যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি আন্দোলন কেবল শুরু করেছেন। আমেরিকাকে মহৎ করার আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে তিনি নতুন প্রশাসনের প্রতি তাঁর শুভকামনা জানিয়েছেন।
হোয়াইট হাউস থেকে স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার ট্রাম্পের বিদায়ী ভিডিও বার্তা প্রচার করা হয়। এই ভিডিও বার্তায় ট্রাম্প একবারের জন্যও তাঁর উত্তরসূরি জো বাইডেনের নাম উল্লেখ করেননি। তিনি তাঁর আগের অবস্থান বজায় রেখে বাইডেনকে কোনো অভিনন্দনও জানাননি।
চার বছরের শাসনের শেষ দিনে ট্রাম্প যখন তাঁর বিদায়ী বার্তা দিলেন, তখন আমেরিকায় করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা চার লাখ ছাড়িয়ে গেছে। তবে ট্রাম্প তাঁর বিদায়ী বার্তায় যুক্তরাষ্ট্রে দ্রুত করোনার টিকা নিয়ে আসার জন্য নিজের সাফল্যের কথা বলেন। যদিও আমেরিকার অধিকাংশ লোকজন মনে করেন, করোনা মোকাবিলায় ট্রাম্প চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন।
চার বছর আগে একজন বহিরাগত হিসেবে ওয়াশিংটনে এসেছিলেন ট্রাম্প। আগে ধারণ করা বিদায়ী বক্তৃতায় তিনি তাঁর সাফল্যের কথা তুলে ধরেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি এখানে যা করার জন্য এসেছিলাম, তার চেয়ে বেশি করেছি।’
ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি নিজে কঠিন লড়াই করেছেন। কঠিন সব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারণ, জনগণ তাঁকে এসব করার জন্যই নির্বাচিত করেছিলেন।
কারও নাম উল্লেখ না করে ট্রাম্প নতুন প্রশাসনের সাফল্য কামনা করেন। নতুন প্রশাসনের জন্য সৌভাগ্য কামনা করেন। ট্রাম্প বলেন, ‘সৌভাগ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ!’
ট্রাম্প ফার্স্ট লেডি মেলানিয়াসহ তাঁর পরিবারের সদস্য ও প্রশাসনের লোকজনকে ধন্যবাদ জানান। ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিদায়ী শুভেচ্ছা জানান।
যদিও ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স বুধবার সকালে ট্রাম্পের বিদায় অনুষ্ঠানে থাকছেন না বলে তাঁর অফিস থেকে জানানো হয়েছে; তবে মাইক পেন্স বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানে থাকছেন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প আমেরিকার জনগণের উদ্দেশে দেওয়া শেষ বক্তৃতায় বলেন, ‘আমি নিঃশঙ্ক ও আনন্দচিত্তে চলে যাচ্ছি। সর্বোচ্চ আশাবাদ নিয়ে বলছি, আমাদের দেশ ও সন্তানদের জন্য সেরাটা এখনো অর্জিত হয়নি।’
‘ঈশ্বর আপনাদের মঙ্গল করুন, ঈশ্বর যুক্তরাষ্ট্রের মঙ্গল করুন’—এ কথা বলে ট্রাম্প তাঁর বক্তৃতা শেষ করেন।
বুধবার সকালেই ট্রাম্প হোয়াইট হাউস ছেড়ে যাবেন। সামরিক স্থাপনা অ্যান্ড্রু বেস থেকে শেষ সামরিক অভিবাদন নিয়ে তিনি ফ্লোরিডার মার এ লাগোতে চলে যাবেন। ট্রাম্প আগেই জানিয়েছেন, তিনি বাইডেনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে থাকবেন না।
আমেরিকার ১৫২ বছরের ইতিহাসে পূর্বসূরির অনুপস্থিতিতে কোনো নতুন প্রেসিডেন্ট শপথ নিতে যাচ্ছেন। বাইডেন শপথ গ্রহণ করবেন স্থানীয় সময় বুধবার দুপুরে।
জো বাইডেন ও কমলা হ্যারিস তাঁদের পরিবার নিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীতে পৌঁছেছেন। প্রথম কাজ হিসেবে তাঁরা করোনায় মারা যাওয়া চার লাখের বেশি মানুষকে স্মরণ করেছেন। লিংকন মেমোরিয়ালে দাঁড়িয়ে জো বাইডেন, জিল বাইডেন, কমলা হ্যারিস ও তাঁর স্বামী ডাগলাস এমহফ যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের স্মরণ করেন।
বাইডেন বলেছেন, ‘এমন করে স্মরণ করার কাজ খুবই কঠিন। জাতির জন্য এমন স্মরণ খুবই জরুরি। যারা মারা গেছে, তাদের কারণেই আজ আমরা এখানে।’
লিংকন মেমোরিয়ালে বাইডেনের বক্তৃতার সময় ওয়াশিংটন ডিসির আকাশে সূর্য ডুবছিল। এই সূর্যাস্ত যেন ট্রাম্পের শাসনামলের সমাপ্তির প্রতীকী বার্তা দিচ্ছিল।
বাইডেন আমেরিকার জনগণকে অন্ধকারে আলো প্রজ্বালনের আহ্বান জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস ক্যাপিটল হিলের পশ্চিম বহিরাঙ্গনে বাইডেনকে শপথ পড়াবেন। এ সময় উপস্থিত থাকবেন বিদায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি, সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, জর্জ বুশ ও সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে নজিরবিহীন নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বাইডেনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হতে যাচ্ছে।
লাখো মানুষের বদলে এবার প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে হাজারখানেক লোকজন থাকবেন। আইনপ্রণেতা, বিচার ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে থাকার অনুমতি পেয়েছেন। তাঁরাও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মাস্ক পরে উপস্থিত থাকবেন।
শপথ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা পড়েছে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি। ২৫ হাজারের বেশি সেনাসদস্যে টহল দিচ্ছেন। আট অঙ্গরাজ্য থেকে যোগ দিয়েছেন পুলিশের সদস্যরা। নিরাপত্তার কড়াকড়িতে ওয়াশিংটন ডিসি এখন কার্যত অবরুদ্ধ।
নিরাপত্তায় নিয়োজিত লোকজনের মধ্য থেকে কোনো সহিংসতা বা আত্মঘাতী কাজ হতে পারে কি না, তা নিয়ে সরকারের নানা সংস্থা তৎপর রয়েছে। নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত লোকজনকে নানাভাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে।
১৯ জানুয়ারি জানানো হয়, ওয়াশিংটন ডিসিতে নিরাপত্তায় নিয়োজিত ১২ জন সেনাসদস্যকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। গোয়েন্দা পর্যালোচনায় তাঁদের ব্যাপারে সন্দেহজনক মনোভাবের পরিচয় পাওয়া গেছে বলে জানানো হয়।
সেনা জেনারেল ড্যানিয়েল হোকানসন এসব জানিয়ে বলেছেন, সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবেই এসব লোকজনকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
নাশকতা সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই বলে আগেই জানানো হয়েছে।
মার্কিন বিচার বিভাগ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ফেডারেল, অঙ্গরাজ্য ও স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ শপথ অনুষ্ঠান নিশ্চিত করা হয়েছে।
১৯ জানুয়ারি কংগ্রেসের সভায় সিনেটের বিদায়ী রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে সহিংসতার জন্য ট্রাম্পকে দায়ী করেন। তিনি বলেছেন, ট্রাম্প ও অন্য প্রভাবশালীদের মদদেই এমন ঘটনা ঘটেছে।
৬ জানুয়ারির তাণ্ডবের পর ট্রাম্পকে দ্বিতীয় দফা অভিশংসন করে প্রতিনিধি পরিষদ। তাঁর এই অভিশংসন নিশ্চিত হওয়ার জন্য সিনেটে রিপাবলিকানদের সমর্থন প্রয়োজন।
সিনেটে অভিশংসন প্রশ্নে ট্রাম্পের বিপক্ষে অবস্থান নেবেন কি না, সে ব্যাপারে সিনেটর মিচ ম্যাককনেল আগে কোনো আভাস দেননি। কিন্তু মঙ্গলবার ট্রাম্পকে দায়ী তিনি বক্তৃতা দেন। এই বক্তৃতার পর তাঁর অবস্থান ট্রাম্প-সমর্থকদের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।