যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের রব এলিমেন্টারি স্কুলে বন্দুকধারীর হামলার ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যায় ১১ বছর বয়সী শিক্ষার্থী মিয়া সেরিলো। তবে বন্দুকধারীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বেঁচে ফেরাটা সহজ কাজ ছিল না তার জন্য। এর জন্য বুলেটবিদ্ধ সহপাঠীদের রক্ত নিজের গায়ে মেখে মৃতের মতো শুয়ে ছিল সে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সে দিনের সে ভয়ংকর স্মৃতি বর্ণনা করেছে সেরিলো।সেরিলোর ভাষ্য মতে, সে এবং তার সহপাঠীরা শ্রেণিকক্ষে ‘লিলো অ্যান্ড স্টিচ’ ম্যুভিটি দেখছিল। শিক্ষক ইভা মিরেলেস ও ইরমা গার্সিয়া যৌথভাবে পাঠদান করছিলেন। পাঠদান শেষ হওয়ার পরপরই শিক্ষকেরা জানতে পারেন ওই ভবনে একজন বন্দুকধারী অবস্থান করছেন।
সেরিলো জানায়, এক শিক্ষক দরজায় তালা লাগাতে গিয়েছিলেন। তবে ততক্ষণে সেখানেও পৌঁছে গেছেন বন্দুকধারী। জানালা ও দরজা লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছিলেন তিনি। সব কিছু খুব দ্রুত ঘটছিল। নিরুপায় হয়ে ওই শিক্ষক তখন শ্রেণিকক্ষের দিকে ফিরে আসেন। তাঁর পেছন পেছন আসেন বন্দুকধারীও। সিএনএনকে সেরিলো বলেন, এক শিক্ষকের চোখের দিকে তাকিয়ে বন্দুকধারী বলতে থাকেন ‘গুডনাইট’। এরপর তাঁকে গুলি করেন সে।
পরে বন্দুকধারী ফাঁকা গুলি ছুড়তে শুরু করেন। শ্রেণিকক্ষে থাকা অপর শিক্ষক ও সেরিলোর বন্ধুদের লক্ষ্য করে গুলি চালাতে থাকেন তিনি। সেরিলো বলে, তার পাশ দিয়েই বুলেট উড়ে যাচ্ছিল। বিভিন্ন ক্ষুদ্র কণা এসে তার মাথা ও ঘাড়ে আঘাত করছিল।
মিয়া সেরিলো আরও বলেছে, তার শ্রেণিকক্ষে গুলি চালানোর পর বন্দুকধারী পাশের কক্ষে চলে যান। ওই কক্ষে চিৎকার ও গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। গুলি ছোড়া বন্ধ করার পর বন্দুকধারী উচ্চ স্বরে গান বাজাতে শুরু করেন। কষ্টের গান বাজাতে থাকেন তিনি।
সেরিলো ও তার এক বন্ধু মিলে তাদের মৃত শিক্ষকের মুঠোফোন হাতে নেয় এবং ৯১১–তে কল করে সাহায্য চায়। সেরিলোর আশঙ্কা ছিল বন্দুকধারী তাকে ও অন্য জীবিত বন্ধুদের মেরে ফেলতে আবারও ওই শ্রেণিকক্ষে ফিরে আসবেন। এমন অবস্থায় এক মৃত বন্ধুর শরীরে থাকা রক্ত হাতে নিয়ে নিজের শরীরে মাখাতে শুরু করে সে। এরপর বন্ধুদের নিয়ে মৃতের মতো মেঝেতে শুয়ে থাকে। এভাবে তিন ঘণ্টা ধরে তাকে মৃতের অভিনয় করতে হয়েছে।
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুনঃ
যুক্তরাষ্ট্রে স্কুলে/হামলা সহপাঠীকে আগ্নেয়াস্ত্রের ছবি পাঠান বন্দুকধারী
ফেসবুকে একের পর এক বার্তায় হামলার পরিকল্পনা জানান বন্দুকধারী
এরপর স্কুলের বাইরে অবস্থানকারী পুলিশ সদস্যদের কণ্ঠস্বর শুনতে পায় সেরিলো। কেন পুলিশ তখনো ভেতরে ঢুকছে না, কেন তাদের উদ্ধার করছে না, তা বুঝতে পারছিল না সে। সিএনএনকে সে কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ওঠে সেরিলো।
সেরিলোর মা জানান, তাঁর মেয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। সে ঘুমাতে পারছে না।
সিএনএনকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময়ও নিজেকে ঢেকে রাখতে গায়ে কম্বল জড়িয়ে রেখেছিল সে, যদিও তখন গরম পড়ছিল। সাক্ষাৎকার চলার সময় সেলফোনে হঠাৎ অ্যালার্ম বেজে উঠলে সে শব্দে আঁতকে উঠতে দেখা যায় তাকে।
সেরিলোর মা জানান, এ ধরনের উদ্বেগ-আতঙ্ক মেয়ের মধ্যে প্রায়ই দেখা যাচ্ছে। সাক্ষাৎকার শুরুর কিছুক্ষণ আগের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের শব্দেও কেমন ভীত হয়ে উঠেছিল তাঁর মেয়ে।
ক্যামেরার সামনে কথা বলতেও ভয় পাচ্ছিল সেরিলো। তবে সে সিএনএনকে বলেছে, সে চায় তার অভিজ্ঞতার গল্প সবাই জানুক। তার ধারণা, এর থেকে শিক্ষা নিয়ে অন্য শিশুরা ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারবে।
সেরিলোর মা বলেন, তাঁর সন্তান পেটে টিউমার নিয়েই জন্ম নিয়েছিল। তার বেঁচে থাকা নিয়ে শঙ্কা ছিল। তবে তিন বছর বয়সে সফল অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে সে টিউমার অপসারণ করা হয়। তখন থেকে সেরিলোকে ‘অলৌকিক শিশু’ বলে ডেকে থাকেন। তিনি মনে করেন, টেক্সাসের ঘটনার পর এ নামকরণ আরও জোরালো হয়েছে।