সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর ম্যাজিক দিয়ে রিপাবলিকান পার্টিকে শক্তিশালী করতে পারেন, আবার ধ্বংসও করে দিতে পারেন বলে মন্তব্য করেছেন সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম। রাজনীতিবিষয়ক সংবাদমাধ্যম এক্সিওসকে দেওয়া এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পের বর্তমান সময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু সিনেটর গ্রাহাম এ মন্তব্য করেন। সাক্ষাৎকারে রিপাবলিকান পার্টির জন্য ট্রাম্পের ভূমিকা তুলে ধরেন তিনি। পাশাপাশি ট্রাম্পের সঙ্গে নিজের সম্পর্কের নানা দিকও উপস্থাপন করেন গ্রাহাম।
গ্রাহাম সাক্ষাৎকারে বলেন, অন্য কেউ যা করতে পারবেন না, দলের জন্য ট্রাম্প তা করতে পারবেন। তিনি রিপাবলিকান পার্টিকে বড় করতে পারবেন। দলকে শক্তিশালী করে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর দল হিসেবে গড়ে তুলতে পারবেন। আবার রিপাবলিকান পার্টিকে নিঃশেষও করে দিতে পারেন তিনি।
সাউথ ক্যারোলাইনা থেকে নির্বাচিত রিপাবলিকান সিনেটর গ্রাহাম ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের কড়া সমালোচক ছিলেন। ট্রাম্প নির্বাচিত হলে দেশের চরম ক্ষতি হবে বলেও তখন উল্লেখ করেছিলেন তিনি। ওয়াশিংটনের রাজনীতি দ্রুত বদলায়। ট্রাম্পের সঙ্গেও লোকজনের সম্পর্কের পারদ ওঠানামা করে বেশ দ্রুততার সঙ্গে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় থাকার সময় ট্রাম্পের বিশ্বস্ত বন্ধু হয়ে ওঠেন সিনেটর গ্রাহাম। তাঁরা একসঙ্গে গলফ খেলেন। নানা পরামর্শ করেন।
গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প হেরে যাওয়ার পর যখন প্রায় সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন, তখনো সিনেটর গ্রাহাম ছিলেন ট্রাম্পের গলফ খেলার নিত্যসঙ্গী।
গত ৬ জানুয়ারি ট্রাম্পের উসকানিতে তাঁর উগ্র সমর্থকেরা ক্যাপিটল হিলে হামলা চালান। এই হামলার পর পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টে যায়। সিনেটর গ্রাহাম কিছু সময়ের জন্য নিজেকে বন্ধু ট্রাম্পের কাছ থেকে সরিয়ে নেন। তিনি ট্রাম্পের সমর্থনে কোনো বক্তৃতা দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। অবশ্য সিনেটে দ্বিতীয় দফা অভিশংসন আদালতে ট্রাম্পের দণ্ড না পাওয়ার পক্ষে যে ৪৩ জন রিপাবলিকান ভোট দিয়েছিলেন, তার মধ্যে সিনেটর গ্রাহাম একজন।
৭ মার্চ হঠাৎ ট্রাম্প ফ্লোরিডা থেকে নিউইয়র্ক সফর করেন। তার আগে পত্রিকায় খবর বের হয়, রিপাবলিকান পার্টির তহবিল সংগ্রহ করার প্রচারে ট্রাম্প তাঁর নাম ব্যবহার না করার জন্য নোটিশ দিয়েছেন।
জাতীয় জনমত জরিপে ট্রাম্প যে অবস্থানেই থাকুন, রিপাবলিকান পার্টি এখন তাঁর কবজায়। আগামী মধ্যবর্তী নির্বাচন পর্যন্ত ট্রাম্পের প্রভাব থেকে দলটির বেরিয়ে আসার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
অভিশংসন আদালতে দণ্ড না পাওয়ায় ট্রাম্পের ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আবার প্রার্থী হওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়নি। ট্রাম্প নিজেও তাঁর বক্তৃতা-সাক্ষাৎকারে আবার প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করে রাখছেন।
সিনেটর গ্রাহাম বলেছেন, ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গার ঘটনার আগে ট্রাম্প তাঁর বন্ধু ছিলেন। দাঙ্গার পর বন্ধু ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন গ্রাহাম। নিজেকে ট্রাম্পের বন্ধু হিসেবে এখনো বিবেচনা করেন তিনি।
গ্রাহাম বলেছেন, ৬ জানুয়ারি আমেরিকার ইতিহাসে একটি কালো দিন। তবে আমেরিকা কালো এই অধ্যায়কে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সিনেটর গ্রাহাম সাক্ষাৎকারে বলেছেন, রিপাবলিকান পার্টি ট্রাম্পের সঙ্গেই ভালো থাকবে, ট্রাম্প ছাড়া নয়।
এক্সিওসের সাংবাদিক জনাথন সওয়ান ট্রাম্পের নির্বাচন নিয়ে ভুয়া দাবির কথা জিজ্ঞেস করেন সিনেটর গ্রাহামকে। নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর কারচুপির ভুয়া দাবি এখনো কেন করছেন ট্রাম্প—এমন প্রশ্নের উত্তরে গ্রাহাম বলেছেন, ট্রাম্প যা শুনতে চান, তা তিনি প্রতিদিনই বলে থাকেন।
প্রয়াত সিনেটর জন ম্যাককেইনকে লক্ষ্য করে ট্রাম্পের আক্রমণ অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে তাঁর পরাজয়ের কারণ বলে মনে করেন সিনেটর গ্রাহাম। ভিয়েতনাম যুদ্ধে শত্রুর হাতে ম্যাকেইনের ধরা পড়া নিয়েও বিদ্রূপ করেছিলেন ট্রাম্প।
২০২৬ সালের আগে নির্বাচন করতে হচ্ছে না সিনেটর গ্রাহামকে। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, ট্রাম্পের সঙ্গ ত্যাগ করতে পারবেন কি না? উত্তরে গ্রাহাম বলেন, বিষয়টি একদম সহজ। কালই বলতে পারবেন, যথেষ্ট হয়েছে!
সিনেটর গ্রাহাম বলেছেন, দেশের ভালোর জন্য একটা আন্দোলন ত্যাগ করতে তিনি ইচ্ছুক নন। এই আন্দোলনের নেতা ট্রাম্প। তাঁর মাধ্যমে ভালো কিছু দেশের জন্য করা যায় কি না, এ নিয়ে চেষ্টা করছেন বলে গ্রাহাম তাঁর সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেন।
রিপাবলিকান পার্টির নেতাদের মধ্যে মিট রমনি বা প্রয়াত সিনেটর জন ম্যাককেইন যা পারেননি, ট্রাম্প তা করতে পারছেন বলে গ্রাহাম মনে করেন। সাম্প্রতিক আমেরিকার ইতিহাসে রিপাবলিকান পার্টির জনপ্রিয় নেতা রোনাল্ড রিগ্যানের কাছাকাছি ট্রাম্পের অবস্থান বলে মনে করেন গ্রাহাম।
আমেরিকার রাজনীতিতে এখন ভিন্ন ঢেউ। রিপাবলিকান পার্টিতে মধ্যপন্থীরা কোণঠাসা হয়ে আছেন। একইভাবে মধ্যপন্থী ডেমোক্র্যাটদের অবস্থাও ভালো নেই। অতি রক্ষণশীলতার দিকে ঝুঁকে পড়া রিপাবলিকান পার্টির অঘোষিত নেতা ট্রাম্প। তাঁর মাধ্যমেই এই দলকে এগিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন দেখছেন রিপাবলিকান পার্টির রক্ষণশীল ঘরানার নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা। সিনেটর গ্রাহামের মাধ্যমে তাঁদের আকাঙ্ক্ষার কথাই উঠে এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে।