ধীরেন্দ্রনাথের কথা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্তির দাবি

ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নিউইয়র্কে স্মরণসভা।
ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নিউইয়র্কে স্মরণসভা।

শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে বাংলাদেশের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্তি করার দাবি জানানো হয়েছে। ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নিউইয়র্কে আয়োজিত এক স্মরণসভার এ দাবি উত্থাপন করা হয়। ১৪ এপ্রিল ছিল তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী।

নিউইয়র্কের বাঙালি অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসে এক রেস্টুরেন্টে গতকাল শনিবার এ স্মরণসভার আয়োজন করে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পরিষদ ইউএসএ। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল লিটনের সঞ্চালনায় সভায় সভাপতিত্বে করেন সংগঠনের সভাপতি মানবাধিকার কর্মী সিতাংশু গুহ।

শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নাতনি সাংসদ এরোমা দত্ত ঢাকা থেকে টেলিফোনে সভায় যোগ দেন। তিনি বলেন, ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের যথাযথ মর্যাদা পাওয়া উচিত। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, প্রধানমন্ত্রী হয়তো এদিকে নজর দেবেন।

অধ্যাপক ওয়াহিদুজ্জামান মানিক বলেন, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা আন্দোলনের অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি বাংলা ভাষাকে দাপ্তরিক ও অন্যতম ভাষার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৪৮-এ করাচিতে গণপরিষদের সভায় ধীরেন্দ্রনাথের সাহসী ভূমিকার বর্ণনা দেন তিনি।

শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের প্রতিকৃতি।



ওবায়দুল্লাহ মামুন তাঁর বক্তব্যে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে ভাষা আন্দোলনের রাজনৈতিক প্রবক্তা হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রথম বাংলা ভাষার পক্ষে প্রস্তাব রেখেছিলেন। ঠিক চার বছর পর ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সালে ঢাকায় প্রথম শহীদ মিনার স্থাপিত হয়। তিনি ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে প্রথম রাজনৈতিক শহীদ হিসেবেও বর্ণনা করেন।

আবেদীন কাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ‘ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত’ চেয়ার প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করার আহ্বান জানান। সভায় অন্যান্য বক্তারা স্কুলের পাঠ্যসূচিতে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের কীর্তি তুলে ধরার আহ্বান জানান।

সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সাপ্তাহিক বর্ণমালা সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, ঐক্য পরিষদের সভাপতি টমাস দুলু রায়, প্রতীপ দাশগুপ্ত, রবীন্দ্র সরকার, মাথিয়াস বাবুল রোজারিও, বিভাস মল্লিক, অবিনাশ আচার্য, দীনেশ চন্দ্র মজুমদার, প্রভাস গুপ্ত প্রমুখ।

উল্লেখ্য, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ১৮৮৬ সালের ২ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রামরাইলে জন্মগ্রহণ করেন। কর্মজীবন শুরুতে তিনি কুমিল্লার বাঙ্গরা হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ১৯১১ সালে তিনি কুমিল্লা বারে যোগ দেন। বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে তার অবস্থান ছিল কঠোর। ধর্মের ভিত্তিকে ভারত বিভাগের বিপক্ষে ছিলেন তিনি। কিন্তু দেশ বিভাগ অনিবার্য হয়ে গেলে তিনি পূর্ব-পাকিস্তানে থেকে যাওয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেন।

ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পাকিস্তান গণপরিষদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘পাকিস্তানের ৬ কোটি ৯০ লাখ মানুষের মধ্যে ৪ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাংলায় কথা বলে, তাই আমার বিবেচনায় বাংলা হওয়া উচিত রাষ্ট্রভাষা।’ ১৯৭১ সালে ২৯ মার্চ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে পাকিস্তানি দুই সেনারা ধরে নিয়ে যায়। তাঁকে ১৪ এপ্রিল পঙ্গু অবস্থায় হত্যা করে পাকিস্তানিরা।