যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেনের ব্যবসা–বাণিজ্যে অনিয়মসহ নানা অভিযোগ নিয়ে ফেডারেল তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের শপথ নেওয়ার কথা আগামী ২০ জানুয়ারি।
নির্বাচনী প্রচারের সময়েই বাইডেনের ছেলের ব্যাপারে তদন্ত শুরু করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। বিদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যে অনিয়ম, রাজনৈতিক প্রভাব, অর্থ পাচার, কর ফাঁকি নিয়ে হান্টার বাইডেন সম্পর্কে অভিযোগ করে আসছিলেন ট্রাম্প। তবে জো বাইডেন এ তদন্তের আওতায় নয় বলে জানানো হয়েছে।
নির্বাচনের আগে এমন তদন্তের রাজনৈতিক প্রভাবের কথা চিন্তা করে বিচার বিভাগ এ নিয়ে সময় ক্ষেপণ করে। নির্বাচনের ফলাফল চলে আসার পর হান্টার বাইডেনের বিরুদ্ধে ফেডারেল তদন্ত নড়েচড়ে উঠেছে। মার্কিন সরকারের রাজস্ব বিভাগের তদন্ত দল এবং এফবিআই তদন্তকাজে সক্রিয় হয়েছে। ডেলোয়ার রাজ্যের ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিস থেকে এমন তদন্ত শুরু হওয়ার কথা হান্টার বাইডেনের আইনজীবী নিজেই জানিয়েছেন।
বার্তা সংস্থা সিএনএনকে হান্টার বাইডেন বলেছেন, ট্যাক্সসংক্রান্ত তথ্য নিয়ে তদন্ত শুরু হওয়ার কথা তিনি জেনেছেন। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। আশা করছেন, তদন্তের মাধ্যমে দেখা যাবে তিনি সবকিছুই আইন মেনে যথাযথ পথেই সম্পন্ন করেছেন।
সিএনএন বলছে, হান্টার বাইডেনের বিরুদ্ধে একাধিক বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে কর আইনের লঙ্ঘন, বিদেশের সঙ্গে বিশেষ করে চীনের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যে কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না, তা দেখা হচ্ছে।
ফক্স নিউজ এক প্রতিবেদনে বলেছে, এখনো এমন তদন্তে কোনো অপরাধ সংগঠিত হয়েছে বলে বলা যাবে না। তবে এফবিআই থেকে পাওয়া নথিপত্র থেকে দেখা যাচ্ছে, তদন্তের আওতায় অর্থপাচার ও বিদেশে অর্থ লেনদেনের বিষয়ে তদন্ত বিস্তৃত রয়েছে। ২০১৮ সাল থেকেই এমন তদন্ত শুরু হয়।
ডেলোয়ার রাজ্যে নিজেদের বাড়ির পাশে এক কম্পিউটার মেরামতের দোকান থেকে একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়। নির্বাচনের আগেও রহস্যজনক এ ল্যাপটপ আলোচনায় এসেছে। মেরামতের দোকান থেকে পাওয়া ল্যাপটপের তথ্য ট্রাম্পের আইনজীবীদের নজরে আসে প্রথমে। পরে বিষয়টি নিয়ে এফবিআই তদন্ত করে। এ ল্যাপটপে হান্টার বাইডেনের ব্যবসা-বাণিজ্যের গোপন তথ্য পাওয়া গেছে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
নানা রাজনৈতিক নাটকীয়তার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার আগেই ছেলের বিরুদ্ধে এমন অপরাধের তদন্ত জো বাইডেনের জন্য বিব্রতকর হয়ে উঠেছে। যদিও ছেলের কোনো কাজের দায় তাঁর নেই।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারে বারবার জো বাইডেনের পুরো পরিবারকে দুর্নীতিবাজ বলে উল্লেখ করেছেন। যদিও ওয়াশিংটনের রাজনীতিতে চার দশকের বেশি সময় দাপটের সঙ্গে বিচরণ করেছেন জো বাইডেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার আগে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে আট বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। এর আগে ডেলোয়ার রাজ্য থেকে কয়েক দফা সিনেটর হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।
ওয়াশিংটনের রাজনৈতিক অঙ্গনে জো বাইডেন একজন স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ হিসেবেই সব সময় পরিচিত ছিলেন। তবে তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ সমর্থকদেরও বিব্রত করে তুলেছে।
বাইডেনের ট্রানজিশন টিমের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট বাইডেন তাঁর ছেলেকে নিয়ে গর্ব বোধ করেন। হান্টার বাইডেন ব্যক্তিগত কঠিন সময় পেরিয়ে এসেছেন।
হান্টার বাইডেনের তদন্তের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চুপ থাকবেন, এমন আশা কেউ করে না। ট্রাম্প নিউইয়র্ক পোস্টের এক মন্তব্য উল্লেখ করে ফেসবুক পোস্ট দিয়েছেন। ট্রাম্প বলেছেন, নির্বাচনের আগে হান্টার বাইডেনের এমন কর্মকাণ্ডের কথা জানতে পারলে ১০ শতাংশ কম ভোট পেতেন জো বাইডেন। এরপরও নিজেই নির্বাচনে জয় লাভ করেছেন বলে আবারও বলেছেন তিনি।