অবৈধ অভিবাসীদের জন্য কঠিন বার্তা দিয়ে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে ভালো বক্তৃতা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে স্টেট অফ ইউনিয়ন বক্তৃতায় সাদা পোশাক পরা ডেমোক্র্যাটরাও প্রেসিডেন্টকে অভিনন্দন জানাতে বারবার দাঁড়িয়েছেন। হিসেবি বক্তৃতায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর সমর্থকদের লক্ষ্য করেই মোক্ষম সব কথা বলে ফেলেছেন। বলেছেন, যুদ্ধ বন্ধের কথা। আফগানিস্তান থেকে সৈন্য নিয়ে আসার কথা। দেশের মানুষের নিরাপত্তার জন্য অবৈধ আর অপরাধীদের অনুপ্রবেশ বন্ধের কথা।
ট্রাম্প তাঁর দ্বিতীয় দফা নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুতের চমৎকার পারফরমেন্স দেখিয়েছেন স্টেট অফ ইউনিয়ন বক্তৃতায়। বক্তৃতায় তিনি নিজের সাফল্যের কথা বলেছেন। দেশের বেকারত্বের হার হ্রাস, কর্মজীবীদের কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগসহ অর্থনীতিতে চাঞ্চল্যের কথা তিনি তুলে ধরেন। বলেছেন, মার্কিন অর্থনীতিতে আশ্চর্য সব ঘটনা ঘটছে। বোকার মতো যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া, নোংরা রাজনীতি আর দলীয় তদন্ত অর্থনীতির এই বিস্ময়কর উত্থানকে থমকে দিতে পারে। তালেবানের সঙ্গে আলাপ চলছে, কথাটি জানিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, আফগানিস্তান থেকে সৈন্য ফিরিয়ে আনা হবে।
ক্ষমতায় আসার পর দ্বিতীয়বারের মতো দেওয়া স্টেট অফ ইউনিয়ন বক্তৃতায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রাজনৈতিক ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। দেয়াল নির্মাণে তাঁর অটল অবস্থা ঘোষণা করেছেন। তাঁর স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণে দেশের বাণিজ্য, অর্থনীতি, রাজনীতি, অভিবাসীসহ বিভিন্ন ইস্যুতে মতামত তুলে ধরেছেন। তিনি দেশের দক্ষিণাঞ্চলে মাদক, চোরাচালান, নারী ও শিশু পাচার ঠেকাতে মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। বৈধ অভিবাসীদের জন্য আমেরিকার কোনো বাধা নেই বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
‘চুজিং গ্রেটনেস’ বা মহত্ত্বকে বেছে নেওয়া—বিষয়বস্তু নিয়ে জাতির উদ্দেশে ট্রাম্প ভাষণ দেন। কংগ্রেসের সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদ—দুই কক্ষের সদস্যসহ অতিথিরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ডেমোক্রেটিক পার্টির নারী সদস্যরা সাদা পোশাক পরে উপস্থিত হন। এবারের কংগ্রেসে সর্বোচ্চসংখ্যক নারী সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় অভিনন্দন জানান ট্রাম্প। ওই সময় বিপুল করতালি দিয়ে এতে সমর্থন দেন নারী সদস্যরা।
ভাষণে রাজনৈতিক ঐক্যের ডাক দিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘দশকের পর দশক ধরে চলতে থাকা রাজনৈতিক অচলাবস্থা একসঙ্গে আমরা ভাঙতে পারি। পুরোনো বিভক্তিতে সেতু তৈরি করতে পারি, পুরোনো ক্ষত নিরাময় করতে পারি, নতুন সংযোগ স্থাপন করতে পারি।’
অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ওষুধের মূল্য কমানো, শিশুদের ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইসহ সম্ভাবনাময় খাতে চুক্তির ব্যাপারে রাজনৈতিক ঐক্যের বিষয়ে তুলে ধরেন তিনি।
ট্রাম্প বলেন, অবৈধ অভিবাসনের মূল্য চুকাতে হয় আমেরিকার শ্রমজীবী নাগরিকদের। যারা বাড়ির কঠিন বেষ্টনীতে নিরাপদ থাকেন, মূল্য দিতে হয় অন্যদের। ওই সময় দর্শকসারিতে আমন্ত্রিত এক নারীর দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, একজন অবৈধ অভিবাসী নেভাদায় ওই নারীর বাবা-মাকে হত্যা করেছিল। খুবই বিপজ্জনক সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণে আর কোনো আমেরিকানের জীবন এভাবে হারাতে দেওয়া উচিত নয়।
ট্রাম্প বলেন, তিনি সিরিয়া ও আফগানিস্তান যুদ্ধে মার্কিন সম্পৃক্ততার সমাপ্তি টানার লক্ষ্যে এগোচ্ছেন। প্রায় দুই দশকে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধে সাত হাজার মার্কিন সেনা নিহত হয়েছে আর আমেরিকার ব্যয় হয়েছে সাত ট্রিলিয়ন ডলার।