পদ্মার ইলিশ বলে বিক্রি হচ্ছে অন্য দেশের মাছ

নিউইয়র্কে ইলিশ মাছ কিনতে গিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন বাংলাদেশি মার্কিনরা। ইলিশের মতো দেখতে মাছে পদ্মার ইলিশ লেবেল লাগিয়ে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে। উচ্চ মূল্য নিয়ে পদ্মার ইলিশ মনে করে কিনছেন গ্রাহকেরা। প্রতারকচক্র যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে থেকে আনা মাছ বাংলাদেশের পদ্মার ইলিশ বলে বিক্রি হচ্ছে। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের বাংলাদেশি গ্রোসারিগুলোতে এসব মাছ বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিগুলো বিদেশি মাছের ওপরের ব্যাগ পাল্টে নতুন ব্যাগে মাছ ভরে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে।

চড়া মূল্যে বিক্রি করা এসব ইলিশ মাছে দেশীয় স্বাদ ও গন্ধ নেই বললেই চলে। শুধু ইলিশ নয়—রুই, কাতল থেকে শুরু করে বেশির ভাগ বড় বড় মাছের ওপরের ব্যাগ পাল্টে দেওয়া হয়। নতুন করে এখানকার প্যাকেজ ও লেবেল লাগানো হয়। প্যাকেটের গায়ে বাংলাদেশের সুস্বাদু তাজা মাছ বলে বিক্রি করছে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বেশির ভাগ মাছের গায়ে বাংলায় লেখা আছে, বাংলাদেশের সুস্বাদু তাজা মাছ। অথচ এসব মাছ বাংলাদেশের নয়। চোখে দেখা যায় না, এমন ছোট করে আমদানির স্থান মিয়ানমার, থাইল্যান্ড অথবা পাকিস্তান লেখা থাকে। কই, শিং, পুঁটি মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের গায়েও সরাসরি বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা লেখা থাকে। অথচ এদের বেশির ভাগ মাছ ভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে।

জ্যাকসন হাইটসের একটি সদ্য খোলা সুপার মার্কেটে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী বলেন, এখানে বিক্রির জন্য তাজা বাংলাদেশি মাছ বিক্রির কথা বলা হলেও মাছগুলো বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা নয়। দু/চার রকমের ছোট মাছ ছাড়া বাকি মাছ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। তিনি আরও বলেন, পদ্মার বা চাঁদপুরের ইলিশ বলে যে সব মাছ বিক্রি হচ্ছে, সে সব মাছ মূলত মিয়ানমার বা থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা হয়।

এখানে মাছের ডিলাররা মিয়ানমারের লেবেল পাল্টে বাংলাদেশি লেবেলের ব্যাগ পরিয়ে বিক্রি করছে।

একজন গ্রোসারি কর্মচারী বলেন, বিক্রির পর মাছ খেয়ে গ্রাহকেরা আবার বাজার করতে এসে আমাদের কাছে জিজ্ঞেস করেন, বিক্রি করা মাছে দেশীয় মাছের ন্যায় স্বাদ–গন্ধ নেই কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে আমরা কখনো সত্য উত্তর দিতে পারি না।

খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের (এফডিএ) চোখ ফাঁকি দিয়ে এসব ডিলার ও সুপার শপগুলো দীর্ঘদিন ধরে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। সম্প্রতি একটি বাংলাদেশি মার্কিন মালিকানাধীন ডিস্ট্রিবিউটরের কয়েক প্রজাতির মাছ বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে এফডিএ। নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নিউইয়র্ক পোস্টসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে উঠে আসে। তখন বাজার থেকে মাছগুলো তুলে নেওয়া হয়।

তবে লেবেল পাল্টে এসব মাছ আবার বাজারে সরবরাহ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বাংলাদেশি মার্কিন একটি প্রতিষ্ঠান লেবেল পাল্টে চড়া দামে কথিত সেই ইলিশ মাছ বিক্রি করছে। ইলিশ মাছের পাউন্ড ৬ ডলার থেকে শুরু করে সাইজ অনুযায়ী ১৫ ডলার পর্যন্ত দাম লাগানো হয়েছে। অথচ এদের প্রতারণার বিষয়ে ভোক্তা অধিকার আইনে ৩১১ কল করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে প্রশাসন।

মাছ কিনতে আসা জ্যাকসন হাইটস এলাকার ইমতিয়াজ উদ্দিন অভিযোগ করেন, দু-এক মাস পর পর ইলিশ মাছ কিনি, কিন্তু দেশীয় মাছের ন্যায় কোন স্বাদ–গন্ধ পাই না। বিগত সময়ে কেনা মাছগুলোর স্বাদ ছিল অসাধারণ।

জ্যাকসন হাইসের মিনা বাজার সুপার মার্কেটের মালিক মাছুম মাছ বিক্রি প্রসঙ্গে বলেন, ‘ডিলাররা আমাদের যে মাছ দিয়ে যান, আমরা সেই মাছ বিক্রি করি। কিন্তু এগুলো যে বিদেশি মাছ বা বাংলাদেশি লেবেল লাগিয়ে বিক্রি করছে অথবা এই মাছগুলোর স্বাদ নেই, সে বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। কোথা থেকে ডিলাররা মাছ আনছে, সে বিষয়ে সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব তাদের।

আলবেনির দেশি সুপার মার্কেটের মালিক মো. ফারুক বলেন, ‘দেশি মাছ এখন তেমন একটা আমদানি হয় না। আমাদের বিদেশি মাছের ওপরই নির্ভর করতে হয়। তবে প্যাকেটের গায়ে বাংলা লেখা থাকায় অনেকেই মনে করেন, এগুলো বাংলাদেশ থেকে আসা মাছ।

বিদেশি মাছ বাংলাদেশি বলে চালিয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে একাধিক ডিলারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন প্রথম আলো উত্তর আমিরকার এই প্রতিবেদক। কিন্তু তারা এ বিষয়ে তাদের নাম প্রকাশ বা মন্তব্য জানাতে অপারগত প্রকাশ করেন।