উত্তর আমেরিকার দেশ আমেরিকা এবং কানাডায় বিদ্বেষপ্রসূত (হেইট ক্রাইম) হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন দুই বাংলাদেশি। এঁদের মধ্যে নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে বরুণ চক্রবর্তী (৫২) এবং কানাডার অটোয়ায় সুলতানা চৌধুরী (৫০) নামে দুই বাংলাদেশি হামলার শিকার হন। তাঁরা দুজনই এই দু্দেশের নাগরিক।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বরুণ চক্রবর্তী ব্রুকলিন-ম্যানহাটন ডি ট্রেন সাবওয়েতে বিদ্বেষপ্রসূত হামলার শিকার হন। ১১ ফেব্রুয়ারি এক স্প্যানিশ এক তরুণ তাঁর ওপর হামলা চালায়। তাঁর নাক-মুখ ও মাথায় আঘাত করা হয়। বর্তমানে তিনি আশঙ্কামুক্ত।
বরুণের ভাই বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী বলেন, ১১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা সোয়া ৫টার দিকে কাজ থেকে বাসায় ফেরার পথে ডি ট্রেনে বরুণের পাশের আসনে এক স্প্যানিশ তরুণ বসেছিল। ওই তরুণ প্রথমে তাঁকে মুসলিম কিনা জানতে চায়। এ সময় বরুণ না সূচক জবাব দিয়ে কমলা খেতে থাকলে তরুণটি তাঁর কমলায় থুতু ফেলে। কনুই ও পা দিয়ে আঘাত করতে থাকে। বরুণ এমন আচরণ করার কারণ জানতে চাইলে তরুণ আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং তার নাকেমুখে ও মাথায় ঘুষি মারতে থাকে। একপর্যায়ে আসন ছেড়ে বরুণ ট্রেনের কম্পার্টমেন্টের এক প্রান্ত থেকে দৌড়ে অন্য প্রান্তে গিয়ে যাত্রীদের সাহায্য চাইতে থাকেন। সেখানেও তাঁর ওপর হামলা করা হয়।
বরুণের ভাষ্য অনুযায়ী বিশ্বজিৎ বলেন, একপর্যায়ে এক নারী যাত্রী প্রথমে বরুণকে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসলে অন্য যাত্রীরাও এগিয়ে আসে। ইমার্জেন্সি সুইচ টিপে টেন চলাচল বন্ধ করা হয়। ইতিমধ্যেই বরুণের নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বেরোতে থাকে। পরে পুলিশ এসে ডি ট্রেনের গ্র্যান্ড অ্যাভিনিউ থেকে বরুণকে উদ্ধার করে ম্যানহাটনের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে নিয়ে যায়। অন্যদিকে এমটিএর কর্মচারী ও পুলিশের সহযোগিতায় সিটি পুলিশ হামলাকারী তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে। তার বিরুদ্ধে বিদ্বেষপ্রসূত হামলার অভিযোগে মামলা হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে ১২ ফেব্রুয়ারি ভোর রাত ৩টার দিকে তিনি ম্যানহাটনের বাসায় ফিরে যান।
কানাডার এডমন্টন থেকে মুহাম্মদ আলী জানান, কানাডার অটোয়ায় রাইডাউ শপিং মলের বের হওয়ার ফটকে সম্প্রতি বিদ্বেষপ্রসূত হামলার শিকার হন বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক সুলতানা চৌধুরী (৫০)। এ ঘটনার প্রতিবাদে ১০ ফেব্রুয়ারি এডমন্টন সিটির নর্থগেইট সেন্টারে বাংলাদেশ কানাডা হেরিটেজ সোসাইটি অব এডমন্টন প্রতিবাদ সভা করেছে। এতে সভাপতিত্ব করেন সোসাইটির সভাপতি ম. লস্কর। অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, কানাডা ইউনিট কমান্ডের অন্যতম নির্বাহী ও ডাইভার্স এডমন্টনের সম্পাদক দেলোয়ার জাহিদ, আহসান উল্লাহ, মোহাম্মদ আলী, সাইফুর হাসান, জহিরুল ইসলাম শাহীন ও তরুণ কণ্ঠশিল্পী চামেলি লস্কর। বক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে সহায়তা দিতে কানাডার বাংলাদেশ দূতাবাসকে কার্যকর ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান।
ঘটনার দিন বিকেল তিনটার দিকে সুলতানা চৌধুরী অটোয়ায় রাইডাউ শপিং মল থেকে বের হচ্ছিলেন। এ সময় হামলাকারী তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দৌড়ে পালিয়ে যায়। শপিং মলের নিরাপত্তা কর্মকর্তা জায়েদ পুলিশকে জানান, হামলাকারী শ্বেতাঙ্গ, তার বয়স প্রায় ৪৫ বছর। পরিষ্কার শেভ, ওয়েভি, ব্ল্যাক চুল এবং শীতকালীন বুট পরিহিত ছিল সে।
হামলাকারী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সুলতানাকে দূর থেকে অনুসরণ করছিলেন। পরে কাছাকাছি এসে কনুই দিয়ে প্রচণ্ড ধাক্কা দিয়ে তাঁকে ফেলে দেয়। সুলতানার মাথায় হিজাব থাকার কারণে তাঁর ওপর এই আক্রমণ হয়েছে বলে পরিবারের সদস্যেরা মনে করছেন। সুলতানার বাম হাতের কয়েক জায়গায় হাড় ভেঙে গেছে। জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে তাঁর হাতে প্লাস্টার করা হয়েছে। ঘটনার পর পুলিশ তাৎক্ষণিক তদন্ত শুরু করেছে। এখনো কাউকে গ্রেপ্তার সম্ভব হয়নি বলে জানা গেছে।