নিউইয়র্ক নগরীর পাঁচটি বরো থেকে অবৈধ অভিবাসীদের ফৌজদারি মামলা ছাড়াই গণহারে গ্রেপ্তার করছে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) এজেন্টরা। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর দুই বছরে নিউইয়র্ক থেকে বিনা মামলায় অবৈধ অভিবাসী গ্রেপ্তারের সংখ্যা বেড়েছে ২৬৫ শতাংশ।
নিউইয়র্ক নগরীর কম্পট্রোলার স্কট স্ট্রিংগারের তথ্যমতে, সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ক্ষমতার শেষ বছর ২০১৬ সালে মাত্র ৩১৩ জন অবৈধ অভিবাসীকে ফৌজদারি মামলা ছাড়াই গ্রেপ্তার করে আইস। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর এ গ্রেপ্তারের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকে। ২০১৮ সালে এ সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার ১৪৪ জনে দাঁড়ায়। এ হিসাবে দু বছরে মামলা ছাড়াই অবৈধ অভিবাসী গ্রেপ্তার বেড়েছে ২৬৫ শতাংশ।
এদিকে অভিবাসন আইন ভাঙার কারণে ২০১৮ সালে ৩ হাজার ৪৭৬ অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করে আইস এজেন্টরা। অথচ ২০১৬ সালে এ সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৮৪৭ জন। এ হিসাবে মামলার বিপরীতে অভিবাসী গ্রেপ্তারের সংখ্যা বেড়েছে ৮৮ দশমিক ১৯ শতাংশ। এ তথ্য তুলে ধরে স্কট স্ট্রিংগার বলেন, ‘এই পরিসংখ্যান বড় চিন্তার কারণ। এই পরিসংখ্যান বলে দেয় যে, আইস এজেন্টদের প্রশাসন থেকে সর্বাত্মক আগ্রাসী হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন শুরু থেকেই কঠোর অভিবাসন নীতি অনুসরণ করছে। ক্ষমতায় আসার আগেই নির্বাচনী প্রচারের সময় থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসনবিরোধী বিভিন্ন বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন। ক্ষমতায় এসেই ছয়টি মুসলিম দেশের নাগরিকদের আমেরিকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ এবং যেকোনো ধরনের শরণার্থী গ্রহণ বন্ধে নির্বাহী আদেশ দেন। ফেডারেল আদালতের বাধার মুখে এই আদেশ কিছুটা শিথিল করা হলেও কঠোর অভিবাসন নীতি থেকে সরে আসেনি ট্রাম্প প্রশাসন। বরং আইসসহ আইনপ্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থার হাতে অত্যধিক ক্ষমতা দিয়ে এবং অভিবাসনবিরোধী নির্দেশ জারি করে এই নীতি কার্যকরে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে প্রশাসন। এ অবস্থায় নিউইয়র্কের মতো অভিবাসীবান্ধব নগর ও অঙ্গরাজ্যগুলো কিছু বাধার সৃষ্টি করলে ফেডারেল বাজেট সংকোচনের মতো পদক্ষেপও নেওয়া হয়। কিন্তু তারপরও নিউইয়র্কের মতো অভিবাসীবান্ধব নগরীতে অবৈধ অভিবাসী গ্রেপ্তারের এত উচ্চহার সবাইকে উদ্বিগ্ন করছে।
এ সম্পর্কিত বিবৃতিতে স্কট স্ট্রিংগার বলেন, ‘এটি শুধু সংখ্যা নয়। এরা আমাদেরই ছেলে, মেয়ে, ভাই, বোন, পিতা, মাতা, বন্ধু, প্রতিবেশী ও সহযোগী।’
স্ট্রিংগার প্রকাশিত পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, গত বছর নিউইয়র্কবাসীদের মধ্যে আমেরিকা থেকে বিতাড়নের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের বেশির ভাগই চীন ও ভারতীয় উপমহাদেশের। বিতাড়িত হওয়া অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে চীনা নাগরিক রয়েছে প্রায় ২১ শতাংশ। আর বিতাড়িতদের ১০ শতাংশই ভারতীয় উপমহাদেশের অবৈধ অভিবাসী।
তবে বিনা মামলায় কাউকে বিতাড়িত করা হয়নি বলে দাবি করছে আইস। আইস কর্মকর্তারা বলেন, এসব অবৈধ অভিবাসী আমেরিকায় বসবাস করছেন, তাঁরা সবাই অভিবাসন আইন ভঙ্গ করছেন। আইস নিজের কাজ করে যাচ্ছে। কোনো রাজনৈতিক বিতর্কে জড়াতে চায় না আইস। বরং আইন অনুযায়ীই অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।