সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করলে রিপাবলিকান পার্টির অর্ধেক লোক তাঁদের বর্তমান দল ছেড়ে যাবেন। রিপাবলিকান পার্টির ৪৬ শতাংশ লোক দল ত্যাগ করে ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন দলে যোগ দেবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সাফোক ইউনিভার্সিটি পরিচালিত এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ২৭ শতাংশ রিপাবলিকান–সমর্থক বলেছেন, তাঁরা দলে থেকে যাবেন।
২১ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত জনমত জরিপে পরিষ্কার হয়ে উঠেছে, আমেরিকার জেগে ওঠা রক্ষণশীলতাকে ধারণ করতে পারছে না বর্তমান রিপাবলিকান পার্টি।
শ্বেতাঙ্গপ্রধান রাজনৈতিক দলে এখন ট্রাম্পের মধ্যেই রক্ষণশীল লোকজন তাঁদের আস্থা খুঁজে পাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের মানচিত্র দেখলে সহজেই অনুমান করা যায়, রক্ষণশীলতার তীব্রতা দক্ষিণে বেশি। রিপাবলিকান পার্টিকে নিজের অস্তিত্বের জন্য দক্ষিণে যাত্রা অব্যাহত রাখতে হচ্ছে।
নভেম্বরে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প দক্ষিণের অঙ্গরাজ্যগুলোয় অনেক ভোট পেয়েছেন। কোথাও কোথাও ভোটপ্রাপ্তির হার অতীতের সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে।
জরিপের ফলাফল প্রকাশের পর সংবাদে বলা হয়েছে, রিপাবলিকান–সমর্থকেরা মনে করেন, দল তাঁদের জন্য কঠিন লড়াই করতে ব্যর্থ হয়েছে। ট্রাম্প মার্কিন রক্ষণশীলতার পক্ষে কঠিন লড়াই চালিয়েছেন বলে বহু রিপাবলিকানের অভিমত।
এ ছাড়া অনেক তরুণ রিপাবলিকান মনে করেন, দীর্ঘদিন ধরে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান পার্টি পরিচালনার জন্য একটি বনেদি রাজনৈতিক গোষ্ঠী গড়ে উঠেছে। এই গোষ্ঠী একে অপরের সঙ্গে আপস করেই রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় বলে উভয় দলেই অসন্তোষ রয়েছে।
ট্রাম্প এখনো তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা খোলাসা করেননি। ২০ জানুয়ারি ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার দিন তিনি বলেছিলেন, দ্রুতই আবার দেখা হবে। ইতিমধ্যে তাঁর সমর্থকেরা প্রচার করতে শুরু করেন, ট্রাম্প নিজেই একটি আলাদা দল গঠন করবেন।
যদিও ট্রাম্পের রাজনৈতিক উপদেষ্টা জেসন মিলার বলেছেন, এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বা এখনই এমন কোনো পদক্ষেপ ট্রাম্প গ্রহণ করছেন না। আসন্ন মধ্যবর্তী নির্বাচনে কংগ্রেসে রিপাবলিকান পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আসাকেই ট্রাম্প গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে মিলার উল্লেখ করেছেন।
সিনেটে অভিশংসন আদালতের দণ্ড থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর ট্রাম্প বলেছিলেন, তাঁর ‘মেক আমেরিকা গ্রেট’ আন্দোলনকে আরও তীব্রতর করা হবে।
কংগ্রেসে ১০ জন ও সিনেটে ৭ জন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা ট্রাম্পের বিপক্ষে ভোট দিয়েছিলেন। সিনেটে রিপাবলিকান পার্টির নেতা মিচ ম্যাককনেল ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিলেও বিপক্ষে ভোট দেননি। ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে হামলার জন্য ট্রাম্পের নৈতিক দায় রয়েছে—এমন বক্তব্য দিয়ে উল্টো রোষানলে পড়েন সিনেটর মিচ ম্যাককনেল।
ট্রাম্প বলেছেন, মিচ ম্যাককনেলের মতো নেতার সঙ্গ পরিহার না করলে রিপাবলিকান পার্টি কখনোই জয়ী হতে পারবে না।
ট্রাম্প বলেছেন, আসন্ন মধ্যবর্তী নির্বাচনে তাঁর ‘মেক আমেরিকা গ্রেট’ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানানো প্রার্থীদের পক্ষে তিনি অবস্থান নেবেন।
দল গঠনের ঘোষণা না দিলেও ট্রাম্প মার্কিন রক্ষণশীল রাজনীতির সোচ্চার ও বেপরোয়া নেতা হিসেবে দলের একটি অংশের কাছে বিকল্পহীন হয়ে উঠেছেন।
নানা কারণে এখনো চাপে আছেন ট্রাম্প। তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ঝামেলাগুলো কতটা পথ গড়ায়, তা দেখার অপেক্ষা করছেন তিনি।
ট্রাম্প রিপাবলিকান পার্টিকে নিজের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে চেষ্টা করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। তা করতে ব্যর্থ হলে নিজেই আলাদা রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলবেন। ট্রাম্পের জন্য উভয় সম্ভাবনাই জোরালো বলে মার্কিন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে মন্তব্য করা হচ্ছে।