নিউইয়র্কে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মৃত্যু হওয়া প্রবাসী বাংলাদেশি কামাল আহমেদকে নিয়ে শোক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস। নিউইয়র্ক টাইমস করোনায় সংক্রমিত হয়ে মৃত্যু হওয়া কিছু বর্ণাঢ্য ব্যক্তির অবিচুয়ারি প্রকাশ করে। ২০ মে নিউইয়র্ক টাইমস–এ যেসব ব্যক্তির জীবন বর্ণনা প্রকাশ পায়, তার মধ্যে বাংলাদেশি কামাল আহমেদের সংবাদও রয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমস–এ প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল ‘কামাল আহমেদ, হু হেল্পড বাংলাদেশি-আমেরিকানস, ডাইস অ্যাট ৬৯’।
কামাল আহমেদ আমেরিকায় বাংলাদেশি কমিউনিটিতে প্রিয় ব্যক্তি ছিলেন। নিউইয়র্ক বাংলাদেশ সোসাইটির দুবারের নির্বাচিত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে ৫ এপ্রিল তিনি এল্মহার্স্ট হাসপাতালে মারা যান। তাঁর মৃত্যুত আমেরিকার বাংলাদেশি কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মানবতার কল্যাণে কাজ করা এ মানুষটির যাপিত জীবন ছিল বৈচিত্র্যময়।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ম্যানহাটনের জাতিসংঘ প্লাজার মিলেনিয়াম হিলটন হোটেলে কামাল আহমেদ ক্যাটারিংয়ের কাজ করেছেন যুগ যুগ ধরে। বিশিষ্টজন, নানা দেশের কূটনীতিক, প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীরা ছিলেন তাঁর গ্রাহক। কাজের বাইরে মিস্টার আহমেদের পরিচয়; তিনি ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ থেকে অভিবাসন নিয়ে আমেরিকায় আসেন। এখানে স্বদেশি মানুষের সাহায্যে সব সময় এগিয়ে এসেছেন তিনি। বাংলাদেশ সোসাইটিদে দুবার নির্বাচিত নেতা হয়েছেন কামাল আহমেদ। সংগঠনটির রয়েছে ২৮ হাজার নিবন্ধনভুক্ত সদস্য। সংগঠনের মাধ্যমে তিনি তাঁর দেশ থেকে আসা নতুন অভিবাসীদের কাজ, বাসা ইত্যাদি পেতে সহায়তা করেন। বিশাল এ নগরে এসে নতুনরা হাবুডুবু খায়। বিচিত্র এ নগরের ভিন্নতায় স্বদেশিরা তখন ঠাঁই খুজে পায় কামাল আহমেদের সংস্পর্শে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি কামাল আহমেদ তাঁর সংগঠনের সদস্যদের অন্তিম সংস্কারে সাহায্য করেছেন। ইতিমধ্যে কোভিড-১৯ এ মৃত্যু হয়েছে এ সংগঠনের অনেক সদস্যের। নগরীর উপচে পড়া ফিউনারেল পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মৃতদের দাফনে অনেক মানুষের সামর্থ্যও ছিল সীমিত। মৃত সদস্যদের লং আইল্যান্ড এবং নিউজার্সিতে সংগঠনের নিজস্ব কবরস্থানে সমাহিত করার ব্যবস্থা করেন কামাল আহমেদ। তিনি তাঁর এল্মহার্স্ট, কুইন্সের বাসার পাশের একটি হাসপাতালে ৫ এপ্রিল শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। তিনি কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত হয়ে মারা যান বলে তাঁর মেয়ে রোমানা আহমেদ জানিয়েছেন। গৃহিণী মা সমছুন খাতুন এবং স্কুলশিক্ষক বাবা জিয়া আহমেদের ঘরে কামাল উদ্দিন আহমেদের জন্ম ১৯৫১ সালের ১ জানুয়ারি বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় জেলা সিলেটে।
সিলেটের মফস্বল শহর বিয়ানিবাজারে কামাল আহমেদের বেড়ে ওঠা। বাবার সঙ্গে আমেরিকায় অভিবাসন নেওয়ার আগে দেশে কৃষি বিষয়ে শিক্ষা নিয়েছিলেন তিনি। হিলটন হোটেলে বাস বয় হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন কামাল আহমেদ। পরে একই হোটেল চেইনে ব্যাঙ্কুয়েট কর্মী হিসেবেও কাজ করেন। ১৯৮২ সালে তিনি আমেরিকার নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। প্রখ্যাত অ্যাটর্নি এইচ ব্রুস ফিসারের অফিস ম্যানেজার হিসেবেও তিনি কাজ করেছন কুইন্সে। সেখানে কর্মরত অবস্থায় বাংলাদেশি-আমেরিকান নানা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হন।
কামাল আহমেদ প্রবাসী বিয়ানিবাজারবাসীর একটি সংগঠনের নেতৃত্ব দেন। পরে তিনি বৃহৎ জালালাবাদ অঞ্চলের প্রবাসী সংগঠনের প্রধান হয়েছিলেন। শেষ পর্যায়ে তিনি বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি নির্বাচিত হন।
বাংলাদেশ সোসাইটির সদস্য আজিমুর রহমান। তিনিও আলগনকুইন হোটেলের ব্যাঙ্কুয়েট কর্মী। বাংলাদেশে থাকার সময় থেকে কামাল আহমেদের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ছিল। তিনি বলেন, কামাল আহমেদ সোসাইটিতে ভাষা ও সংস্কৃতির ক্লাস চালু করেছিলেন। যাতে এখানে বেড়ে ওঠা প্রজন্ম নিজ দেশের কৃষ্টি ও ঐতিহ্যকে ব্যাপকভাবে বুঝতে এবং ধারণ করতে পারে। ১৯৮০ সাল আফসারি বেগমের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। স্ত্রী, মেয়ে, পাঁচ ভাই, পাঁচ বোন ও এক নাতি রেখে পরপারে চলে গেছেন কামাল আহমেদ।
নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাইয়ে তাঁকে সোসাইটির সদস্যদের জন্য নির্ধারিত কবরস্থানের পাশেই সমাহিত করা হয়। সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রুহুল সিদ্দিকী বলেন, কামাল আহমেদের দাফনের সম্পূর্ণ খরচ বহন করেছেন তাঁর নিজ পরিবার। কারণ কামাল আহমেদ বলেছিলেন, ‘মারা গেলে আমি সোসাইটির অভাবগ্রস্তদের জন্য নির্ধারিত কোনো সুবিধা ব্যবহার না করা নিশ্চিত করে যাব।’