ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বলায় তিন নেতাকে তিরস্কার

ডোনাল্ড ট্রাম্প
ফাইল ছবি।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে মার্কিন প্রশাসন ডোনাল্ড ট্রাম্প জমানার শেষ হলেও রিপাবলিকান দলে তাঁর প্রভাব এখনো অক্ষুণ্ন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের বিজয়কে প্রতিহত করতে ট্রাম্পের নেওয়া পদক্ষেপের বিরোধিতা করা তিন নেতাকে বহিষ্কারের মধ্য দিয়ে সে বার্তাই দিয়ে রাখল অ্যারিজোনার রিপাবলিকান দল।

আজ রোববার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, গেল নির্বাচনে অন্যতম ব্যাটলগ্রাউন্ড অঙ্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত অ্যারিজোনার রিপাবলিকান দল তিন নেতাকে জনসম্মুখে তিরস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই নেতারা হলেন অ্যারিজোনার গভর্নর ডাও ডুসি এবং সাবেক দুই সিনেটর জেফ ফ্লেক ও সিন্ডি ম্যাককেইন। তাঁদের প্রত্যেকেই জো বাইডেনের বিজয়কে প্রতিহত করতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেওয়া পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছিলেন। এর মধ্যে ফ্লেক ও ম্যাককেইন নির্বাচনের আগে ডেমোক্রেটিক দলকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। এখন এই তিন নেতাকে জনসম্মুখে তিরস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অ্যারিজোনা রিপাবলিকান পার্টি। এ বিষয়ে অনুষ্ঠিত ভোটে তিন নেতার বিপক্ষে এমন পদক্ষেপের পক্ষেই ভোট পড়েছে বেশি।

অ্যারিজোনা রিপাবলিকান দলের এই সিদ্ধান্ত শুধু নয় চরম ডানপন্থী হিসেবে পরিচিত ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের কট্টর বিভিন্ন নীতির পক্ষে অবস্থান নেওয়া কেলি ওয়ার্ডকে দলটি আবারও চেয়ারওম্যান নির্বাচিত করেছে। এ দুই পদক্ষেপই বলে দেয় ডোনাল্ড ট্রাম্পের কট্টর পন্থা থেকে রিপাবলিকান দল সহজে নড়ছে না। এটি একই সঙ্গে অ্যারিজোনা রিপাবলিকান দলের মধ্যে তৈরি হওয়া বিভাজনকেও দৃশ্যমান করে, যা ২০২০ সালে অঙ্গরাজ্যে তাদের পরাজয়কে ত্বরান্বিত করেছে।

গত শীতে বহু হিসাব উল্টে দিয়ে জো বাইডেন অ্যারিজোনা জয় করেন। ১৯৯৬ সালের পর এই প্রথম কোনো ডেমোক্র্যাট প্রার্থী অ্যারিজোনা জয় করলেন। আর এটি সম্ভব হয়েছে চরম ডানপন্থী বিভিন্ন নীতি গ্রহণের মধ্য দিয়ে রিপাবলিকান দলের মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুরু করা বিভাজনের সূত্র ধরে।

অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান পার্টি আনুষ্ঠানিকভাবে তিন নেতাকে তিরস্কার জানিয়ে প্রমাণ করে দিল, দলটির একটি অংশ এখনো ট্রাম্পের পক্ষেই অবস্থান করছে। এটি দলের বাকি অংশের মধ্যে এক ধরনের হতাশার সৃষ্টি করেছে। মজার বিষয় হচ্ছে, গভর্নর ডাও ডুসিকে তিরস্কারের আরেকটি কারণ ছিল, অঙ্গরাজ্যে কোভিডের কারণে তিনি জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন। এ ক্ষেত্রে তাঁকে সংবিধান লঙ্ঘনের দোহাই দিয়ে তিরস্কার করা হয়। সাবেক প্রয়াত সিনেটর জন ম্যাককেইনের স্ত্রী সিন্ডি ম্যাককেইনকে তিরস্কার করা হয়, ট্রাম্পকে সমর্থন না জানিয়ে বামপন্থী অবস্থান নেওয়ার কারণে। আদতে তিনি ঘোষণা দিয়ে জো বাইডেনকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। একই কারণে জো বাইডেনকে সমর্থন জানানোয় তিরস্কৃত হয়েছেন জেফ ফ্লেক।

অ্যারিজোনা রিপাবলিকান পার্টির সাবেক নির্বাহী পরিচালক গ্লেন হ্যামার এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করে সিএনএনকে বলেছেন, ‘বোকামো, ভীষণ বোকার মতো পদক্ষেপ। যেসব দল সফল হতে চায়, তাদের মূল লক্ষ্যই থাকে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা, মানুষকে আকৃষ্ট করা। কিন্তু অ্যারিজোনা রিপাবলিকান দল ঠিক তার বিপরীত কাজটিই করছে। এটা নিজেকে ধ্বংস করার মতো একটি বিষয়।’

সিন্ডি ম্যাককেইনের উপদেষ্টা ও প্রতিনিধি পরিষদের সাবেক সদস্য কার্ক অ্যাডামস বলেন, ‘এটা আনুগত্যের ক্ষুদ্র বৃত্তে বাঁধা পড়ার শামিল। আমরা যা দেখছি, তা হলো শুদ্ধি অভিযান। এই শুদ্ধি অভিযানে একটাই প্রশ্ন: যা-ই ঘটুক ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি আপনি অনুগত কিনা? যদি তা না হন, তবে আমরা আপনাকে তিরস্কার করব।’ তিনি বলেন, রিপাবলিকান দলে এখন এমন অনেক লোক রয়েছেন, যারা দলীয় আদর্শের ধার ধারছে না। তারা এক ব্যক্তির প্রতি অনুগত। এই জ্বর কেটে যাবে। কিন্তু যদি তা না হয়, তবে রিপাবলিকান দলের জন্য ভীষণ দুঃসময় অপেক্ষা করছে।’