প্রত্যাশা থাকলেও নিউইয়র্ক নগরীর পাবলিক অ্যাডভোকেট পদে বাংলাদেশি হেলাল শেখ শেষ পর্যন্ত নির্বাচিত হতে পারেননি। নির্বাচনে শেষ হাসি হেসেছেন কাউন্সিল সদস্য জুমানি উইলিয়াম।
নিউইয়র্ক নগরীর বোর্ড অব ইলেকশনের তথ্যমতে, নির্বাচনে
বিজয়ী জুমানি উইলিয়াম পেয়েছেন ১ লাখ ২৯ হাজার ৫৫০ ভোট। হেলাল
শেখ পেয়েছেন ৪ হাজার ২৪৩ ভোট। প্রাপ্ত ভোটের হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায়
থাকা ১৭ প্রার্থীর মধ্যে হেলাল
শেখ ১২তম হয়েছেন। নির্বাচনে
বিজয়ী প্রার্থীর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কাউন্সিলম্যান এরিক উলরিচ পেয়েছেন ৭৪ হাজার ৬১ ভোট। সাবেক সিটি কাউন্সিলের স্পিকার মেলিসা মার্ক-ভিভারিটো ৪৩ হাজার ১১৯, অ্যাডমিনম্যান মাইকেল ব্ল্যাক ৩২ হাজার ৭৫, ও সিটি কাউন্সিলর ইয়েদ্যানিস রদ্রিগেজ ২৩ হাজার ৯৩৬ ভোট পেয়ে যথাক্রমে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম হয়েছেন। অন্য কোনো প্রার্থী ২০ হাজারের বেশি ভোট পাননি।
নিউইয়র্ক নগরীর পাবলিক অ্যাডভোকেট পদে বিশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২৬ ফেব্রুয়ারি। নগরীর পাবলিক অ্যাডভোকেট লেটিসা জেমস গত নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাটর্নি জেনারেল নির্বাচিত হওয়ায় এই শূন্য পদে নির্বাচন হয়। বিশেষ এ নির্বাচনে মোট ভোট পড়েছে ৩ লাখ ৯০ হাজার ৮১৩। নির্দলীয় এ নির্বাচনে পাবলিক অ্যাডভোকেট পদে বাংলাদেশি হেলাল শেখসহ লড়েছেন ১৭ জন।
এ নির্বাচনে কৃষ্ণাঙ্গ প্রার্থীদের মধ্যে জুমানি উইলিয়াম, মাইকেল ব্ল্যাক ও অ্যাটর্নি ডন স্মল আলোচিত প্রার্থী ছিলেন। সবশেষে নিউইয়র্ক টাইমসের সমর্থন নিয়ে এগিয়ে ছিলেন জুমানি। আমেরিকায় এশিয়ার আট দেশীয় প্রবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগঠন অ্যালায়েন্স অব সাউথ এশিয়ান আমেরিকান লেবারও (অ্যাসাল) আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন দিয়েছিল জুমানিকে।
নির্বাচনে পরাজিত হলেও হেলাল আবু শেখ তাঁকে সমর্থনের জন্য বাংলাদেশি কমিউনিটিসহ সব ভোটারকে বিশেষ কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
এদিকে মেয়র বিল ডি ব্লাজিও নিউইয়র্ক নগরীর পাবলিক অ্যাডভোকেট নির্বাচিত হওয়ায় জুমানি উইলিয়ামকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। জুমানি উইলিয়াম নিউইয়র্কে পরিচিত ও দীর্ঘ পরীক্ষিত অ্যাকটিভিস্ট। শিশু অবস্থায় টরেট ও দুর্বল মনোযোগ থাকা সত্ত্বেও গিফটেড ও টেলেন্ট স্কুল এবং ব্রুকলিন টেক স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। পরে ব্রুকলিন কলেজ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেছেন। টানা তিন মেয়াদ ধরে ব্রুকলিনের ৪৫ ডিস্ট্রিক্টে কাউন্সিল সদস্য হিসেবে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন জুমানি। এ পর্যন্ত তাঁর প্রস্তাবিত ৫০টিরও বেশি বিল আইনে পরিণত হয়েছে, যা সিটি কাউন্সিলের ইতিহাসে রেকর্ড। নাগরিক আন্দোলন করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন একাধিকবার। জুমানি প্রস্তাবিত একটি আইনে ভেটো দিয়েছিলেন তৎকালীন মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ। ওই আইনের ফলে গত ৫০ বছরের ইতিহাসে নিউইয়র্ক নগরী নিরাপদ নগরীর মর্যাদা পেয়েছে। যাকে তাকে যেখানে সেখানে থামিয়ে পুলিশি হয়রানি ও ৯/১১ হামলার পর মসজিদকে টার্গেট করাও বন্ধ হয়েছে এ আইনের মাধ্যমেই। জুমানি এর আগে অঙ্গরাজ্যের লেফটেন্যান্ট গভর্নর পদেও লড়েছেন। সে নির্বাচনেও তিনি নিউইয়র্ক টাইমস, বিভিন্ন ইউনিয়ন ও অ্যাডভোকেসি গ্রুপ এবং বার্নি স্যান্ডার্সসহ অনেক নির্বাচিত প্রতিনিধির সমর্থন পেয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক নগরীর পাবলিক অ্যাডভোকেট নগরীর বিভিন্ন এজেন্সির ওপর ‘ওয়াচ ডগ’ হিসেবে কাজ করেন। জনগণ ও নগর কাউন্সিলের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যম পাবলিক অ্যাডভোকেট অফিস। নিউইয়র্ক নগরীর মেয়রের পরই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ পাবলিক অ্যাডভোকেট। মেয়রের অবর্তমানে পাবলিক অ্যাডভোকেট ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমান মেয়র ডি ব্লাজিও ও সাবেক মেয়র ব্লুমবার্গও পাবলিক অ্যাডভোকেট ছিলেন।