নিউইয়র্ক নগরে আগের তুলনায় বর্তমানে মুসলমান, ইহুদি ও শিখ ধর্মের মানুষ বিদ্বেষমূলক আচরণ ও জাতিগত আক্রোশের শিকার হচ্ছেন বেশি। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার জের ধরে জাতিগত আক্রোশের ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। আর এসব ঘটনার অধিকাংশই অজানা থেকে যাচ্ছে। মানবাধিকার সংক্রান্ত নিউইয়র্ক সিটি কমিশনের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
১৯ জুন ব্রুকলিনে আরব-আমেরিকান ফ্যামিলি সাপোর্ট সেন্টারে জরিপের প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। এতে বলা হয়েছে, ইতিপূর্বে পুলিশ কিংবা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অথবা ধর্মীয়/কমিউনিটিভিত্তিক সংস্থায় অভিযোগ করে কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। এ কারণে গত বছর জাতিগত সহিংসতার শিকার ৭১ ভাগ মানুষই বিচার প্রার্থনায় আগ্রহী হয়নি। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে গত বছরের শেষ পর্যন্ত চলা এই জরিপে নিউইয়র্কের ৩ হাজার ১০০ মুসলমান সহিংসতার শিকার হন। জরিপে আরব, দক্ষিণ এশীয়, ইহুদি ও শিখদের দেওয়া তথ্যে জাতিগত আক্রোশের ভয়াবহ সব তথ্য উঠে আসে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, নিউইয়র্ক নগরের মানবাধিকার আইন লঙ্ঘনকারীকে সর্বোচ্চ আড়াই লাখ ডলার জরিমানার ব্যবস্থা রয়েছে। এই কমিশন সে পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার রাখে। তবে সহিসংতার শিকার ব্যক্তিরা এগিয়ে না এলে কোনো আইনই প্রয়োগ করা সম্ভব হবে না। মানবাধিকার কমিশনার কারমেলিন বলেন, কেউ কেউ নামাজ/পূজা/প্রার্থনা করেন কিংবা কোনো ব্যক্তির দৈহিক কী অবস্থা বা কোত্থেকে তিনি এসেছেন—এ কারণে কেউ নাজেহাল/আক্রান্ত/লাঞ্ছিত হবেন—এটি নিউইয়র্ক নগর কর্তৃপক্ষ কখনো মেনে নেবে না। কাউকেই বৈষম্যের শিকার হতে দেয় না এই নগর। অন্য ধর্ম বা বর্ণের হওয়ায় কেউ হয়রানির শিকার হবে—সেটিও বরদাশত করে না এই নগর কর্তৃপক্ষ। এমন পরিস্থিতি প্রতিবেদনে আমরা সর্বশক্তি নিয়োগ করেছি। জিরো টলারেন্স মনোভাব রয়েছে সিটি প্রশাসনে।
কমিশনার বলেন, মুসলমান, শিখ অথবা ইহুদিদের নিরাপত্তায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ নগরের সব সরকারি সংস্থা। কর্মক্ষেত্রে বিমাতাসুলভ আচরণও মেনে নেয় না এই প্রশাসন। জরিপে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী মানবাধিকার কমিশন সোচ্চার হবে। নগরের সব সংস্থার সঙ্গে মতবিনিময় করার মধ্য দিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আর এভাবেই সব মানুষের জন্য নিরাপদ নগরের ঐতিহ্য সমুন্নত রাখার চেষ্টা করবে নিউইয়র্ক নগর কর্তৃপক্ষ।
জরিপে দেখা গেছে, মুসলমান, শিখ ও ইহুদি সম্প্রদায়ের ৪০ শতাংশ মানুষ মৌখিকভাবে বিদ্বেষমূলক আচরণের শিকার হন। এর বাইরে ৯ শতাংশ শারীরিকভাবে এবং ২০ শতাংশ কর্মস্থলে নানা হয়রানির শিকার হয়েছেন।
মানবাধিকার কমিশন সুপারিশ করেছে, কমিউনিটিভিত্তিক সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে সক্রিয় নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে, যার মাধ্যমে সহিংসতার শিকার ব্যক্তিরা বিচার প্রার্থনায় উৎসাহিত হতে পারেন। দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হলে এসব জঘন্য ঘটনা দ্রুত কমে আসবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, জুইশ ফর র্যাসিয়েল অ্যান্ড ইকোনমিক জাস্টিস, শিখ কোয়ালিশন, কাউন্সিল অন আমেরিকান ইসলামিক রিলেশনসের নিউইয়র্ক চ্যাপটার, আরব-আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব নিউইয়র্ক, আরব-আমেরিকান ফ্যামিলি সাপোর্ট সেন্টার, ছায়া-সিডিসি, মানবাধিকার কমিশনের কর্মকর্তাদের সম্মিলিতভাবে নাগরিকের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।
প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে নিউইয়র্ক নগরের মেয়রের অভিবাসন সংক্রান্ত কমিশনার বিটা মুস্তফি বলেন, ‘বর্ণ, জাতীয়তা ও ধর্মীয় কারণে কেউ হয়রানি হবে অথবা কর্মস্থলে বিমাতাসুলভ আচরণের শিকার হবে—এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া উচিত নয়। এমন পরিস্থিতির অবসানে আমরা মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গে কাজ করছি। চলতি পথে অথবা কর্মস্থলে কেউ যাতে অযথা হয়রানি না হন, সে চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে অভিবাসী সমাজ স্বস্তিতে নেই—জরিপে এটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তাই আমরা কমিউনিটির শান্তি-স্বস্তি অটুট রাখতে এখন থেকে দ্বিগুণ উৎসাহে কাজ করব। কারণ এই নগরের দায়িত্ব হচ্ছে নাগরিকের অধিকার ও মর্যাদা সুরক্ষায় কাজ করা।’
মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ছায়া সিডিসির নির্বাহী পরিচালক অনিতা শিচরণ অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আজ মানবাধিকার কমিশনের জরিপে যে তথ্য উদ্ঘাটিত প্রকাশিত হলো, তা আমরা অনেক আগে থেকেই দেখে আসছি। আমরা এমন হয়রানি ও সহিংসতা থেকে মানুষকে রক্ষায় মাঠে রয়েছি। আমরা অবশ্যই মানবাধিকার কমিশনের এই উদ্যোগের সঙ্গে থাকব। কমিউনিটির স্বস্তির জন্য যতটা সম্ভব আমরা সহায়তা দিয়ে যাব।’