ধীরেন্দ্রনাথকে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্তির দাবি

স্মরণ সভায় ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পরিষদের সদস্য ও অতিথিরা
স্মরণ সভায় ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পরিষদের সদস্য ও অতিথিরা

শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে বাংলাদেশর পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানানো হয়েছে নিউইয়র্কে। ১৪ এপ্রিল ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রবাসে প্রথমবারের মতো আয়োজিত এক স্মরণসভার এই দাবি উত্থাপন করা হয়।
নিউইয়র্কের বাঙালি অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসের একটি রেস্টুরেন্টে স্থানীয় সময় ২০ এপ্রিল সন্ধ্যায় এই স্মরণ সভার আয়োজন করে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পরিষদ ইউএসএ। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নাট্যকার ও সাংবাদিক তোফাজ্জল লিটনের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মানবাধিকার কর্মী শিতাংশু গুহ।
সভায় ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের নাতনি সাংসদ এরোমা দত্ত এবং টেনেসির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ওয়াহিদুজ্জামান মানিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের দেশপ্রেম নিয়ে বক্তব্য রাখেন।
ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত সম্পর্কে বিস্তারিত জানান ওবায়দুল্লাহ মামুন। সভায় গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন সাপ্তাহিক বর্ণমালা সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, ঐক্য পরিষদের সভাপতি ডা. টমাস দুলু রায়, প্রতীপ দাশগুপ্ত, রবীন্দ্র সরকার, মাথিয়াস বাবুল রোজারিও, বিভাষ মল্লিক, মুক্তিযোদ্ধা অবিনাশ আচার্য্য, দীনেশ চন্দ্র মজুমদার, আবেদিন কাদের, প্রভাশ গুপ্ত।
ঢাকা থেকে টেলিফোনে সাংসদ এরোমা দত্ত প্রবাসে তাঁর দাদু শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের মৃত্যু দিবস পালনে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের যথাযথ মর্যাদা পাওয়া উচিত। তিনি আশা প্রকাশ করেন, প্রধানমন্ত্রী হয়তো নজর দেবেন। এরোমা দত্ত বলেন, তিনি সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্ক আসবেন।
টেনেসির অধ্যাপক ও শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বিশেষজ্ঞ ড. ওয়াহিদুজ্জামান মানিক বলেন, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা আন্দোলনের অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি বাংলা ভাষাকে দাপ্তরিক ও অন্যতম ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। দীর্ঘ ভাষণে তিনি ১৯৪৮-এ করাচি পার্লামেন্টে তাঁর সাহসী ভূমিকার বর্ণনা দেন।
ওবায়দুল্লাহ মামুন শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে ভাষা আন্দোলনের রাজনৈতিক প্রবক্তা হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ধীরেন্দনাথ দত্ত ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রথম বাংলা ভাষার পক্ষে প্রস্তাব রেখেছিলেন। ঠিক চার বছর পর ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় প্রথম শহীদ মিনার স্থাপিত হয়।
ধীরেন্দনাথ দত্তকে প্রথম রাজনৈতিক শহীদ হিসেবেও বর্ণনা করেন ওবায়দুল্লাহ মামুন।
সম্পাদক মাহফুজুর রহমান বলেছেন, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে যে সাহসী প্রস্তাব রেখেছিলেন, একাত্তরে জীবন দিয়ে তার মূল্য পরিষদ করেছেন। তিনি সংসদ ভবনসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নামফলক এবং কুমিল্লায় ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনের পক্ষে মন্তব্য করেন।
আবেদীন কাদির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ‘ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত’ চেয়ার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করার আহ্বান জানান।
সভায় অন্য বক্তারা স্কুলের পাঠ্যসূচিতে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের কীর্তি তুলে ধরার আহ্বান জানান। সবার উপস্থিতিতে নিকট ভবিষ্যতে ‘শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মারক বক্তৃতা’ অনুষ্ঠান করা হবে বলে জানানো হয়।
উল্লেখ্য, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বাংলা ভাষার জন্য প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ করেছিলেন ১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। ১৮৮৬ সালের ২ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার রামরাইলে তাঁর জন্ম। আইনজীবী বাবা জগবন্ধু দত্তের হাতেই ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের আইনি পেশায় হাতেখড়ি। তিনি নবীনগর হাইস্কুল, কুমিল্লা জিলা স্কুল ও কলকাতার রিপন কলেজে পড়াশোনা করেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি কুমিল্লার বাঙ্গরা হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ১৯১১ সালে তিনি কুমিল্লা বারে যোগ দেন। বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে তাঁর অবস্থান ছিল কঠোর। ধর্মের ভিত্তিকে ভারত বিভাগ এবং পাকিস্তান সৃষ্টির বিপক্ষে ছিলেন তিনি। কিন্তু দেশ বিভাগ অনিবার্য হয়ে গেলে তিনি পূর্ব পাকিস্তানে থেকে যাওয়ার পক্ষে অবস্থান নেন। তাই হয়তো পাকিস্তান সৃষ্টির আগেই নতুন এই দেশটির সংবিধান প্রণয়ন কমিটিতে তাঁকে নেওয়া হয় দেশটির আইনগত খসড়া কাঠামো তৈরির জন্য।
ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পাকিস্তান পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘পাকিস্তানের ৬ কোটি ৯০ লাখ মানুষের মধ্যে ৪ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাংলায় কথা বলে, তাই আমার বিবেচনায় বাংলা হওয়া উচিত রাষ্ট্রভাষা।’ তাঁর এই বক্তব্যকে জিন্নাহর ‘উর্দু হবে রাষ্ট্রভাষা’ ঘোষণার প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ বলা যায়। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁকে ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ পাকিস্তানি দুজন ক্যাপ্টেন নাসিম মালিক ও আগা বোখারি উঠিয়ে নিয়ে যায়। নির্যাতনের পর ১৪ এপ্রিল তাঁকে হত্যা করা হয়।