প্রত্যেক মানুষই কমবেশি ভ্রমণপিপাসু। প্রয়োজনে কিংবা মনের আনন্দে মানুষ ভ্রমণ করে, লালন করে ভ্রমণের তৃষ্ণা। কেউ কেউ রসিয়ে রসিয়ে ভ্রমণের গল্প করেন, আর শ্রোতা মুগ্ধ হয়ে সেই গল্প শোনেন, নিজের ভ্রমণ তৃষ্ণাকে তৃপ্ত করতে চেষ্টা করেন। আবার কেউ কেউ ভ্রমণের বিবরণ রচনা করেন একেবারেই ব্যক্তিগত আনন্দের জন্য, সময়-সুযোগ পেলে ফেলে আসা জীবনের আনন্দের জন্য। এ সবের কোনোটাই সাহিত্য নয়, ভ্রমণ তৃষ্ণা মানুষের চিরকালের আকাঙ্ক্ষা—এর মাধ্যমে কখনোই পরিতৃপ্ত হয় না। তা হলে ভ্রমণ-সাহিত্য কী এই প্রকার সাহিত্যের কোনো ব্যাকরণ আছে কোনো নির্দিষ্ট বিধি-বিধানের মধ্যে কি এর সাফল্য নির্ভর করে—এসব প্রশ্নের উত্তর না দিয়েও বলা যায়, যেকোনো সাহিত্যের প্রতিপাদ্য হলো অনন্য জীবনতৃষ্ণা, জীবনের প্রতি গভীর মমত্ববোধ। জীবন ও জগৎ দেখার অসাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি ও দৃষ্টিকোণ না থাকলে সাহিত্য সৃষ্টি সম্ভব নয়। ভ্রমণসাহিত্যের ক্ষেত্রে এই একই প্রত্যয় ও অঙ্গীকার থাকতে হয়। সুতরাং বলা যায়, ভ্রমণের বিবরণ সাহিত্য নয়। ভ্রমণের অভিজ্ঞতা যদি জীবনরসে জারিত করে অনন্য এক প্রকাশ-ক্ষমতায় ঐশ্বর্যমণ্ডিত করে তোলা যায়, তাহলেই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা সাহিত্য পদবাচ্য হয়ে উঠে। এসব অসাধারণ বৈশিষ্ট্যের জন্য বাংলা ভ্রমণ-সাহিত্যের ইতিহাস সৈয়দ মুজতবা আলী (১৯০৪-১৯৭৪) স্মরণীয় হয়ে আছেন।
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে ভ্রমণসাহিত্যের পরিমাণ কম নয়। কিন্তু সৈয়দ মুজতবা আলী ভ্রমণসাহিত্যের ভিন্ন এক ভাষা ভিন্ন এক গড়ন তৈরি করেন, যার সঙ্গে তার পূর্বসুরিদের সম্পর্ক অতি সামান্য মজলিশি আড্ডার আবহে কীভাবে বিচিত্র জীবন জগৎ রসসিক্ত করে উপস্থাপন করা যায়, তার এক জাদুকরী প্রতিভা নিয়ে তিনি জন্মেছিলেন। তাঁর দেশে-বিদেশে (১৯৮৯) জলে-ডাঙায় (১৯৬০) ভবঘুরে (ভবঘুরে ও অন্যান্য গ্রন্থে সংকলিত) বিদেশে (পঞ্চতন্ত্র সংকলিত) প্রভৃতি ভ্রমণসাহিত্য একদিকে গভীর পাণ্ডিত্য, অন্যদিকে তীব্র রসবোধের পরিচয়ে বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে। সৈয়দ মুজতবা আলী গল্প-উপন্যাস প্রবন্ধ ও লঘু নিবন্ধ লিখেছেন। তাঁর রচিত কবিতা শিশুতোষ রচনা অনুবাদেরও পরিচয় পাওয়া যায়। কিন্তু বাংলা সাহিত্যে তার পরিচয় মুদ্রিত হয়ে আছে ভ্রমণ-সাহিত্যিক হিসেবে। এই পরিচয়ের কিঞ্চিৎ পটভূমি আছে।
সাব রেজিস্ট্রার বাবা সৈয়দ সিকন্দার আলীর চাকুরিসূত্রে তাঁকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পড়াশোনা করতে হয়। জীবন ও জগৎ সম্পর্কে এক অনন্য দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী হওয়াই এই সব অঞ্চলের জনজীবনের বিচিত্র আখ্যান তাঁর ভাবনায় আলোড়ন তোলে। শান্তিনিকেতনে অধ্যয়ন সূত্রে তিনি দক্ষতা অর্জন করেন সংস্কৃতি, ইংরেজি, ফারসি, আরবি, ইতালিয়ান প্রভৃতি ভাষায়। এ ছাড়া হিন্দি ও গুজরাটি ভাষায়ও তিনি পারদর্শিতা অর্জন করেন। বাল্যকালে পারিবারিক পরিমণ্ডলে উর্দু ভাষার সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটে। এ ছাড়া কলকাতা ও আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয় এবং মিসরের আলআজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন সূত্রে তিনি অসামান্য পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। এর সঙ্গে লাভ করেন বিচিত্র জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরিচয়ের আস্বাদ। এ ছাড়া চাকরিসূত্রে তাঁকে ঘুরে বেড়াতে হয় দেশে-বিদেশে। কাবুল, বারোদা, বগুড়া, কলকাতা, পাটনা, কটক প্রভৃতি অঞ্চলে তিনি বিচিত্র চাকরিসূত্রে অবস্থান করেন। ফলে অনিবার্য ভাবেই তাঁর মধ্যে ভ্রমণ-সংস্কৃতির ঘরানা তৈরি হয়। আর সেই ভ্রমণে-সংস্কৃতি মনোগড়নকে পরিপুষ্ট করে তোলে তাঁর বিপুল পাণ্ডিত্য ও বহু ভাষায় ব্যুৎপত্তি। এ সবের মিথস্ক্রিয়ায় সৈয়দ মুজতবা আলী ভ্রমণ-সাহিত্য জীবন ঘনিষ্ঠ রসসিক্তও আনন্দঘন হয়ে উঠেছে।
সৈয়দ মুজতবা আলীর ভ্রমণ-সাহিত্যগুলোর মধ্যে সর্বাগ্রে প্রকাশিত দেশে-বিদেশে বিপুল খ্যাতি অর্জন করে। এই গ্রন্থের পরে তাঁর অনেক গল্প-উপন্যাস ও ভ্রমণ-সাহিত্য প্রকাশিত হয়। কিন্তু এই প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থটিই তাঁকে বাঙালি পাঠকসমাজে অমরত্ব দান করে। শুধু তাই নয়, আমাদের ভ্রমণ-সাহিত্যের যে বিপুল ইতিহাস উল্লেখ করা হয়েছে তার প্রথাগত গড়ন-নির্মিতির বাইরে সৈয়দ মুজতবা আলী অন্য এক বলয় নির্মাণ করেন। এই নির্মিতির শিল্প-ব্যাকরণ একান্তই তাঁর নিজস্ব। প্রকৃতির প্রতি মুগ্ধতার অবলোকন তাঁর লেখায় নেই, তা নয়। কিন্তু তাঁর একান্ত মুগ্ধতা জীবনের প্রতি। এই মুগ্ধতাকে তিনি যে ভাষায় প্রকাশ করেন, সেই ভাষা প্রথাগত গদ্যভাষা নয়, প্রাণহীন গদ্যের স্তূপও। অধিকন্তু মজলিশি গদ্যের এমন এক প্রাণ প্রবাহ তিনি সৃষ্টি করেন, যেখানে তাঁর জনজীবন আপন স্বভাবে সরব হয়ে উঠে।
অন্নদাশঙ্কর রায় তাঁর পথে প্রবাসে গ্রন্থে লিখেছেন, যেদিন আমি বিদেশ যাত্রা করেছিলাম, সেদিন শুধু দেশ দেখতে যাইনি। গেছলুম মানুষকেও দেখতে, মানুষের সঙ্গে মিশতে, মানুষের সঙ্গে নানা সম্বন্ধ পাতাতে। দেশের প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট সৌন্দর্যের চেয়ে দেশের মানুষ সুন্দর। মানুষের অন্তর সুন্দর, বাহির সুন্দর, ভাষা সুন্দর, ভূষা সুন্দর। দেশ দেখতে ভালো লাগে না, যদি দেশের মানুষকে ভালো না লাগে।
অন্নদাশঙ্কর রায়ের এই উপলব্ধি সৈয়দ মুজতবা আলীর ভ্রমণ-সাহিত্যের মূলগত ভিত্তি। প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক তৈরিতে মানুষকে কোনো হিসাব-নিকাশের আশ্রয় নিতে হয় না, কোনো ব্যবহার ও আচরণবিধি অনুসরণ করতে হয় না। কিন্তু মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক বিনির্মাণে তাঁকে ভাবতে হয়, তাঁর অন্য মনোগড়নের কিছু অদলবদল করে নিতে হয়। তবু মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের সংকট একটি চিরকালীন সমস্যা। সৈয়দ মুজতবা আলী অসাধারণ এক জীবনবোধের প্রেরণায় অসংখ্য মানুষের সঙ্গে মধুর সম্পর্ক তৈরি করেছিলেন। দেশে-বিদেশে গ্রন্থে মানুষের সঙ্গে মধুর সম্পর্কের সেই মধুরতা আমাদের তৃপ্ত করে আনন্দিত করে। গ্রন্থের শুরুতেই একজন ফিরিঙ্গির সঙ্গে এই সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার আখ্যান, আত্মীয়তা স্থাপনের ইতিবৃত্ত। এই ইতিবৃত্তের বিস্তারিত পরিচয় নিতে পারি।
লেখকের ভাষাচাঁদনী থেকে নাসিকে দিয়ে একটা শার্ট কিনে নিয়েছিলুম। তখনকার দিনে বিচক্ষণ বাঙালির জন্য ইউরোপিয়ান থার্ড নামক একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান ভারতের সর্বত্র আনাগোনা করত। হাওড়া স্টেশন সেই থার্ডে উঠতে যেতেই এক ফিরিঙ্গি হেঁসে বলল, এটা ইউরোপিয়ানদের জন্য।
আমি গাঁক গাঁক করে বললুম, ‘ইউরোপিয়ান তো কেউ নেই। চল, তোমাতে আমাতে ফাঁকা গাড়িটা কাজে লাগাই। এই হলো সম্পর্ক স্থাপনের গোপন ন্যায় সূত্র আন্তরিকতা, উষ্ণতা, বিশ্বাস। কিন্তু মাধ্যমটা নিঃসন্দেহেই ভাষা, সে যে ভাষাই হোক না কেন। জার্মান দার্শনিক এরিখ ফর্ম তার আর্ট অব স্পিচ গ্রন্থে মানুষের ভাষা ব্যবহারের প্রতি কেন এত গুরুত্ব দিয়েছেন, কেন বলেছেন, ভাষা ভালোবাসার বহুলাংশ তা অনুধাবন করা যায় সৈয়দ মুজতবা আলীর এই অনুধ্যানে। তিনি লিখেছেন এক তুলনাত্মক ভাষাতত্ত্বের বইয়ে পড়েছিলুম, ‘বাঙালি শব্দের অন্ত্যদেশে অনুস্বর যোগ করিলে সংস্কৃত হয়, ইংরেজি শব্দের প্রদেশে জোর দিয়া কথা বললে সায়েবী ইংরেজি হয়। অর্থাৎ পয়লা সিলেবলে অ্যাকসেন্ট দেওয়া খারাপ রান্নায় লঙ্কা ঠেসে দেওয়ার মত্ত সব পাপ ঢাকা পড়ে যায়। সোজা বাংলায় এরই নাম গাঁক গাঁক করে ইংরেজি বলা। ফিরিঙ্গি তালতলার নেটিব, কাজেই আমার ইংরেজি শুনে ভারি খুশি হয়ে জিনিসপত্র গোছাতে সাহায্য করল। কুলিকে ধমক দেওয়ার কাজ ওরি কাঁধে ছেড়ে দিলুম। ওদের বাপ উড়ো, মাসীপিসি রেলে কাজ করে কুলি শায়েস্তায় ওরাং ওয়াকিবহাল।’
এই অনুচ্ছেদটুকুর মধ্যে সৈয়দ মুজতবা আলীর মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক স্থাপনের সব শক্তির উপাদানগুলো নিহিত আছে। তিনি ভালোভাবেই জানতেন, যার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে তার ভাষা, তার সংস্কৃতি এবং সম্ভব হলে ওই ব্যক্তি মানুষটির প্রবরতা মনোগড়ন জানা থাকলে সম্পর্ক স্থাপন সহজতর হয়। সুপ্রচুর ভাষায় অগাধ দখল ও বিভিন্ন জাতিসত্তার মানুষের ইতিহাস ঐতিহ্য-সংস্কৃতি বিষয়ে গভীর পাণ্ডিত্য সৈয়দ মুজতবা আলীকে সম্পর্ক স্থাপনে অসাধারণ শক্তি জুগিয়েছে। মজলিশি ভাষায়, ব্যঙ্গ-বক্রোক্তি আর কৌতূহলের মিশেলে তিনি সম্পর্কের বিচিত্র মাত্রাকে জীবন্ত করে তুলেছেন। আর রহস্য করার শক্তি, ভণিতার কৌশল না-জানলে বক্তব্য উপভোগ্য হয়ে উঠে না। সৈয়দ মুজতবা আলী লিখেছেন, কিন্তু এদিকে আমার ভ্রমণের উৎসাহ ক্রমেই চুবসে আসছিল। এত দিন পাসপোর্ট জামাকাপড় জোগাড় করতে ব্যস্ত ছিলুম, অন্য কিছু ভাববার ফুরসত পাইনি। গাড়ি ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রথম যে ভাবনা আমার মনে উদয় হল, সেটা অত্যন্ত কাপুরুষজনোচিত্তমনে হল, আমি একা।
পরে আমি জেনেছি তিনি একা নন। ওই ফিরিঙ্গীর সঙ্গে তার সম্পর্ক এতটাই আন্তরিক হয়ে উঠে যে, তারা পরস্পরের খাবার মিলেমিশে খায়। কিন্তু এ একান্তই সূচনা পূর্ব। তার বিপুল ভ্রমণ-সাহিত্যে কত মানুষ, কত সংস্কৃতি, কত ঘটন-অঘটন, কত ইতিহাস-ঐতিহ্য, কত জ্ঞান-পাণ্ডিত্য, কত কৌতুক-কৌতূহল যে স্থান পেয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। বিশেষ করে দেশে বিদেশে গ্রন্থে একটি পুরো আফগানিস্তান পাওয়া যায়। আফগানিস্তানের কোনো সমাজতাত্ত্বিক বা ইতিহাসবেত্তা এমন আফগানিস্তানের খোঁজ পাবেন কি না সন্দেহ। আর প্রকৃতি, তাঁর প্রিয় বাংলা, এসব কি কবিতা লেখার এই মানুষটির কাছে আপন স্বভাবে ধরা দেয়নি? তাহলে চোখ বুলাই নিচের অংশটুকুতে। সৈয়দ মুজতবা আলী কাবুল যাচ্ছেন।
‘ইতিমধ্যে বাংলাদেশ অতিক্রান্ত। রাত ঘনিয়ে এল। খিদে ছিল না বলে পেট ভরে খাইনি, তাই ঘুম পাচ্ছিল না। বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখি কাকজ্যোৎস্না। তবুও স্পষ্ট। চোখে পড়ে এ বাঙলাদেশ নয়। সুপারি গাছ নেই, আম জামে ঘেরা ঠাসবুনুনির গ্রাম নেই। আছে শুধু ছেঁড়া ছেঁড়া ঘরবাড়ি এখানে-সেখানে। উঁচু পাড়িওয়ালা ইদারা থেকে এখানে পানি তোলা চলছে, পুকুরের সন্ধান নেই। বাংলাদেশের সোঁদা সোঁদা গন্ধ অনেকক্ষণ হল বন্ধদমকা হাওয়ায় পোড়া ধুলো মাঝেমাঝে চড়াৎ করে যেন থাবড়া মেরে যায়। এই আধ আলো-অন্ধকারের যদি এ দেশ এত কর্কশ হয়, তবে দিনের বেলায় এর চেহারা না জানি কি রকম হবে। এই পশ্চিম, এই সুজলা-সুফলা ভারতবর্ষ না, তা তো নয়। বঙ্কিম যখন সপ্ত কোটি কণ্ঠের উল্লেখ করেছেন, তখন সুজলা-সুফলা শুধু বাংলাদেশের জন্যই।
প্রত্যক্ষ দৃষ্ট ঘটনার বিবরণ ভ্রমণ-কাহিনি হতে পারে, ভ্রমণ-সাহিত্যে নয়। সৈয়দ মুজতবা আলী কখনোই ভ্রমণ-কাহিনি লিখেননি। কল্পনাপ্রতিভা আর সৃজনশীলতার মিশেলে তাঁর দেখা জীবন ও জগৎ নতুন মহিলা ও সৌন্দর্যের অন্য এক জীবন ও জগতে রূপ লাভ করেছে। অসাধারণ রসবোধ ও কৌতুক-প্রিয়তার তিনি যে জীবন উপস্থাপন করেছেন। সেই জীবনের স্থানিক-মূল্য অতিক্রম করে পাঠক-সমাজ চিরকালীন এক আস্বাদ লাভ করেন। এই শক্তি ও সৌন্দর্যের জন্যই সৈয়দ মুজতবা আলীর ভ্রমণ-সাহিত্য বেঁচে থাকবে ভবিষ্যৎ জীবনেও।