিলটন। আটলান্টিক কাউন্টি নির্বাচন কমিশনে কর্মরত সুরজিৎ চৌধুরী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৪১ বছর বয়সী সুরজিৎ চৌধুরীর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে, ট্যাক্সের হার কমানো, সিটির খরচ কমানো, সিটির অর্থনৈতিক উন্নয়ন বৃদ্ধি ও চাকরির সুযোগ সৃষ্টি, নির্বাচনী এলাকা নিরাপদ রাখা ও রাস্তাঘাট পরিচ্ছন্ন রাখা, আটলান্টিক সিটিকে ‘সবুজ ও স্মার্ট সিটি’ হিসেবে গড়ে তোলা, শিশু-কিশোরদের জন্য ‘ষ্টেম’ শিক্ষাব্যবস্থা চালু, তরুণদের জন্য উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণ, ‘নীল অর্থনীতি’ ও ক্ষুদ্র ব্যবসার সম্প্রসারণ, বয়স্ক নাগরিকদের জন্য কল্যাণমূলক কর্মসূচি গ্রহণ। এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে তিনি আগামী ৪ জুন প্রাথমিক নির্বাচনে তাঁকে বি-৭ কলামে ভোট দিয়ে জয়ী করতে সবার প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
সাঈদ মু. দোহা
আটলান্টিক সিটির চতুর্থ ওয়ার্ড থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের ৩৬ বছর বয়সী সাঈদ মু. দোহা। জাতিসংঘের মাইগ্রেশন বিশেষজ্ঞ সাঈদ অনলাইন ইংরেজি পোর্টাল কাক আটলান্টিক–এর সম্পাদক। এ ছাড়া তিনি ইয়ুথ লিডারশিপ প্রোগ্রামের উদ্যোক্তা। তিনি দুই বছর ধরে আমেরিকায় বসবাসরত বাংলাদেশি আমেরিকান তরুণদের প্রশিক্ষণ দিয়ে জাতিসংঘের বিভিন্ন সম্মেলনে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিচ্ছেন। সাঈদ জাতিসংঘের মাইগ্রেশন সংক্রান্ত সংস্থা এসএসপির প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। সাঈদ জাতিসংঘের আমন্ত্রণে নিউইয়র্ক, জেনেভা ও ভিয়েনা সম্মেলনে যোগ দেন। তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে তরুণদের জন্য যথাযথ শিক্ষা ও নেতৃত্ব সৃষ্টি, কর হ্রাস, নিজের নির্বাচনী এলাকা নিরাপদ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, বন্যা প্রতিরোধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ, অভিবাসীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করা ইত্যাদি। এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে তিনি আগামী ৪ জুন প্রাথমিক নির্বাচনে ই-৭ কলামে সবাইকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
সোহেল আহমদ
আটলান্টিক সিটির ষষ্ঠ ওয়ার্ড থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৫০ বছর বয়সী মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার সোহেল আহমদ। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব আটলান্টিক কাউন্টির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া তিনি কমিউনিটির বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আগামী সিটি কাউন্সিলের নির্বাচনে ষষ্ঠ ওয়ার্ড থেকে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাথমিক নির্বাচনে তিনি ডেমোক্র্যাট কমিটি পারসনদের সর্বাধিক ভোট পেয়েছেন। তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে সিটি হলে নতুন নেতৃত্ব আনয়ন, গঠনমূলক মূল্যবোধ, সিটির কার্যক্রমে সততা-শুদ্ধতা ও বিশ্বস্ততা আনয়ন। এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে তিনি আগামী ৪ জুন প্রাথমিক নির্বাচনে এ-৬ কলামে তাঁকে ভোট দিতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
আটলান্টিক সিটি কাউন্সিলের প্রাথমিক নির্বাচনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি কমিউনিটিতে বেশ প্রশংসিত হচ্ছে। তবে চতুর্থ ওয়ার্ড থেকে একাধিক বাংলাদেশি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় বাংলাদেশিদের ভোট ভাগাভাগি হয়ে যাচ্ছে। তাই প্রবাসী বাংলাদেশি প্রার্থীর অনুকূলে ফলাফল আসার ব্যাপারে সচেতন মহলের মনের কোনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অবশ্য প্রার্থীরা নিজেদের বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এখন দেখার বিষয়, কার ভাগ্যে শিকে ছিঁড়ে।
অন্যদিকে ষষ্ঠ ওয়ার্ড থেকে একজন মাত্র বাংলাদেশি প্রার্থী হওয়ায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিরুদ্ধে তাঁর বিজয়ের ব্যাপারে বেশ আশাবাদী বাংলাদেশিরা। আর প্রবাসী বাংলাদেশিদের সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটবে আগামী ৪ জুন রাতে। সে পর্যন্ত অপেক্ষা সবার।