যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিতে জো বাইডেন সপরিবারে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে পৌঁছেছেন। ওয়াশিংটনে যাত্রার আগে ডেলাওয়ার অঙ্গরাজ্যের নিউ ক্যাসেল শহরে আবেগঘন বক্তব্য দিয়েছেন ৭৮ বছর বয়সী জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, ‘ডেলাওয়ার অঙ্গরাজ্যের গর্বিত সন্তান হিসেবেই সব সময় আমার পরিচিতি থাকবে।’
স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার বক্তব্য দেন জো বাইডেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে ডেলাওয়ারবাসীর সঙ্গে নিজের সম্পর্কের কথা বলেন বাইডেন। স্মরণ করেন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া তাঁর ছেলেকেও।
ডেলাওয়ারের ন্যাশনাল হেড কোয়ার্টারে দাঁড়িয়ে দেওয়া বক্তৃতায় জো বাইডেন নিজের আবেগের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। অকালপ্রয়াত ছেলে বিউ বাইডেনকে স্মরণ করে বাইডেন বলেন, ধারণা ছিল বিউ একদিন প্রেসিডেন্ট হবেন। জো বাইডেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি যখন মারা যাব, এ ডেলাওয়ার রাজ্য আমার হৃদয়ে লেখা থাকবে।’
২০১৫ সালে নিজের ছেলে অ্যাটর্নি জেনারেল বিউ বাইডেনের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করে জো বাইডেন বলেন, ‘আজকের দিনে আমার একটিই দুঃখ, বেঁচে থাকলে বিউ বাইডেনকে আজ হয়তো প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখা যেত। এত কিছুর পর ডেলাওয়ার অঙ্গরাজ্য দেখিয়ে দিয়েছে সবই সম্ভব।’
আমি যখন মারা যাব, এ ডেলাওয়ার রাজ্য আমার হৃদয়ে লেখা থাকবে।জো বাইডেন
বক্তব্য দেওয়ার সময় বাইডেনের পরনে ছিল কালো কোট। শীতের সকালে দেওয়া বক্তব্যে অতীতের কথা স্মরণ করেন তিনি। বলেন, তাঁর মা–বাবা চরম অর্থনৈতিক দুরবস্থার মধ্যে এই রাজ্যে বসতি শুরু করেন। মার্কিন সিনেটে ডেলাওয়ারের হয়ে ৩০ বছর দায়িত্ব পালনের আগে নিউ ক্যাসল এলাকা থেকে কাউন্সিলর হওয়ার কথা জো বাইডেন তাঁর বক্তৃতায় স্মরণ করেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন আট বছর—স্মরণ করেন সে কথাও।
বাইডেন বলেন, তাঁর জীবনের সব সময়ে, ভালো ও খারাপ সময়ে ডেলাওয়ার অঙ্গরাজ্যের লোকজন পাশে ছিল। বাইডেন পরিবারের পাশে থেকেছে এই অঙ্গরাজ্যের মানুষ। এটি তাঁর জীবনের চরম পাওয়া বলে বাইডেন উল্লেখ করেন।
ডেলাওয়ারের সফল রাজনীতিবিদ বাইডেনের জীবনে দুঃখ রয়েছে। ১৯৭২ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় বাইডেন তাঁর প্রথম স্ত্রী ও কন্যাসন্তানকে হারান। মার্কিন সেনাসদস্য হিসেবে তাঁর ছেলে বিউ বাইডেন ব্রোঞ্জপদক পেয়েছিলেন। ডেমোক্রেটিক পার্টির উদীয়মান রাজনৈতিক তারকা হিসেবে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়েছিল। অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন। ২০১৫ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে অল্প দিনেই মারা যান বিউ বাইডেন। এ কারণে সুযোগ থাকার পরও ২০১৬ সালের নির্বাচনে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করতে অস্বীকার করেছিলেন।
বাইডেন তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় বলেন, ‘এই অঙ্গরাজ্য আমাদের অনেক দিয়েছে। আমার মা–বাবার সবচেয়ে প্রয়োজনের সময় এই ডেলাওয়ার অঙ্গরাজ্য তাঁদের থাকার সুযোগ করে দিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই অঙ্গরাজ্য আমাকে নিজের প্রতি আস্থা রাখার সুযোগ দিয়েছে। আমাকে সিনেটে পাঠিয়েছে রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য। এই রাজ্য আমাকে জিল বাইডেনকে (বর্তমান স্ত্রী) খুঁজে পাওয়ার সুযোগ দিয়েছে। এ রাজ্য আমার ছেলে বিউকে ভালোবাসা দেখিয়েছে।’
জো বাইডেনের বক্তব্যের সময় সেখানে উপস্থিত অনেককে অশ্রুসিক্ত হতে দেখা যায়।
আজ বুধবার ওয়াশিংটন সময় মধ্যদুপুরে (বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা) যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন জো বাইডেন। কংগ্রেস ভবন পেছনে রেখে নির্মিত হয়েছে সুউচ্চ মঞ্চ। এই মঞ্চে দাঁড়িয়েই শপথ নেবেন বাইডেন। তাঁর সঙ্গে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন কমলা হ্যারিস। তাঁদের শপথ পড়াবেন যথাক্রমে প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস ও বিচারপতি সোনিয়া সটোমাইয়র।
এই অঙ্গরাজ্য আমাকে নিজের প্রতি আস্থা রাখার সুযোগ দিয়েছে। আমাকে সিনেটে পাঠিয়েছে রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য। এই রাজ্য আমাকে জিল বাইডেনকে (বর্তমান স্ত্রী) খুঁজে পাওয়ার সুযোগ দিয়েছে। এ রাজ্য আমার ছেলে বিউকে ভালোবাসা দেখিয়েছে।জো বাইডেন
অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন হাজারখানেক অতিথি, যাঁদের অধিকাংশই কংগ্রেস সদস্য ও বাইডেন-হ্যারিস পরিবারের লোকজন। থাকবেন বিদায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ অনুষ্ঠানের তিন ঘণ্টা আগে স্ত্রী মেলানিয়াসহ ওয়াশিংটন ছেড়ে চলে যাবেন ফ্লোরিডায়।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু ছাড়িয়েছে চার লাখ। বিভিন্ন দিক দিয়ে বিভক্ত আমেরিকার সমাজ ও রাজনীতি। এ পরিস্থিতিতে নতুন দিনের আহ্বান জানিয়ে আসছেন কর্মজীবী পরিবার থেকে আসা বাইডেন।