আমেরিকার আগামী নির্বাচনে তিনটি ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জবাবদিহি করতে হবে। এই তিনটি ক্ষেত্র হলো করোনাভাইরাস মোকাবিলার প্রয়াস, নাগরিক আন্দোলন সামাল দেওয়াসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা এবং দেশের অর্থনীতি। তিনটা ইস্যুতেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেকটা বেকায়দায় আছেন।
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় শুরু থেকেই ট্রাম্প অস্থির সব কাজ করে আসছেন। ‘চায়না ভাইরাস’ বলা থেকে শুরু করে ডিটারজেন্ট দিয়ে ফুসফুস পরিষ্কার করার মতো হালকা কথা বলেছেন। টাস্কফোর্সের বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফাউসিসহ কারও কথাই গুরুত্ব দেননি তিনি। নিজের মতো করে মঞ্চ গরম করা বক্তব্য দিয়েছেন। অন্যকে নিয়ে বিদ্রূপ করেছেন। বলেছেন, ভাইরাস এমনিতেই মিইয়ে যাবে। এ নিয়ে রাজনীতি করেছেন।
তবে করোনাভাইরাস রাজনীতির খেলা বোঝেনি। ছড়িয়ে পড়েছে পুরো দেশে। সারা বিশ্বের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণের দেশ হয়ে দাঁড়িয়েছে আমেরিকা। করোনার কারণে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১ লাখ ৭৫ হাজারে দাঁড়াবে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। এখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও এ নিয়ে গুরুত্ব দেখানোর চেষ্টা করছেন। বলছেন, শেষ হওয়ার আগে পরিস্থিতি আরও নাজুক হবে। কতটা নাজুক হবে, আর কত মানুষের মৃত্যু হবে—এসব প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের হাতে আর বেশি সময়ও নেই। নির্বাচনের আর মাত্র ১০০ দিন বাকি। জনমত জরিপে লোকজন মনে করছে, প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।
দ্বিতীয় সমস্যা ট্রাম্পের জন্য দেখা দিয়েছে গত ২৫ মে মেনিয়াপোলিসে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুপরবর্তী ঘটনা। সারা আমেরিকায় বর্ণবাদ আর বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। খোদ হোয়াইট হাউসের সামনে স্মরণাতীতকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। সারা দেশে পুলিশের তহবিল কর্তনের ডাক এসেছে। নগরীতে নগরীতে এ বিক্ষোভ এখনো অব্যাহত আছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষোভের আগুন প্রশমিত করার কোনো চেষ্টাই করেননি, উসকে দিয়েছেন। তিনি এসব আন্দোলনের পেছনে চরমপন্থী বাম ডেমোক্র্যাটদের ইন্ধনের কথা বলছেন।
সম্ভাব্য ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনকে চরমপন্থী বামদের পুতুল হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছেন ট্রাম্প। এ নিয়ে তাঁর পক্ষে টিভি প্রচারণাও চলছে বিভিন্ন রাজ্যে। দেশজুড়ে অস্থিরতা ও সহিংসতার দায় চরমপন্থীদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে এর সঙ্গে ট্রাম্প যুক্ত করতে চাইছেন জো বাইডেনকে। তাঁর এ কৌশল আমেরিকার সাধারণ লোকজন ঠিক নিচ্ছেন বলে এখনো মনে হচ্ছে না। যদিও ক্রমাগত প্রচারণার মাধ্যমে ট্রাম্প শিবির থেকে বলা হচ্ছে, দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য ট্রাম্পের বিকল্প নেই। তিনিই পারবেন অভিবাসী গ্যাং সদস্যদের দমন করতে। নিজেকে আইনশৃঙ্খলার প্রেসিডেন্ট হিসেবেও ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সহিংসতা যারা করছে, আন্দোলনের নামে যারা নৈরাজ্য করছে, তাদের প্রতি জো বাইডেন সহানুভূতিশীল—এ কথাই প্রচার করা হচ্ছে ট্রাম্প শিবির থেকে।
করোনা মহামারির কারণেই আমেরিকার অর্থনীতি এখন অস্থির। বেকারত্ব চরমে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুরোদমে চালু হচ্ছে না। বিভিন্ন রাজ্যে নতুন করে লকডাউনে যাওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। জুলাই মাস পর্যন্ত কর্মজীবী লোকজন বেকার ভাতা পেয়েছেন। এতে ঘরভাড়া দেওয়াসহ জীবনধারণ কিছুটা হলেও সহায়ক ছিল কর্মজীবীদের। ব্যবসা-বাণিজ্য পুরোদমে চালু না হওয়ায় লোকজন কাজেও ফিরে যেতে পারছেন না।
প্রতিটি নগরকেন্দ্রে লোকজনকে বিনা মূল্যে খাবার নেওয়ার জন্য লাইন ধরতে দেখা যাচ্ছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নানা প্রণোদনা দিয়ে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় এসব প্রণোদনা ব্যবসায়ীদের জন্য পর্যাপ্ত নয় বলে তাঁরা জানাচ্ছেন। নাগরিকদের কর আদায় হচ্ছে না। ফলে নগর থেকে শুরু করে প্রান্তিক শহর পর্যন্ত রাজস্ব সমস্যায় পড়তে হচ্ছে স্থানীয় সরকারকে। সবাই ফেডারেল সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে। ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন সময়ে অর্থনীতি সামাল দেওয়ার এ কাজেও কোনো ম্যাজিক দেখাতে পারছেন না ট্রাম্প। ট্রাম্প–সমর্থকেরা বলছেন, মহামারির শুরুর আগে আমেরিকার অর্থনীতি ঊর্ধ্বমুখী ছিল। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের গত তিন বছরের রেকর্ড নিয়ে সমালোচকদের জবাব দিতে দেখা যাচ্ছে ট্রাম্প–সমর্থকদের।
২০১৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সব জরিপকে অবজ্ঞা করেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০২০ আর ২০১৬ এক নয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও আর আগের ট্রাম্প নেই। জনগণের বহু প্রশ্নের জবাব দিয়েই তাঁকে নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসতে হবে। ২০১৬ সালে ট্রাম্পের জন্য এসব প্রশ্নের জবাব দেওয়ার কোনো তাড়া ছিল না।