ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের বলি হবেন শরণার্থীরা

ডোনাল্ড ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শরণার্থীবিষয়ক সর্বশেষ নির্বাহী আদেশ কার্যত তাঁর আগে ঘোষিত শরণার্থী নিষেধাজ্ঞারই ধারাবাহিকতা মাত্র বলে দাবি করেছেন শরণার্থী বিশেষজ্ঞ আইনজীবীরা। তাঁরা বলছেন, এই নিষেধাজ্ঞা অনেক সময় ক্ষেপণ ও অনেক জীবন বিপন্ন করবে। ১২০ দিন স্থগিত থাকার পর শরণার্থী ব্যবস্থা আবার চালু করার জন্য অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগ (ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি) ও ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট নির্দেশ দিয়ে গত ২৪ অক্টোবর ট্রাম্প যে নির্বাহী আদেশে সই করেছেন, তাতে নতুন করে যাচাই-বাছাইয়ের অনেক নিয়ম যোগ করা হয়েছে। পুরো নির্বাহী আদেশটি (https://goo.gl/5s8fJj) এই লিংকে পাওয়া যাবে।

এখানে পাঠকের জ্ঞাতার্থে বলা দরকার, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আমরা অনেকেই শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থী এই দুটি বিষয়কে একত্র করে ফেলি এবং একই বিষয় ভেবে ভুল করি। অথচ শরণার্থী (রিফিউজি) ও আশ্রয়প্রার্থী (অ্যাসাইলাম) সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। শরণার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে আসার জন্য আবেদন করতে হয় আমেরিকার বাইরে থেকে জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) অথবা মার্কিন দূতাবাসের মাধ্যমে। আবেদনকারী অভিবাসন ও নাগরিকত্ব আইনের (অভিবাসী অ্যান্ড জাতীয়তা আইন) ১০১ (৪২) (ক) ধারায় রিফিউজি হিসেবে সংজ্ঞায়িত হলে ওই কর্তৃপক্ষ তখন সেই আবেদন পাঠিয়ে দেয় পাঁচটি ভিন্ন দেশে অবস্থিত শরণার্থী সহায়তা কেন্দ্র রিসেটেলমেন্ট সাপোর্ট সেন্টারে (আরএসসি)। এই বিষয়ে অর্থায়ন করে স্টেট ডিপার্টমেন্টের অধীনে জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসন অধিদপ্তর (ব্যুরো অব পপুলেশন, রিফিউজিস অ্যান্ড মাইগ্রেশন)। এরপর (ক) নিবন্ধন ও তথ্য সংগ্রহ, (খ) নিরাপত্তা তল্লাশি, (গ) অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগে সাক্ষাৎকার (ঘ) বায়োমেট্রিক পরীক্ষা এবং (ঙ) অভ্যন্তরীণ পুনর্বাসন স্থাপনায় পাঠানোর জন্য নির্ধারণের মতো ছয়টি ধাপ শেষ করে একজন শরণার্থী আমেরিকায় ঢোকে। বাংলাদেশ থেকে মার্কিন শরণার্থী প্রবেশ কার্যক্রমের (ইউএস রিফিউজি অ্যাডমিশন প্রোগ্রাম) মাধ্যমে সাধারণত উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় কেউ আসেন না।
অন্যদিকে আশ্রয় চাইতে হয় আমেরিকার প্রবেশের পর অভিবাসন ও নাগরিকত্ব আইনের ২০৮ ধারায়। তাই একজন আশ্রয়প্রার্থী আবেদনকারীর ক্ষেত্রে শরণার্থীদের জন্য জারি হওয়া কোনো নির্বাহী আদেশ প্রযোজ্য নয় এবং হতে পারে না। তাই বাংলাদেশি যেসব পাঠকের আই-৫৮৯, অ্যাপ্লিকেশন ফর অ্যাসাইলাম অ্যান্ড উইথহোল্ডিং অব রিমোভালের আবেদন জমা রয়েছে এবং আই-৭৬৫, অ্যাপ্লিকেশন ফর এমপ্লয়মেন্ট অথরাইজেশন জমা দিয়ে ওয়ার্ক পারমিট ও সোশ্যাল সিকিউরিটি নিয়ে কাজ করছেন অথবা যাদের আশ্রয়ের আবেদন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার অনুমোদন না করায় পরে এক্সিকিউটিভ অফিস অব ইমিগ্রেশন রিভিউ (ইইউআইআর) কিংবা বোর্ড অব ইমিগ্রেশন আপিলে (বিওআই) চলমান রয়েছে, তাদের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই নির্বাহী আদেশ নিয়ে ভাবনার কিছু নেই।
গত সপ্তাহের এই নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে ১১টি দেশের ওপর নতুন করে শরণার্থী যাচাই-বাছাইয়ের যে কঠোর ও বাড়তি সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে, তাতে করে মূলত অনেকেই তাদের স্বামী/স্ত্রী বা সন্তানের মতো আপনজনের সঙ্গে থাকার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন। এই ১১টি দেশ হলো মিসর, ইরাক, ইরান, লিবিয়া, মালি, উত্তর কোরিয়া, সোমালিয়া, সুদান, দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া ও ইয়েমেন। শরণার্থী প্রবেশ কার্যক্রমের আওতায় আমেরিকায় প্রবেশের অপেক্ষায় থাকা অর্ধেকের বেশি শরণার্থী যেখানে এসব দেশেরই নাগরিক, সেই পরিস্থিতিতে মানবাধিকার সংস্থা ওয়ার্ল্ড রিলিফের সহসভাপতি জেনি ইয়াং এই নতুন নির্বাহী আদেশকে বলেছেন পুরোনো বোতলে নতুন পানীয়, যা আগের চেয়েও তিক্ত ও ক্ষতিকর।
এই আদেশের পর জাতীয় গোয়েন্দাপ্রধান ড্যান কোটস জোন, পরবর্তী ৯০ দিন এসব দেশের শরণার্থী আবেদনকারীকে কেবল আমেরিকার নিরাপত্তা ও কল্যাণের প্রতি হুমকি না হলেই যে তাঁদের আবেদন মঞ্জুর করা হবে এমন নয়, একই সঙ্গে আমেরিকার জাতীয় স্বার্থে তাঁদের প্রয়োজন আছে কি না, সেটাও বিবেচনায় নেওয়া হবে। সুতরাং শরণার্থী যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় বর্তমানে আবেদনকারীদের দীর্ঘ অপেক্ষমাণ তালিকা আরও দীর্ঘ হবে। শরণার্থী বিশেষজ্ঞ আইনজীবীরা আশঙ্কা করছেন, শরণার্থী হিসেবে আবেদনকারীদের মধ্য যাঁরা জীবন হাতে পরিবারের সদস্যদের ফেলে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছেন, তাঁরা তাঁদের আবেদনের পক্ষে কাগজপত্র বা সাক্ষ্য প্রমাণ আনতে পারেননি, তাঁদের অবস্থা আরও শোচনীয় হবে।
চার্চ ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের অভিবাসন ও শরণার্থী কর্মসূচির কর্মী জেন স্মায়ার বলেছেন, ট্রাম্পের নতুন নির্বাহী আদেশের আওতায় শরণার্থীদের নিজেদের সম্পর্কে দেওয়া তথ্য-উপাত্ত যাচাইয়ে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার তথ্য আদান-প্রদানের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে কোথাও কোথাও জালিয়াতি শনাক্তকরণ কার্যালয় (ফ্রড ডিটেকশন অফিস) স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এতে শরণার্থীদের তথ্য যাচাইয়ের প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হবে। এই অবস্থায় আমেরিকায় শরণার্থী প্রবেশে সময়ও অনেক বেশি লাগবে এবং সংখ্যায়ও অনেক কম হবে।

নভেম্বর মাসের ভিসা বুলেটিন
ফ্যামিলি-স্পনসর গ্রিনকার্ডের প্রায়োরিটি ডেট যিনি আবেদন করবেন যার জন্য আবেদন করবেন যিনি আবেদন করবেন যেকোনো বয়সী নাগরিক একুশের বেশি বয়সী নাগরিক গ্রিনকার্ডধারী ব্যক্তি আইআর১/সিআর১ — ১ বছর* বাইরে/ভেতরে বৈধ/অবৈধভাবে বসবাসকারী স্বামী/স্ত্রী বাইরে/ভেতরে
বৈধভাবে বসবাসকারী এফ২এ - ১ নভেম্বর ২০১৬ আইআর ২—
১ বছর* একুশের নিচে অবিবাহিত সন্তান এফ২এ -
১ নভেম্বর ২০১৬
আইআর৫ - ১ বছর* বাবা-মা আবেদন করা যাবে না
এফ১ —
১ জানুয়ারি ২০১২ বাইরে/ভেতরে বৈধভাবে বসবাসকারী একুশের ওপরে অবিবাহিত সন্তান এফ২বি -
১ সেপ্টেম্বর ২০১১
এফ৩ —
১ ডিসেম্বর ২০০৫ একুশের ওপরে/নিচে বিবাহিত সন্তান আবেদন করা যাবে না
এফ ৪ —
১৫ নভেম্বর ২০০৪ যেকোনো বয়সী ভাইবোন আবেদন করা যাবে না
* মার্কিন নাগরিকের স্বামী/স্ত্রী, ২১ এর কম বয়সী অবিবাহিত সন্তান ও পিতা/মাতার ক্ষেত্রে কোনো প্রায়োরিটি ডেট থাকে না। তারা সাধারণত আবেদনের ১ বছরের মধ্যে গ্রিনকার্ড পায়। এমপ্লয়মেন্ট-স্পনসর গ্রিনকার্ডের সব ক্যাটাগরি বর্তমানে চলমান, তাই এই চার্টে উল্লেখ করা হলো না।

লেখক: ব্যারিস্টার-অ্যাট-ল, নিউইয়র্কপ্রবাসী
সেল: (৯২৯) ৩৯১-৬০৪৭; ই-মেইল: expa.expe@gmail.com