ভোট বাতিলে পেন্সকে অবৈধ চাপ দিয়েছিলেন ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও মাইক পেন্স
ফাইল ছবি: রয়টার্স

২০২০ সালের নির্বাচনের ফলাফল বাতিলে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে অবৈধভাবে চাপ দিয়েছিলেন। একই উদ্দেশ্য হাসিলে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিল দাঙ্গার সময় পেন্সকে বিপদের মুখে ফেলেন ট্রাম্প। ক্যাপিটল হিল দাঙ্গার ঘটনা নিয়ে কংগ্রেসের শুনানিতে এ তথ্য উঠে এসেছে। খবর বিবিসির।

শুনানিতে পেন্সের সহযোগীদের বক্তব্য শোনেন আইনপ্রণেতারা। শুনানিতে তাঁরা জো বাইডেনের বিজয় প্রত্যাখ্যানে হোয়াইট হাউসের তখনকার তৎপরতার বিবরণ দেন।

শুনানি গ্রহণকারী কংগ্রেস প্যানেলের চেয়ারম্যান বেনি থম্পসন বলেছেন, ট্রাম্প তখন যে পরিকল্পনা আঁটছিলেন, তা ঠেকিয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র। কারণ, তখন ট্রাম্পের কাছে নত হতে অস্বীকার করেছিলেন পেন্স।

ক্ষমতা ধরে রাখতে ট্রাম্প তখন অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেছিলেন বলে অভিযোগ করেছে ক্যাপিটল হিলের দাঙ্গার ঘটনায় শুনানি জন্য গঠিত কংগ্রেস প্যানেল।

২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বাইডেন জয়ী হন। কিন্তু এ নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে পরাজয় মানতে অস্বীকৃতি জানান তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

বাইডেনের জয়ের সত্যায়নে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশন বসে। সত্যায়ন-প্রক্রিয়া ঠেকাতে ট্রাম্পের উসকানিতে তাঁর উগ্র সমর্থকেরা কংগ্রেস ভবনে (ক্যাপিটল হিল) সহিংস হামলা চালান। এতে পুলিশসহ কয়েকজন নিহত হন।

ক্যাপিটল হিলে ট্রাম্পের সমর্থকদের হামলার ঘটনা তদন্তে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কংগ্রেসে এ বিষয়ে শুনানি চলছে।

ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনায় কংগ্রেসের তদন্ত কমিটির তীব্র সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প। ডেমোক্রেটিক নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে ‘ক্যাঙারু কোর্ট’ হিসেবে অভিহিত করেছেন তিনি।

ট্রাম্পের ভাষ্য, ডেমোক্রেটিক শাসনে বিপর্যয় সৃষ্ট হয়েছে। আগামী নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচন সামনে রেখে এ বিপর্যয় থেকে দৃষ্টি সরাতে ক্যাপিটল হিলের ঘটনা নিয়ে শুনানির আয়োজন করা হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার তৃতীয় দিনের শুনানিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার ওপর গুরুত্ব দেয় প্যানেল। ট্রাম্প প্রকাশ্যে দাবি করেছিলেন, নির্বাচনের ফলাফলের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি কংগ্রেসে আটকে দেওয়ার ক্ষমতা ভাইস প্রেসিডেন্টের আছে। তবে ট্রাম্পের এ দাবি সঠিক নয় বলে জানান আইনজ্ঞ ও পেন্সের সহযোগীরা।

শুনানিতে পেন্সের তৎকালীন পরামর্শক গ্রেগ জ্যাকব বলেন, ‘আমাদের আইনের পর্যালোচনার পাশাপাশি ইতিহাস ও সাধারণ বিবেচনা বোধ এটা নিশ্চিত করে যে নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেওয়ার ক্ষমতা তাঁর (পেন্স) ছিল না।’

সাবেক রক্ষণশীল বিচারক ও পেন্সের আনুষ্ঠানিক সহযোগী মাইকেল লুটিং বলেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট যদি ট্রাম্পের আদেশ শুনতেন, তাহলে আমেরিকা সাংবিধানিক সংকটের মধ্যে পড়ত বলে তিনি মনে করেন।

গতকালের শুনানি একটি ভিডিও প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। ভিডিওতে বিক্ষোভকারীদের স্লোগান দিতে শোনা যায়, ‘মাইক পেন্সকে ফাঁসিতে ঝুলাও।’

বিক্ষোভকারীদের এমন স্লোগান দেওয়ার কিছুক্ষণ আগে হোয়াইট হাউসের বাইরে ট্রাম্প তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্সকে ‘সঠিক কাজটি’ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

আগের শুনানিগুলোতে প্যানেল বলে, দাঙ্গাকালে পেন্সের উদ্দেশে নিজ সমর্থকদের হুমকি দেওয়ার দৃশ্য টেলিভিশনে দেখতে পেয়েছিলেন ট্রাম্প। তখন তিনি এ হুমকির প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, পেন্স এ পরিণতির যোগ্য। ট্রাম্পকে এমন কথা বলতে শুনেছেন সে সময় তাঁর সঙ্গে থাকা সহযোগীরা।

প্যানেল সদস্যরা বলেন, পেন্সের হস্তক্ষেপ করার সাহস নেই বলে টুইট করে তাঁর চাপ অব্যাহত রাখেন ট্রাম্প। এমনকি ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে জানার পরও ট্রাম্প এমনটা করেছেন।

প্যানেল চেয়ারম্যান ও মিসিসিপি থেকে নির্বাচিত ডেমোক্রেটিক কংগ্রেসম্যান থম্পসন বলেন, মাইক পেন্স ‘না’ বলেছিলেন। তিনি চাপ প্রতিরোধ করেছিলেন। তিনি জানতেন, এটা অবৈধ। তিনি জানতেন, এটা ভুল। এ সাহস তাঁকে মারাত্মক বিপদের মধ্যে ফেলেছিল।

দাঙ্গাবাজরা যখন ক্যাপিটল হিলে হামলা চালায়, তখন কংগ্রেসের ভেতরের হলে ছিলেন পেন্স। গত বুধবার প্রকাশিত কিছু ছবিতে দেখা যায়, উন্মত্ত লোকজন যখন কংগ্রেস ভবনে হামলে পড়েন, তখন পেন্স ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা সিক্রেট সার্ভিসের এজেন্টদের সঙ্গে নিরাপদ আশ্রয় নিচ্ছেন।

গতকালের শুনানিতে ডেমোক্র্যাট সদস্য পিট এগুইলার বলেন, একপর্যায়ে পেন্সের সঙ্গে দাঙ্গাবাজদের দূরত্ব ছিল মাত্র ৪০ ফুট। ভিডিও সাক্ষ্যে ট্রাম্পের একাধিক সহযোগীকে বলতে শোনা যায়, দাঙ্গার দিন সকালে ফোনে পেন্সের সঙ্গে ট্রাম্পকে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় করতে শোনেন তাঁরা।

এক সহযোগী বলেন, ট্রাম্প পেন্সকে ‘ভিতু’ বলে অভিহিত করেন। এ কথা তিনি শোনেন। আরেক সহযোগী বলেন, ২০১৬ সালে পেন্সকে রানিংমেট হিসেবে বাছাই করা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল বলে ট্রাম্পকে মন্তব্য করতে শোনেন তিনি।