অনাবাসী বাঙালিদের অর্জনের স্বীকৃতি তুলে ধরার প্রত্যয় নিয়ে এনআরবি গ্লোবাল সম্মেলন ও বাণিজ্য মেলা শুরু হয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে তাদের ব্যাপকতর ভূমিকার সম্ভাবনা উন্মোচন করাসহ উত্তর আমেরিকার মূলধারায় বাংলাদেশি পণ্যের বিস্তৃত বাজার সৃষ্টির প্রত্যয় ব্যক্ত করেন উদ্যোক্তারা।
২১ সেপ্টেম্বর তিন দিনব্যাপী এনআরবি বিশ্ব সম্মেলন ও বাণিজ্য মেলা শুরু হয়েছে। গ্রেটার নিউইয়র্ক চেম্বার অব কমার্সের সদস্য এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ইন্ক আয়োজিত এই মেলায় বাংলাদেশ থেকে রূপায়ণ গ্রুপসহ ৩০টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। রাত ৮টায় ৪৭টি বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ থেকে আসা ‘দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস’–এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক শহীদুজ্জামান খান। উদ্বোধনী বক্তব্যে শহীদুজ্জামান খান বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ যত বেশি হবে, ততই দেশের জন্য মঙ্গল। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের একটি নতুন দ্বার উন্মোচিত হলো। এরপরই মেলা প্রাঙ্গণের দ্বার উন্মোচন করেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট রিয়াদ হোসেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ওয়াশিংটন থেকে আসা বাংলাদেশ সরকারের কমার্স কাউন্সিলর আখতার হোসেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিক হোসেন, মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. জিয়াউদ্দীন আহমেদ, রূপায়ণ গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহির আলী খান রাতুল, এনআরবিসি ব্যাংকের পরিচালক ও নিউজার্সির কাউন্সিলর ড. নূরন নবী।
নৃত্যাঞ্জলী সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর পরিবেশনায় গীতি-নৃত্য ‘হৃদয়ে বাংলাদেশ’ উপস্থিত দর্শকদের আনন্দে উদ্বেলিত করে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে যায় নিউইয়র্ক গভর্নর দপ্তরের ২৫ সেপ্টেম্বরকে অভিবাসন দিবস ঘোষণার খবর। নিউইয়র্ক স্টেট গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোর প্রতিনিধি হার্শ পারেখ স্টেট সিনেটর হোজে পেরাল্টার প্রকলেমেশনটি মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. জিয়াউদ্দীন আহমেদের কাছে হস্তান্তর করলে।
১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘের অধিবেশনে প্রথম বাংলায় বক্তৃতা করেন। জন্মশতবার্ষিকীর আগে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বজিত সাহার প্রস্তাবে এই দিনটি বাংলাদেশি অভিবাসন দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পেল।
এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের সিইও বিশ্বজিত সাহা স্বাগত বক্তেব্যে বলেন, ‘জন্মভূমি থেকে ১০,০০০ মাইল দূরে থাকলেও প্রতিটি অনাবাসী বাঙালির মনে অহর্নিশ জেগে থাকে সেই ফেলে আসা স্বদেশভূমির কথা। এই কথার প্রমাণ মেলে আমাদের প্রতিদিনের জীবনচারিতায়, খাদ্যাভ্যাসে, বসনভূষণে, ঈদ-পূজা-পার্বণে। আমরা বাংলাদেশ থেকে স্থানগতভাবে দূরে, কিন্তু এক দিনের জন্যও বাংলাদেশ আমাদের কাছ থেকে দূরে নয়।’
বিশ্বজিত সাহা বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অনাবাসী বাংলাদেশিদের আগমন খুব দীর্ঘদিনের নয়। অথচ এই স্বল্প সময়ের ভেতরেই তারা এই দেশে নিজের জন্য একটি সম্মানজনক স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে। শুধু পেশাগত সাফল্যই নয়, বিনিয়োগ উদ্যোক্তা হিসেবেও তারা এখন স্বীকৃত। এ কথায় কোনো অতিশয়োক্তি নেই, মেইন স্ট্রিট থেকে ওয়াল স্ট্রিট, সর্বত্রই আজ বাংলাদেশিরা নিজেদের ভূমিকার জন্য স্বীকৃত, সম্মানিত ও পুরস্কৃত।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞ, আমাদের এই উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জানাতে এগিয়ে এসেছেন বাংলাদেশে সরকার ও বাংলাদেশের প্রধান বাণিজ্য সংস্থাসমূহ। তিন দিনের এই সম্মেলনে আমরা চেষ্টা করব অনাবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে বাংলাদেশের সরকারি সংস্থা ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর একটি মেলবন্ধন গড়ে তুলতে। আমাদের সুযোগ সীমিত, সামর্থ্য তার চেয়েও কম। কিন্তু মাতৃভূমির প্রতি যে অনিঃশেষ ঋণ, তার তাগিদ থেকেই এই ক্ষুদ্র আয়োজন। আপনাদের সাহায্য ও সমর্থন আমাদের পাথেয় হয়ে থাকবে।’
উদ্বোধনী দিনে রাজীব ভট্টাচার্য ও দিনাত জাহান মুন্নীর একক সংগীতানুষ্ঠান ছাড়াও বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়ন শীর্ষক একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সুভাষ সিংহ রায়ের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন রিয়াদ হোসেন, ড. নূরন নবী, মাহির আলী খান রাতুল ও রিয়াদ হোসেন। রাত ১২টায় অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়।