নিউইয়র্কের সিটি কাউন্সিলের নির্বাচন মঙ্গলবার

যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের স্বর্গ হিসেবে পরিচিত নিউইয়র্ক নগরীর সিটি কাউন্সিলের নির্বাচন ৭ নভেম্বর মঙ্গলবার। এ নগরীতে ডেমোক্রেটিক দলের আধিপত্য দীর্ঘদিনের। নগরীর বর্তমান ডেমোক্র্যাট পার্টির মেয়র বিল ডি ব্লাজিও পুনর্নির্বাচনের জন্য লড়ছেন। নির্বাচনের শেষ মুহূর্তেও এ নিয়ে তেমন কোনো উত্তেজনা নেই। উদীয়মান অভিবাসী হিসেবে বাংলাদেশিরা এ নগরীতে ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলেও রাজনীতির মূলধারায় তেমন নেই। অধিকাংশের কাছেই নগর কাউন্সিলের নির্বাচন নিয়ে তেমন কোনো তথ্য নেই। নির্বাচনে আমেরিকার প্রধান দুটি দল ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান ছাড়াও বেশ কিছু অচেনা আঞ্চলিক ও পেশাজীবী দল এ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এসব অনেকটা অচেনা দলের মধ্যে রয়েছে কনজারভেটিভ, গ্রিন পার্টি, ওয়ার্কিং ফ্যামিলি, রিফর্ম, ড্যাম্প দ্য মেয়র, স্টপ ডি ব্ল্যাজিও, স্মার্ট সিটিজ, লিবার্টারিয়ান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন।

৭ নভেম্বর ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ব্যালটে দেখা যাবে মেয়র পদের জন্য ডেমোক্র্যাট পার্টির বিল ডি ব্লাজিও, রিপাবলিকান নিকোল মেলিওটাকিস, রিফর্ম পার্টির সাল আলবানিজ, লিবার্টারিয়ান পার্টির এরোন কোমেই, গ্রিন পার্টির আকিম ব্রাউডার, স্মার্ট সিটিজ দলের মাইক টোলকিনের নাম।
এ নির্বাচনে মেয়র পদে বর্তমান মেয়র, পাবলিক অ্যাডভোকেট, সিটি কম্পোট্রলার, ছাড়াও নিউইয়র্ক রাজ্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারক, সিভিল কোর্টের বিচারক, পাঁচ ব্যুরো প্রেসিডেন্ট, দুই ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি, সর্বোপরি ৫১ জন কাউন্সিলম্যান ছাড়াও আরও বিভিন্ন পদে কর্মকর্তা নির্বাচিত হবেন। ডেমোক্রেটিক মেয়র বিল ডি ব্ল্যাজিও, পাবলিক অ্যাডভোকেট লিটিটা জেমস এবং কম্পোট্রোলার স্কট স্ট্রিজার স্ব স্ব পদে পুনর্নির্বাচনের জন্য লড়ছেন। আর মেয়র পদে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হলেন নিকোলি ম্যালিওট্যাকিস, পাবলিক অ্যাডভোকেট পদে মিখাইল ও রেইলি, কম্পোট্রোলার পদে মিচেল জে. ফ্যায়ুল্কনার।
এ নির্বাচনে তালিকাভুক্ত মোট ভোটারের সংখ্যা ৪৯ লাখ ৯৬ হাজার ৯৭৫। এঁদের মধ্যে ডেমোক্রেটিক পার্টির ভোটারের সংখ্যা ৩৪ লাখ ২৭ হাজার ১৭৩। আর রিপাবলিকানদলীয় ভোটারের সংখ্যা ৫ লাখ ২২ হাজার ৬২৯। বাকি ১০ লাখ ৪৭ হাজার ১৭৩ ভোটার বিভিন্ন দলের অন্তর্ভুক্ত।
নিউইয়র্ক নগরীর ভোটকেন্দ্রগুলো খোলা থাকবে ভোর ছয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত। তালিকাভুক্ত ভোটার এ সময়ের মধ্যে যেকোনো সময়ে এসে নিজের ভোট দিতে পারবেন। নির্বাচন উপলক্ষে এখানে কোনো সরকারি বা স্থানীয় ছুটি নেই। কর্মক্ষেত্রে না গিয়ে সারা দিনের জন্য ভোটকেন্দ্রে কেউ যান না। নির্বাচনের দিন ভোট দিতে দুই ঘণ্টার জন্য ছুটি নিতে পারেন। যদিও এ আইনের ব্যবহার করে কোনো কর্মজীবীকে তাঁর কাজ রেখে ভোট প্রদানের জন্য দেখতে পাওয়া যাবে না। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে, নির্বাচনের অন্তত ৩০ দিন আগে তালিকাভুক্ত হলে, আদালত কর্তৃক দণ্ডিত না হলেই নিউইয়র্কের তালিকাভুক্ত ভোটার এ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। মানসিকভাবে অসুস্থ বা যুক্তরাষ্ট্রের অন্য কোনো নগরীতে ভোটাধিকার আছে, এমন কোনো নাগরিক ভোট দিতে পারবেন না, এসব নির্বাচনী আইন লঙ্ঘন করলে জরিমানাসহ কারাদণ্ডের আইন রয়েছে। যাঁরা সশরীরে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হতে পারবেন না, তাঁদের জন্য রয়েছে অ্যাবসেন্টি ব্যালট। নির্বাচনের অন্তত এক সপ্তাহ আগে এ ধরনের ব্যালট ডাকযোগে পাঠানো হয়েছে।
অন্যান্য দলের সব ভোট রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থীদের দেওয়া হলেও ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থীরা বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন। তবে আমেরিকায় অনেক ক্ষেত্রে দলীয় আনুগত্যের চেয়ে প্রার্থীর যোগ্যতা ও অন্য গুণাবলির নিরিখে ভোট দেওয়া হয়। নাটকীয় কিছু হলে পরে নানা বিশ্লেষণে জানা যাবে, কেন এমনটি হলো।
নিউইয়র্ক নগরীতে ডেমোক্রেটিক পার্টির তালিকাভুক্ত ভোটারের সংখ্যা লক্ষণীয় মাত্রায় বেশি হওয়ায় এ নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থীরা বিপুল ভোটে বিজয়ী হওয়ার প্রত্যাশা করেন। জনমত জরিপে তেমন আভাসই পাওয়া গেছে। জনমতের ফারাক এতটাই বেশি এবং তালিকাভুক্ত দলীয় ভোটের ব্যবধান বেশি হওয়ায় নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক উত্তাপ-উত্তেজনা অনেকটাই দৃশ্যমান নয় নিউইয়র্ক নগরীতে।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক নগরীর সব চেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের কোনো আবহ প্রচার-প্রচারণা সাধারণ মানুষের চোখে তেমন পড়েনি। কোনো কোনো প্রার্থীর পক্ষে নামমাত্র প্রচার কেবল টেলিফোনের মধ্যে সীমিত ছিল। বাংলাদেশের মতো রাস্তাঘাটে, দোকানে কোথাও কোনো পোস্টার, ব্যানার, পথসভা, জনসভা, মিছিল, মাইকিং হয়নি। কোনো কোনো প্রার্থীর অনুকূলে সীমিত পরিসরে তহবিল সংগ্রহের জন্য কোনো রেস্টুরেন্টে পরিচিতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের একই জায়গা মিছিল-মিটিং হয় না, হয় না পাল্টাপাল্টি ধাওয়া। সমর্থকদের মারামারিতে আহত কিংবা নিহত হওয়ারও কোনো ঘটনা ঘটেনি। ভোটের দিনও ভোটকেন্দ্রের আশপাশে দলীয় সমর্থকদের দেখা যায় না, দেখা যাবে না। প্রার্থীর খরচে ঘর থেকে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসার সংস্কৃতিও এ দেশে নেই। টাকা দিয়ে ভোট কেনা কিংবা জালভোট দেওয়ার কথা তো ভাবাই যায় না।