ট্রাম্প আটকাতে পারলেন না সেই সাংবাদিককে

হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প ও অ্যাকোস্টার বাদানুবাদের সময় একজন ইন্টার্ন তরুণী এসে অ্যাকোস্টার মাইক্রোফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। ছবি: রয়টার্স
হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প ও অ্যাকোস্টার বাদানুবাদের সময় একজন ইন্টার্ন তরুণী এসে অ্যাকোস্টার মাইক্রোফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। ছবি: রয়টার্স

আদালতের নির্দেশে সিএনএনের প্রতিবেদক জিম অ্যাকোস্টা হোয়াইট হাউসে সাময়িকভাবে প্রবেশাধিকার ফিরে পেয়েছেন। গতকাল শুক্রবার অ্যাকোস্টার পক্ষে ফেডারেল বিচারপতি টিমোথি জে কেলি সাময়িকভাবে এ প্রবেশাধিকার মঞ্জুর করেন।

সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বাদানুবাদের জের ধরে জিম অ্যাকোস্টার হোয়াইট হাউসে ঢোকার ‘প্রেস পাস’ বাতিল করে ট্রাম্প প্রশাসন।

সিএনএনের খবরে জানানো হয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখন হোয়াইট হাউসের প্রতিবেদকদের জন্য ‘নিয়মনীতি’ তৈরি করবেন বলে জানিয়েছেন। সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, হোয়াইট হাউসে ‘আপনাদের শিষ্টাচার চর্চা করতে হবে’।

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনের সার্বিক বিষয় নিয়ে ৭ নভেম্বর হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে সিএনএনের হোয়াইট হাউসবিষয়ক প্রতিবেদক জিম অ্যাকোস্টা অভিবাসী ইস্যুতে ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন। এতে উভয়ের মধ্যে বাদানুবাদ শুরু হয়। একপর্যায়ে সাংবাদিক জিম অ্যাকোস্টার মাইক্রোফোন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন হোয়াইট হাউসের এক ইন্টার্ন তরুণী। পরে এই ঘটনায় অ্যাকোস্টার হোয়াইট হাউসে ঢোকার প্রেস পাস বাতিল করা হয়।

তবে ট্রাম্প কেন অ্যাকোস্টার ওপর এত খেপেছিলেন? ভিডিওতে দেখা গেছে, ৭ নভেম্বরের সংবাদ সম্মেলনে অ্যাকোস্টার প্রশ্ন শুনেই বিরক্ত হন ট্রাম্প। প্রতিবেদক তাঁকে বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিকে আপনার একটি বক্তব্যকে আমি চ্যালেঞ্জ করতে পারি।’ প্রশ্নের মাঝে মাঝে বিরক্তি প্রকাশ করে প্রতিবেদককে প্রশ্ন চালিয়ে যেতে বলেন ট্রাম্প। প্রশ্নকর্তা আবার বলেন, ‘যদি আপনি কিছু মনে না করেন মি. প্রেসিডেন্ট, আপনি ক্যারাভানকে (অভিবাসনপ্রত্যাশীদের দল বেঁধে সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে যাত্রা) অনধিকার প্রবেশ বলেছিলেন।’ ট্রাম্প ওই সময় বলেন, ‘আমি সেটাকে অনধিকার প্রবেশ বলে মনে করি।’ প্রতিবেদক পাল্টা বলেন, ‘এটা অনধিকার প্রবেশ নয়, তাঁরা শত শত মাইল দূরে।’

ওই সময় ট্রাম্প রেগে গিয়ে বলেন, ‘সত্যি বলছি, আমাকে দেশ চালাতে দিন, আপনি সিএনএন চালান। আপনি সেটা ভালোভাবে করলে রেটিংয়ে আরও ভালো করবেন।’

ট্রাম্প ‘যথেষ্ট হয়েছে’ বলে মন্তব্য করে পরবর্তী প্রশ্ন নেওয়ার জন্য অন্য সাংবাদিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ওই সময় অ্যাকোস্টা বলেন, ‘মি. প্রেসিডেন্ট, আমি কি আরেকটি প্রশ্ন করতে পারি। আপনি কি চিন্তিত?’ প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প চারবার বলেন, ‘যথেষ্ট হয়েছে’। তিনি আরও বলেন, ‘আমি আপনাকে বলছি, সিএনএনের লজ্জা পাওয়া উচিত যে আপনি তাদের জন্য কাজ করেন। আপনি রূঢ় ও ভয়াবহ এক মানুষ। আপনার সিএনএনে কাজ করা উচিত নয়।’

সিএনএনের হোয়াইট হাউসবিষয়ক প্রধান প্রতিবেদক জিম অ্যাকোস্টা। ছবি: টুইটার

ওই সময় প্রতিবেদক বলেন, ‘আমি মনে করি, এটা অশোভন।’ ট্রাম্প বলেন, ‘আপনি অন্য লোকের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করেন, তা ভয়াবহ। কারও সঙ্গে এভাবে আচরণ করা উচিত নয়।’

এই বাদানুবাদের একপর্যায়ে হোয়াইট হাউসের এক ইন্টার্ন নারী অ্যাকোস্টার মাইক্রোফোন ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন।

পরে এক বিবৃতিতে প্রেস সেক্রেটারি সারা স্যান্ডার্স অভিযোগ করেন, ওই সময় অ্যাকোস্টা ওই নারীর গায়ে হাত দিয়েছিলেন, যা যথাযথ ছিল না।

গতকাল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আচরণবিধির জন্য নিয়মনীতি ইত্যাদি লেখা শুরু করা হচ্ছে। এটা কোনো বড় বিষয় নয়। কেউ অসদাচরণ করলে তাঁকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হবে অথবা সংবাদ সম্মেলন বন্ধ করে দেওয়া হবে।

এদিকে প্রেস পাস বাতিলের ঘটনায় সিএনএন ও জিম অ্যাকোস্টা বাদী হয়ে ১৩ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, তাঁর প্রশাসনের চিফ অব স্টাফ জন কেলি, প্রেস সেক্রেটারি সারা স্যান্ডার্স, ডেপুটি চিফ অব স্টাফ বিল শাইন, সিক্রেট সার্ভিস ডিরেক্টর জোসেফ ক্ল্যান্সি ও সিক্রেট সার্ভিসের কর্মকর্তা জন ডো—এই ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

এদিকে গতকাল প্রাপ্ত আদালতের নির্দেশকে সিএনএনের জন্য প্রাথমিক বিজয় বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

মামলায় সিএনএন ও অ্যাকোস্টা মার্কিন সংবিধানের প্রথম ও পঞ্চম সংশোধনী অনুসারে অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করেন। তবে বিচারপতি গতকাল যে নির্দেশ দিয়েছেন, তাতে তিনি এই মামলার পক্ষে রুল জারি করেননি। সিএনএনের অনুরোধে পঞ্চম সংশোধনীর আলোকে বিচারক সাময়িকভাবে অ্যাকোস্টার প্রবেশাধিকার মঞ্জুর করেছেন।

গতকাল বিকেলে অ্যাকোস্টা তাঁর প্রেস পাস ফিরে পেয়েছেন।

অ্যাকোস্টার প্রশ্ন শোনার সময় ট্রাম্পের অভিব্যক্তি। ছবি: টুইটার

সিএনএন বনাম ট্রাম্পের এই মামলা যুক্তরাষ্ট্রে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হয়ে থাকবে বলে সিএনএনের খবরে বলা হয়। গতকাল সকালে বিচারক কেলি মামলার শুনানিতে প্রায় ২০ মিনিট ধরে তাঁর লিখিত মতামত পড়ে শোনান। তিনি সিএনএনের পক্ষ নিয়ে বলেন, পঞ্চম সংশোধনী অনুসারে, হোয়াইট হাউস অ্যাকোস্টার প্রেস পাস নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ বৈধ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেনি। তিনি আরও বলেন, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণের মাধ্যমে অ্যাকোস্টার পাস প্রত্যাহার করে নেওয়ার পথ খোলা রয়েছে হোয়াইট হাউসের।

সিএনএনের মতে, এ কারণেই হয়তো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘নিয়মনীতি’ তৈরির কথা বলেছেন।

নানা সমালোচনার কারণে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের ওপর বেশ খ্যাপা ট্রাম্প। তাঁর অপছন্দের গণমাধ্যমের মধ্যে সিএনএন একটি।